পদক্ষেপ: সেজে উঠেছে মিউজিয়াম। নিজস্ব চিত্র
জ্যুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সুন্দরবন আঞ্চলিক কেন্দ্রের উদ্যোগে স্থানীয় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রকৃতিকে রক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে একটি মিউজিয়াম তৈরি হয়েছে ক্যানিংয়ে। সুন্দরবন আঞ্চলিক কেন্দ্রেই তৈরি হয়েছে মিউজিয়াম। চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে সংস্থার ডিরেক্টর ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় এটির উদ্বোধন করবেন বলে জানানো হয়েছে। তারপরেই মিউজিয়াম খুলে দেওয়া হবে স্কুল পড়ুয়া ও সাধারণ মানুষের জন্য।
২০০১ সালে সুন্দরবনকে বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন, যা ভারতবর্ষের প্রায় ৪২৬৪ বর্গ কিমি জুড়ে অবস্থিত। এখানে বহু ধরনের প্রাণীর সন্ধান মেলে। প্রায় ২৬২৬ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে বলে জানা যায়।
১৯১৬ থেকে ভারতীয় প্রাণী জগত নিয়ে কাজ করছে জ্যুলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া। সুন্দরবনে কী ধরনের প্রাণী রয়েছে, অতীতে কী ধরনের প্রাণী ছিল, সে সব বিষয় মিউজিয়ামে তুলে ধরা হয়েছে। সংস্থার সুন্দরবন আঞ্চলিক কেন্দ্রটি ১৯৭৯ সালে কাকদ্বীপে প্রতিষ্ঠিত হলেও বছর পাঁচেক পরে এটি ক্যানিংয়ে স্থানান্তরিত হয়। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে থাকা সুন্দরবনের প্রাণীজগৎ নিয়ে আরও বেশি করে পর্যবেক্ষণের জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
ব বছর এই সংস্থা সুন্দরবন এলাকা থেকে একটি নতুন প্রজাতির কঠিন খোলস যুক্ত জলজ প্রাণী (ক্রাস্টেসিয়ান), ৮টি নতুন প্রজাতির পতঙ্গ (আর্থোপ্টেরান), ১টি সরীসৃপ ও ৮টি নতুন প্রজাতির মাছের উপস্থিতি নথিভুক্ত করেছে।
সংস্থার সুন্দরবন আঞ্চলিক শাখার প্রধান বিজ্ঞানী জেএস যোগেশ কুমার বলেন, ‘‘সুন্দরবনের প্রাণীবৈচিত্র সম্পর্কে জানার জন্য এটি তৈরির উদ্যোগ করা হয়েছে আমাদের ডিরেক্টরের নির্দেশে।” তাঁর বক্তব্য, ২০২১ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজ়ারভেশন অফ নেচার সুন্দরবনকে বিপন্ন ইকো সিস্টেম হিসেবে ঘোষণা করেছে। ইতিমধ্যেই সুন্দরবন বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ থেকে বেশ কিছু স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং অন্যান্য প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে৷ মিউজিয়ামে সুন্দরবনের কিছু বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর কঙ্কাল, যেমন জাভান গন্ডার, বুনো মহিষ, জলা হরিণ ইত্যাদির দেহাবশেষ থাকছে। থাকছে সরীসৃপের দেহাবশেষ। যোগেশ কুমার বলেন, ‘‘সুন্দরবন এলাকায় বিষাক্ত সাপ একটি বড় সমস্যা। প্রতি বছর বহু মানুষের মৃত্যু হচ্ছে সাপের কামড়ে। তেমনি অজান্তে বিষহীন সাপ নিধনের ফলেও জীববৈচিত্রে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এই মিউজিয়াম সাপ সম্পর্কে এলাকার মানুষকে সচেতন করে পরিবেশ রক্ষায় সাহায্য করবে।”
প্রায় পাঁচশোর বেশি প্রজাতির প্রাণী যা সুন্দরবন এলাকায় পাওয়া যায়, তা এই মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হয়েছে। সংস্থার দাবি, এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য মূল্যবান পদক্ষেপ। সুন্দরবনের মতো প্রত্যন্ত এলাকায় এ ধরনের একটি মিউজিয়াম তৈরি গবেষক ছাত্রদের পক্ষেও উপকারি হবে বলে আশা বিভিন্ন মহলে।
ক্যানিংয়ে বিজ্ঞান বিষয়ে নিয়ে স্নাতকস্তরে পাঠরত ছাত্র সন্দীপ দাস বলেন, “এটি চালু হলে সত্যিই খুব উপকারে আসবে আমাদের। যাঁরা প্রাণীজগৎ নিয়ে পড়াশোনা করতে চান বা সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা করতে চান— তাঁদের ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy