চিকিৎসাধীন: কুলতলি হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র
গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মীরা বুঝিয়ে-সুঝিয়েও কাজ হচ্ছিল না। ২ ফেব্রুয়ারি ছিল সন্তান প্রসবের দিন। কিন্তু গ্রামের দাইমার ভরসায় বাড়িতেই প্রসব হবে বলে গোঁ ধরে বসেছিলেন এক প্রসূতি ও তাঁর পরিবার। একটাই যুক্তি, এর আগেও তো এতগুলো ছেলেপুলে বাড়িতেই হয়েছে। এখন তা হলে আদালতে ছোটাছুটি কীসের!
বিষয়টি ব্লক ও স্বাস্থ্য দফতরে নজরে আসে। প্রশাসনিক আধিকারিক ও পঞ্চায়েত কর্মীরা বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের বুঝিয়ে শেষমেশ মানোয়ারা বিবি নামে ওই প্রসূতিকে সরকারি গাড়িতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনতে পেরেছেন। সোমবার বিকেলে কুলপির ঈশ্বরীপুর পঞ্চায়েতের আটমসিদ থেকে মানোয়ারা বিবিকে কুলপি গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়েছে। তবে এখনও প্রসব হয়নি তাঁর।
মানোয়ারার বিষয়টি সোমবার কুলপির গ্রামীণ হাসপাতালে এক সভায় আলোচনা হয়। তারপরেই নড়েচড়ে বসে ব্লক ও স্বাস্থ্য দফতর। পাড়াগাঁয়ে এখনও বাড়িতে দাইমার হাতে প্রসব বিরল নয়। হাসপাতালে যেতে গড়িমসি আছে বহু পরিবারে। যদিও এ জন্য সরকারি নানা সুবিধা মেলে। তা সত্ত্বেও মানসিকতা পুরোপুরি বদল করা যায়নি।
কিন্তু বাড়িতে প্রসবে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। মা ও সদ্যোজাতের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই একশো শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবে জোর দেয় সরকার। এ জন্য গর্ভাবস্থা থেকে শুরু করে প্রসব পর্যন্ত নানা সরকারি সুবিধা দেওয়া হয়। প্রসব বেদনা শুরু হলে স্থানীয় আশাকর্মীরা নিশ্চয় যানে করে প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সন্তানের জন্মের পরে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে শিশুর জন্মের শংসাপত্র সহজে মেলে। কেন্দ্রীয় সরকারের জননী শিশু সুরক্ষা যোজনা প্রকল্পে মায়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১ হাজার টাকা দেওয়া হয়। শিশু ও মাকে এক বছর ধরে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া হয়। গাড়িতে আনা-নেওয়া করা হয়। আর মেয়ে সন্তান হলে হাসপাতাল থেকে সদ্যোজাতকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে একটি করে মেহগনি গাছের চারাও দেওয়া হয়।
কুলপিতে গ্রামীণ হাসপাতাল ছাড়াও ৪টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ৩৩টি উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। তাঁরা প্রতিটি বুথে নিয়মিত নজরদারি চালান। সেই সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে সভা হয়। কয়েক মাস আগে দাইমাদের নিয়েও সভা করেছে। তাঁদের বলা হয়েছে, কোনও মতেই বাড়িতে প্রসব করানো যাবে না। এমনকী, এলাকার মৌলানা সাহেবদের নিয়ে সভা ডেকেছিলেন আধিকারিকেরা। এত কিছুর পরে হাতেনাতে সাফল্যও মিলছে।
কুলপির বিএমওএইচ আবু সালে মহম্মদ মেহফুজ উল করিমের দাবি, ‘‘সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে প্রতিষ্ঠানিক প্রসব ১০০ শতাংশ করতে পেরেছি। সে কারণেই মহকুমা প্রশাসন থেকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। জেলাশাসক বিষয়টি সরেজমিন তদন্তে আসবেন বলে জানিয়েছেন।’’ তবে হাসপাতালে বেড আরও বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন তিনি।
মানোয়ারাকে হাসপাতালে আনার মূল উদ্যোগী জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক স্মৃতি রেখা কয়াল। তিনি জানালেন, ওই মহিলার বাড়িতে পঞ্চায়েত সদস্য, প্রধান, সরকারি আধিকারিকের দল গিয়েছিল। প্রথম দিকে রাজি করাতে পারছিলাম না। পরিবারের লোকজন না অজুহাত খাড়া করছিলেন। তবে শেষমেশ বোঝানো গিয়েছে।’’
মঙ্গলবার দুপুরে কুলপি হাসপাতালের বেডে শুয়ে মানোয়ারা বললেন, ‘‘আমার ছোট ছেলের দেড় বছর বয়স। তাকে ফেলে কী করে হাসপাতালে ভর্তি হব, এ নিয়েই সমস্যা হয়েছিল। তা মিটে গিয়েছে।’’ একই বক্তব্য তাঁর স্বামী রহমতুল্লা সর্দারেরও।
কুলপির বিডিও সঞ্জীব সেন বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার নজরে আসার পরে সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের জানিয়ে দিই, যে ভাবে হোক, ওই মহিলাকে হাসপাতালে আনতেই হবে। সেই কাজ হওয়ায় আমরা সকলেই খুশি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy