Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

অপহরণের গুজব, হুলুস্থূল স্কুলে

কখনও স্কুল কর্তৃপক্ষের আগাম সতর্কবার্তা, কখনও স্রেফ ছাত্র অপহরণের গুজব— তারই জেরে দু’দিন বসিরহাটের দু’টি স্কুলে হুলুস্থূল কাণ্ড বাধল। রজনীকান্ত প্রাথমিক স্কুলের পরে এ বার ঘটনাস্থল বসিরহাট টাউন প্রাথমিক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:০৯
Share: Save:

কখনও স্কুল কর্তৃপক্ষের আগাম সতর্কবার্তা, কখনও স্রেফ ছাত্র অপহরণের গুজব— তারই জেরে দু’দিন বসিরহাটের দু’টি স্কুলে হুলুস্থূল কাণ্ড বাধল। রজনীকান্ত প্রাথমিক স্কুলের পরে এ বার ঘটনাস্থল বসিরহাট টাউন প্রাথমিক।

বৃহস্পতিবার সকালে রটে যায়, অপহরণ করা হয়েছে টাউন প্রাথমিকের দুই পড়ুয়াকে। যার জেরে অভিভাবকেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। স্কুল থেকে বাচ্চাদের আনার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত পুলিশি হস্তক্ষেপে এবং মাইক প্রচারের মাধ্যমে অভিভাবকদের শান্ত করা হয়।

গত মঙ্গলবার রজনীকান্ত প্রাথমিকের পরে এ দিন বসিরহাটের আরও একটি স্কুলে গুজবের জেরে এমন কাণ্ডে চিন্তিত পুলিশ-প্রশাসন। পরিকল্পনা করে কেউ এমন রটনা শুরু করেছে, নাকি এর পিছনে অন্য কারণ আছে, তা জানতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। এসডিপিও শ্যামল সামন্ত বলেন, ‘‘ক’দিন ধরে যে ভাবে স্কুল ছাত্র অপহরণের মিথ্যা প্রচার শুরু হয়েছে, তা একেবারেই কাঙ্খিত নয়। যারা মিথ্যা কথা বলে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে, তাদের পরিচয় জানতে পারলে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’’

সবিস্তার পড়তে ক্লিক করুন।

কী হয়েছিল এ দিন?

সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ টাউন প্রাথমিক স্কুলে পড়িমড়ি করে ছুটে আসেন দুই অভিভাবিকা। তাঁরা দাবি করেন, দুষ্কৃতীরা স্কুলে ঢুকে তাঁদের সন্তানদের অপহরণ করেছে। মহিলাদের কান্নাকাটি দেখে ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুব্রত ভঞ্জচৌধুরী রীতিমতো ঘাবড়ে যান। চিন্তা আরও বাড়ে, যখন তিনি দেখেন ওই মহিলাদের পিছু পিছু ছেলেমেয়েদের অপহরণ করা হয়েছে বলে আতঙ্কিত চেহারায় জড়ো হচ্ছেন আরও অভিভাবকেরা।

ওই স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা ৭২৯ জন। তাদের পড়াশোনা, দেখভালের জন্য আছেন মাত্র ১৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁরাও ভেবে কূল পাননি, স্কুলের মধ্যে দুষ্কৃতী ঢুকে কখন এবং কী ভাবে অপহরণ করল শিশুদের। কিন্তু অভিভাবকেরা সে কথা শুনলে তো! সকলেই হুড়োহুড়ি করে নিজেদের সন্তানকে বাড়ি নিয়ে যেতে চান। কান্নাকাকাটিও জুড়ে দেন অনেকে।

বসিরহাট থানার আইসি গৌতম মিত্র জানান, ক’দিন আগে রজনীকান্ত স্কুলের ঘটনা মাথা রেখে দ্রুত কয়েকজন পুলিশকর্মীকে স্কুলে পাঠানো হয়। পুলিশ দেখে উত্তেজনা আরও বাড়ে। নাম ডেকে ডেকে ছাত্রছাত্রীদের গণনার চেষ্টা শুরু করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অভিভাবকেরা সেই ধৈর্যটুকু ধরতে রাজি ছিলেন না। অনেকে হুড়মুড় করে ক্লাসে ঢুকে পড়েন। যাঁরা দাবি করছিলেন, তাঁদের সন্তানকে অপহরণ করা হয়েছে, তাঁদের ছেলেমেয়য়েদের ডেকে এনে দেখানো হয়। কিন্তু তাতেও উত্তেজনা, আতঙ্ক কমেনি।

খবর পেয়ে স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অশোক রায়চৌধুরীও চলে আসেন স্কুলে। তিনি মাইক জোগাড় করে সকলকে শান্ত হয়ে থাকতে বলেন। গুজবে কান দিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে যে যার ছেলেমেয়েদের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। ক্রমে ক্রমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। সকলেই সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ফেরেন। বসিরহাটের বাতাসে ভেসে বেড়ানো ছাত্র অপহরণের গুজব না কমায় ওই স্কুলের তরফে পরবর্তী পদক্ষেপ কী করা হবে, তা নিয়ে আলোচনার জন্য অভিভাবকদের শুক্রবার স্কুলে ডাকা হয়েছে।

রজনীকান্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনার পরে প্রধান শিক্ষক চপলকুমার মণ্ডল কিছু দিনের জন্য ছুটিতে গিয়েছেন। তিনি কিছু অভিভাবককে ডেকে জানিয়েছিলেন, স্কুল শিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানিয়েছিলেন, স্কুলে ঢুকে অপহরণের ছক কষেছে জঙ্গিরা। এই কথা জানাজানি হওয়ায় মঙ্গলবার হুলুস্থূল পড়ে যায় ওই স্কুলে। আইসি বলেন, ‘‘এসআইয়ের কাছে ঠিক কী বার্তা এসেছিল, তার ফটো কপি চাওয়া হয়েছে। তাতে যাই লেখা থাকুক না কেন, অভিভাবকদের চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

kidnap basirhat school abduction hoax
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE