Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Cyclone Yaas

ঝড়ের মুখে অরক্ষিত পাখিরা, চালু উদ্ধারের হেল্পলাইন

আয়লার ১০ বছর পরে এ রাজ্যের উপর দিয়ে তিনটি ঘূর্ণিঝড় গিয়েছে। যার প্রভাবে গাছ ভেঙে বহু পাখির বাসা নষ্ট হয়েছে, শাবকের মৃত্যু হয়েছে।

রবীন্দ্র সরোবরে সোনাজঙ্ঘা পাখির বাসা।

রবীন্দ্র সরোবরে সোনাজঙ্ঘা পাখির বাসা। নিজস্ব চিত্র।

সুনন্দ ঘোষ ও প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২১ ০৬:৪৮
Share: Save:

খড়কুটো, ডালপালা দিয়ে সযত্নে তৈরি বাসায় এই সময়ে ডিম ফোটে। মায়েরা অনেক বেশি সময় ঘরে থাকে। ভাল করে ডানা না-গজানো বাচ্চাদের জন্য খাবার জোগাড় করে আনে তারা। আমপানের মতো ঘূর্ণিঝড় ইয়াসও আসছে এই ‘নেস্টিং টাইম’ বা পাখির ঘর বাঁধা ও সন্তান লালনের সময়ে। আমপানে রবীন্দ্র সরোবর, সুভাষ সরোবর, সেন্ট্রাল পার্ক, ইডেন গার্ডেন্স, ময়দান-সহ বহু এলাকায় গাছ পড়ে বাসা ভেঙে যায়, মৃত্যুও হয়েছিল অসংখ্য পাখির বাচ্চার। ফের সেই আশঙ্কাই করছেন পক্ষীপ্রেমীরা।

মানুষকে বাঁচাতে কর্মব্যস্ততা তুঙ্গে প্রশাসনে। কিন্তু ডালে বাসা বাঁধা টিয়া, শালিক, বেনেবৌ, বসন্তবৌরির দল আবারও বিপর্যয়ের সামনে। পাখিদের নিরাপত্তায় কলকাতা ও জেলাগুলির জন্য তাই হেল্পলাইন চালু করেছে বন্যপ্রাণীদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন। সেই সঙ্গে পক্ষিশাবক বাঁচাতে নেমে পড়েছেন একদল উৎসাহী যুবক-যুবতী।

কী ভাবে? পড়ে থাকা পাখির ছানাদের সযত্নে তুলে প্রাথমিক শুশ্রূষা করে বন দফতরের হাতে তুলে দিতে চাইছেন তাঁরা। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ জয়দীপ কুণ্ডু বলেন, “শতাধিক যুবক-যুবতীকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া আছে। তাঁরা পাখির পাশাপাশি অন্য বন্যপ্রাণীদেরও উদ্ধার করে বন দফতরের হাতে তুলে দেন।” তিনি জানান, তাঁদের সংগঠন ‘শের’-এর সদস্যেরা পাখি-সহ ভীত বন্য প্রাণীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন।

পাখিদের নিয়ে কাজ করা সুদীপ ঘোষের কথায়, “এই সময়টা পাখিরা বাসা তৈরি করে। ইতিমধ্যেই অনেক জায়গায় বাসা তৈরির কাজ শুরু করেছে বহু পাখি।”

আমপানের পরে দুর্বল শিকড়ের বহু গাছ নিরাপত্তার কারণে প্রশাসন কেটে দিয়েছে। গাছের ডালও ছাঁটা হয়েছে সর্বত্রই। ভেঙে পড়া অজস্র গাছকে কৃত্রিম ভাবে সোজাও করা হয়েছিল। পোক্ত বা দুর্বল গাছের মধ্যে পার্থক্য না বোঝা পাখিরা সেই সব গাছে বাসা বাঁধলে সেগুলি ভেঙে ফের বহু পাখির ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আয়লার ১০ বছর পরে এ রাজ্যের উপর দিয়ে বুলবুল, ফণি, আমপানের মতো তিনটি ঘূর্ণিঝড় গিয়েছে। যার প্রভাবে গাছ ভেঙে বহু পাখির বাসা নষ্ট হয়েছে, শাবকের মৃত্যু হয়েছে। অসংখ্য সামুদ্রিক পাখি হাওয়ার টানে স্থলভাগে এসে আর ফিরতে পারেনি। তাদেরও মৃত্যু হয়েছে।

হিল সংস্থার তরফে শুভ্রজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁরা মেদিনীপুর-সহ ওড়িশার সমুদ্র উপকূল লাগোয়া পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলাগুলির দিকে নজর রাখছেন। তাঁর কথায়, “বন দফতরের সঙ্গেও যোগাযোগ রেখেছি। পাখিদের সুরক্ষা দিতে স্বেচ্ছাসেবীরা বিভিন্ন জায়গায় রয়েছেন।” নেচার মেটসের তরফে অর্জন বসুরায় বলেন, “শুধুই পাখি নয়, দুর্যোগে অন্যান্য বণ্যপ্রাণীরাও সঙ্কটে পড়ে। আমরা বন দফতরের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছি। দুর্যোগের পরে ওদের সুস্থ করে তোলার চেষ্টাও থাকবে।”

রাজ্যের মুখ্য বনপাল বিনোদ যাদব জানাচ্ছেন, আমপানে কত পাখির বাসা ভেঙেছিল, তার হিসেব বন দফতরে নেই। তবে গোটা ২০২০ সালে পশু ও পাখি মিলিয়ে প্রায় ১৩ হাজার বন্যপ্রাণীকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর কথায়, “ইয়াসের জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বিপন্ন পশু বা পাখিদের উদ্ধার করে সেখানে ফোন করলেই হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Yaas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy