Advertisement
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Schools

school: ‘হুমকির জেরে’ বাড়িছাড়া, স্কুলে গেল না মেধাবী ছাত্রী

ছাত্রী ও তার বাবার অভিযোগ, হুমকির কথা লিখিত না হলেও ফোনে পুলিশকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রাজীব চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২১ ০৭:৫২
Share: Save:

খুলেছে স্কুল-কলেজের দরজা। ‘এ গ্রেড’ পেয়ে মাধ্যমিক পাস করা ক্যানিংয়ের এক ছাত্রীরও অন্যদের মতো মঙ্গলবার স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার জীবন স্বাভাবিক ছন্দে এগোয়নি। মঙ্গলবার যখন তার স্কুলের তালা খোলা হচ্ছে, তখন ওই ছাত্রী বাড়ি থেকে বহু দূরে, বেঙ্গালুরুতে।

সেখানে যাওয়ার আগে জেলা ‘চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি’র চেয়ারপার্সনকে চিঠি লিখে ওই ছাত্রী জানিয়েছিল, তার সঙ্গে যা ঘটেছে, তা সে ভুলে যেতে চায়। কিন্তু বাড়িতে থাকা নিরাপদ নয়। তাই বেঙ্গালুরু থেকেই পড়াশোনা করতে চায় সে। তার আক্ষেপ, ‘‘স্কুল খুলল। কিন্তু, আমার আর যাওয়া হল না।’’

কী ঘটেছিল মেয়েটির সঙ্গে?

ক্যানিং থানা এলাকার বাসিন্দা বছর পনেরোর ওই ছাত্রীর অভিযোগ, গত ১৩ অগস্ট রাতে তাকে অপহরণ করে এক পরিচিত যুবক-সহ চার জন। তাকে রাখা হয়েছিল গাইঘাটার কাছে কোনও এক ঘরে। সেখানে তার উপরে নির্যাতন চলে। বেশ কয়েক দিন পরে সুযোগ পেয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দার মোবাইল থেকে ফোন করে বাড়িতে খবর পাঠায় মেয়েটি। বাবা গিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনেন।

অপহরণ ও পকসো আইনে মামলা শুরু হয়। ক্যানিং থানার পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতারও করে। জমা পড়ে চার্জশিট। পরে আলিপুর আদালত থেকে জামিনও পেয়ে যায় দুই অভিযুক্ত।

ছাত্রীর বাবার কথায়, ‘‘মূল অভিযুক্ত জামিন পাওয়ায় আমরা আতঙ্কিত। তবে আইনের উপরে আস্থা রয়েছে। আশা করি সুবিচার পাব।’’ ছাত্রীর অভিযোগ, ‘‘মামলা করেছি বলে রোজ আমাদের হুমকি দিচ্ছিল মূল অভিযুক্তের বাড়ির লোকজন। আমাকে দেখে নেবে বলেছিল। সব ভুলে পড়াশোনা করতে চাই। কিন্তু বাড়িতে থাকলে তা হবে না।’’

চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন মহুয়া সুররায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মেয়েটি পড়াশোনা করতে চায়। আমার বিশ্বাস, অপরাধীরা সাজা পাবে। পকসো আইনে মামলা হয়েছিল। অভিযুক্তেরা জামিন পেয়েছে। ওই মামলায় আরও এক আইনজীবী নিয়োগ করেছি। যাতে ধৃতদের জামিন বাতিল হয় এবং নির্যাতিতা বিচার পায়।’’ ক্যানিং থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘চার্জশিট জমা পড়েছে। ধৃতেরা জামিনে ছাড়া পেয়েছে। তবে ওই ছাত্রী বা তার পরিবারের তরফে হুমকির অভিযোগ জমা পড়েনি। তা ছাড়া, মূল অভিযুক্ত জামিন পাওয়ার আগেই ওই ছাত্রীর পরিবার বেঙ্গালুরু চলে যায়।’’

মামলার সরকারি আইনজীবী সন্দীপন দাস বলেন, ‘‘ছাত্রীর বাবার সঙ্গে কথা হয়েছে। এ মাসেই উনি এখানে ফিরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন। তারপরে অভিযুক্তদের জামিন খারিজের আবেদন জানাব আদালতে।’’

এ বার মাধ্যমিকে ৪৫০ পেয়েছে ওই ছাত্রী। তার কথায়, ‘‘মুক্তি পাওয়ার পরের দিনগুলি ছিল আরও ভয়ঙ্কর। হুমকির জেরে বেরোতে পারতাম না। পড়াশোনা করার অবস্থা ছিল না।’’ তার বাবা বলেন, ‘‘মেয়ের স্কুল থেকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নেওয়ার পরে স্ত্রী, দুই ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে বেঙ্গালুরু চলে আসি। এখানেই কলেজে ভর্তি করাবো মেয়েকে। একটা ঘর ভাড়া করেছি। ছোট ছেলে এখানে কাজ পেয়েছে। আমিও ছোটখাট কিছু করব।’’ গত মাসের মাঝামাঝি ওই ছাত্রী বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সনকে লিখিত ভাবে জানায়। চিঠিতে সে লেখে, ‘আমার জীবনে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে। আমি সে সব ভুলে নতুন করে বাঁচতে চাই।’’ ওই ছাত্রী ও তার বাবার অভিযোগ, হুমকির কথা লিখিত না হলেও ফোনে পুলিশকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পুলিশের দাবি, লিখিত বা মৌখিক, কোনও অভিযোগই তাঁরা করেননি।

অন্য বিষয়গুলি:

Schools
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy