সুনসান: হাবড়া বাজার। ছবি: সুজিত দুয়ারি
করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমাতে হাবড়া, অশোকনগর, গোবরডাঙা থানা এলাকার বাজার-দোকান, অফিস বন্ধ করে দেওয়া হল বুধবার থেকে। ২২ জুলাই পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি চলবে। কেবলমাত্র ওষুধ, দুধের দোকানের মতো কয়েকটি পরিষেবা চালু থাকছে। স্থানীয় যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। মাস্ক ছাড়া পথে বের হওয়া কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন এলাকার সচেতন মানুষজন। এগিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা। স্বাস্থ্য দফতর ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩টি থানা এলাকায় বুধবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৬০ জন। করোনায় আক্রান্ত কয়েকজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।
জেলা বা রাজ্য প্রশাসনের তরফে সম্প্রতি লকডাউন এলাকার যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে হাবড়া-অশোকনগরের হাতে গোনা কয়েকটি জায়গার নাম ছিল। অভিযোগ, পুলিশি নজরদারি অভাবে লকডাউনের মধ্যে থাকা এলাকার লোকজনও বাজারে বেরিয়ে পড়ছিলেন। বাজার-দোকান খোলা ছিল। ফলে কয়েকটি এলাকায় লকডাউন করে কোনও ফল পাওয়া যাচ্ছিল না। উল্টে কিছু মানুষ স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। অনেকেই মাস্ক ছাড়া অনেককেই পথেঘাটে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যাচ্ছিল। বাজারের মধ্যে মাস্ক ছাড়াই কেনাবেচা চলছিল। চায়ের দোকান, রাস্তায় জমায়েতেও লাগাম পড়েনি। যানবাহনে গাদাগাদি করে লোকজন উঠছিলেন বলেও অভিযোগ।
এই পরিস্থিতিতে সচেতন বাসিন্দারা বাজার-দোকান বন্ধের দাবি তুলেছিলেন। প্রশাসন এগিয়ে না আসায় ব্যবসায়ীরাই এগিয়ে আসেন।
হাবড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার পর্যন্ত পুর এলাকায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯ জন। মারা গিয়েছেন ৩ জন। হাবড়া শহরের ব্যবসায়ীরা রবিবার ব্যবসায়ীরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা হাবড়া শহরের বাজার-দোকান বন্ধ রাখবেন। হাবড়া চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন সাহা বলেন, ‘‘হাবড়া শহরে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বুধবার সকাল থেকে ৮ দিন আমরা বাজার-দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অত্যাবশকীয় পরিষেবা চালু থাকবে।’’
ব্যবসায়ীরা এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। হাবড়ার সিপিএম নেতা আশুতোষ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘হাবড়ার ব্যবসায়ীদের কবে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হল, এটা জানতে চাই। যে কাজ প্রশাসনের করা উচিত, তা ব্যবসায়ীরা করছেন। বোঝা যাচ্ছে, প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ।’’ বিজেপি নেতা বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘প্রশাসন ব্যর্থ বলেই ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসতে হয়েছে।’’ হাবড়ার পুরপ্রশাসক নীলিমেশ দাস অবশ্য দাবি করেছেন, পুর প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেই ব্যবসায়ীরা বাজারহাট বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’’ বুধবার সকালে হাবড়া শহরের দোকানপাট সবই বন্ধ ছিল। স্থানীয় বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বুধবার সকালে হাবড়ায় এসে মাইকে প্রচার করে মানুষকে সচেতন করেন। বিনামূল্যে মাস্ক বিলি করেন। পুলিশের পক্ষ থেকে মাস্ক ছাড়া পথে বের হওয়া মানুষদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ শুরু করা হয়েছে।
গোবরডাঙার পুরপ্রশাসক সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমাতে সব রাজনৈতিক দল এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে বাজারহাট, অফিস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কেবলমাত্র ওষুধ, দুধের দোকানের মতো জরুরি পরিষেবার দোকান খোলা থাকবে। সেখানে মাস্ক পড়ে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২২ জুলাই ফের বৈঠক করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর এলাকায় এখনও পর্যন্ত ১৫ জন মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা এলাকায় সমস্ত দোকানপাট, বাজারহাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরসভা। মঙ্গলবার এলাকার ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে পুর প্রশাসক প্রবোধ সরকার বৈঠক করেন। সেখানে ২১টি ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয় বাজারহাট বন্ধের। প্রবোধ বলেন, ‘‘বুধবার সকাল ১১টা থেকে বাজার-দোকানপাট সব বন্ধ থাকছে ২২ জুলাই পর্যন্ত। সম্পূর্ণ লকডাউন হচ্ছে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুর এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫১ জন। ১৩ জন অ্যাক্টিভ রোগী রয়েছেন। মারা গিয়েছেন করোনা আক্রান্ত হওয়া ২ জন। এ দিন সকালে বাজারগুলিতে কেনাকাটা করতে মানুষের ভিড় উপচে পড়েছিল। সকাল ১১টা পর্যন্ত বাজারহাট খোলা ছিল। তবে এ দিন পথে বের হওয়া বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক ছিল। জরুরি পরিষেবা ছাড়া অটো-টোটো, ভ্যান, টেকার বন্ধ রাখা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy