ছাদনাতলা: চলছে বিয়ে। নিজস্ব চিত্র
সন্ধেবেলা হঠাৎ সানাই বেজে উঠল! চলে এল ব্যান্ডপার্টি। বিয়েবাড়ি নাকি? আশেপাশের বাড়ির লোকজন ভাবছেন, কই আগে জানতাম না তো!
পরে জানা গেল, বিয়েই হচ্ছে, তবে পুতুলের!
সন্দেশখালির ঝুপখালি গ্রামে বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলা বিউটি দাসের বাড়িতে পুতুলের বিয়ের আসর বসেছিল। তার পুতুল ছিল ‘কনে’। বিয়ে করতে ‘বরপুতুল’ এল পাশের গ্রাম বেড়মজুরের অঙ্কিতা দাসের বাড়ি থেকে।
অনেক আগে পাড়ায় পাড়ায় পুতুলের বিয়ে দিত ছোট মেয়েরা। সে সময়ে স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ভিডিয়ো গেম তো দূরঅস্ত, বাড়ি-বাড়ি টিভিই ছিল না। বিনোদনের রকম ছিল অন্য রকম। ছেলেরা বাইরে খেলতে গেলেও মেয়েরা তত বেরোতে পারত না। মূলত তারাই মাতত পুতুল-খেলায়। এ কালের সমাজ অনেক বদলেছে। এখন সব কিছুতেই ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে মেয়েরা। বিনোদনের অনেক রাস্তাও খুলে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতেও দু’টি মেয়ের বাড়ি রীতিমতো অনুষ্ঠান করে তাদের পুতুলের বিয়ে দিচ্ছে— এই দৃশ্য এখন বিরলই।
শিমুলহাটি ফুলমণি আদর্শ বিদ্যামন্দিরের নবম শ্রেণির ছাত্রী বিউটির বাবা বিশ্বজিৎ দাস পশুচিকিৎসক। অঙ্কিতাও ওই স্কুলেরই নবম শ্রেণির ছাত্রী। অঙ্কিতার বাবা নেই। মা অঙ্গনওয়াড়ির শিক্ষাকর্মী।
বিউটির বাড়িতে এ দিন গৃহশিক্ষকের পড়ানোর কথা ছিল। ইংরেজির শিক্ষক প্রদীপ্ত সরকার সন্ধেবেলা বিউটির বাড়ি গিয়ে দেখেন পড়াশোনার কোনও ব্যাপার নেই, উল্টে বিয়ের আয়োজন চলছে। প্রাথমিক ভাবে রেগে গেলেও পরে তিনি বিষয়টাতে আনন্দই পান। তিনি জানান, পুতুলের বিয়ে ভালই উপভোগ করলেন।
বিয়েতে বিউটি ও অঙ্কিতার সহপাঠীরাই মূলত নিমন্ত্রিত ছিল। ছিল ১৫ জন ‘বরযাত্রী’। জনা পঞ্চাশেক নিমন্ত্রিতকে পাত পেড়ে খাওয়ানো হল লুচি-তরকারি, মাংস-ভাত, চাটনি-পাঁপড়, মিষ্টি। বিয়ে হয়েছে সমস্ত নিয়মকানুন মেনেই। হয়েছে বরপুতুলকে বরণ এবং কনেপুতুলকে সিঁদুরদানও। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘মেয়ের আবদার। তাই করলাম। এ সব তো এখন উঠেই গিয়েছে। তাই ও যখন বায়না করল, না করিনি।’’ অঙ্কিতার মা দেবযানী বলেন, ‘‘দু’একদিনের মধ্যেই বৌভাতের অনুষ্ঠান করব। সব কিছু নিয়মমাফিকই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy