সাফল্য: অস্ত্রোপচারের পরে জহরা বিবি। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
স্থানীয় নার্সিংহোম জানিয়েছিল, হাতে গ্যাংগ্রিন হয়ে গিয়েছে। কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। অস্ত্রোপচারের খরচ জোগাড় করতে না পেরে বাড়ির লোকেরা ছুটেছিলেন সরকারি হাসপাতালে। এ সব ক্ষেত্রে সাধারণত জেলা হাসপাতাল থেকে কলকাতার হাসপাতালে রেফার করাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বুধবার ঘটল উল্টো। নিজেরাই দায়িত্ব নিয়ে মেডিক্যাল বোর্ড গড়ে অশীতিপর বৃদ্ধাকে সুস্থ করে তুললেন বারাসত হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। অস্ত্রোপচারও হল। তবে তা হাত বাদ দেওয়ার নয়, ক্ষত সারিয়ে হাতটি রেখে দেওয়ার।
ওই বৃদ্ধার নাম জহরা বিবি। বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগর থানার মছলন্দপুরের তেঁতুলিয়ায়।
তাঁর পরিবারের লোকেরা জানিয়েছেন, দিন কয়েক আগে বাড়ির নর্দমায় পড়ে গিয়ে ডান হাতে চোট পান জহরা। আস্তে আস্তে হাতে সংক্রমণ শুরু হয়। কিছু দিন পর থেকে হাত ফুলে রক্ত, পুঁজ বেরোতে থাকে। পচনও ধরতে শুরু করে।
জহরাকে নিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় ছুটোছুটি করে তাঁর পরিবার। বৃদ্ধার ছেলে আজাদ আলি মোল্লা বলেন, ‘‘সেরে ওঠা তো দূর অস্ত্, উল্টে মায়ের হাতের সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়ছিল। আমরা নার্সিংহোমেও নিয়ে যাই। কিন্তু ওরা সাফ জানিয়ে দেয়, হাত কেটে বাদ দেওয়া ছাড়া গতি নেই।’’ এই বয়সে হাত কাটার ঝুঁকি নিতে চাননি আজাদেরা। সেই আর্থিক সংস্থানও তাঁদের ছিল না।
এর পরে প্রতিবেশীদের কথা মতো বারাসত জেলা হাসপাতালে বুধবার মাকে নিয়ে আসেন আজাদ।
প্রথমে জহরা বিবিকে পরীক্ষা করে জরুরি বিভাগে পাঠিয়ে দেন বহির্বিভাগের চিকিৎসকেরা। সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘গোটা পরিবারটি ভেঙে পড়েছিল। কিছু একটা ব্যবস্থা করার জন্য কান্নাকাটিও করছিল। আমরা সিদ্ধান্ত নিই, হাত বাদ না দিয়েই ঠিক করা যায় কি না, তার জন্য শেষ চেষ্টা করে দেখব।
শহরে রেফার করলে আমাদের দায় থাকত না। কিন্তু আমাদের চিকিৎসকেরা স্থির করেন, তাঁরা চ্যালেঞ্জটা নেবেন।’’
চিকিৎসক অলককুমার মল্লিকের নেতৃত্বে দ্রুত মেডিক্যাল বোর্ড বসিয়ে বৃদ্ধার অস্ত্রোপচার করা হয়। ঘণ্টা দুয়েকের অস্ত্রোপচারের শেষে অলকবাবু বলেন, ‘‘জটিল অস্ত্রোপচার ছিল। কিন্তু পুরোটাই সফল হয়েছে।’’ হাসপাতালে শুয়ে জহরাও বলেন, ‘‘ভাল আছি।’’ আর বৃদ্ধার নাতি রাজীব আহমেদের কথায়, ‘‘দিদিমার হাতে এত যন্ত্রণা হতো যে আমরাই সহ্য করতে পারতাম না। সকালে বাড়ি থেকে যখন বেরিয়েছিলাম, তখনও ভাবতে পারিনি সরকারি হাসপাতালেই দিদিমা ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy