জলের তলায় চলে গিয়েছে পান গাছ। —নিজস্ব চিত্র।
টানা বৃষ্টিতে জমা জলে ডুবে রয়েছে হাজার হাজার পানের বরজ। ক্ষতিপূরণের আশায় প্রশাসনের দোরে দোরে ঘুরছেন কাকদ্বীপের পানচাষিরা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপ উদ্যান পালন প্রকল্প অধিকর্তা সমরেন্দ্র খাঁড়া বলেন, ‘‘পানচাষিদের ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। চাষিদের উৎসাহ বাড়াতে সম্প্রতি কয়েকটি শিবির করা হয়েছিল। হিমঘরের পরিবর্তে ঠান্ডা গাড়ির মধ্যে পান রেখে সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক অমিত নাথ বলেন, ‘‘পানচাষিদের ক্ষতিপূরণের দাবি থাকলে তাঁরা পঞ্চায়েতে বা ব্লকে আবেদন করতে পারেন। যা আমরা জেলা প্রশাসনকে জানাব। সেখান থেকেই ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
কাকদ্বীপ মহকুমার সাগর, পাথরপ্রতিমা, নামখানা ও কাকদ্বীপ এলাকায় অন্য চাষের সঙ্গে বহু বছর ধরেই জনপ্রিয় পানচাষ। সাধারণত, চাষের জমি উঁচু করে খামার তৈরি করতে হয়। ওই খামারে চারা পান গাছ লাগিয়ে তা পাট কাঠি ঘিরে দেওয়া হয়। তৈরি হয় বরজ। সেই বরজ আবার ঘিরতে হয় প্লাস্টিক দিয়ে। অতিবৃষ্টি বা অতি গরম সহ্য করতে পারে না পান গাছ। সে কারণে চাষিরা সোহাগ করে পানকে ডাকেন ‘রাজকন্যা’ বলে।
চারা ৩-৪ মাস পরে পান পাতা বড়সড় হয়ে উঠলে তা তোলা শুরু হয়। এক বিঘা জমি পান চাষ করতে খরচ প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। ওই চার ব্লকে অধিকাংশ গরিব চাষিরাই ধার দেনা করে পানের বরজ তৈরি করেন। ৪-৫ বছর একটি বরজ থেকে পান তোলা যায়।
কাকদ্বীপ ব্লকের ঋষি বঙ্কিম পঞ্চায়েতের গোবিন্দরামপুর, বিশালাক্ষ্মীপুর এলাকার বরজ ঘুরে দেখা গেল, কোথাও কোমর সমান, কোথাও হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে রয়েছে। ১০-১৫ দিন ধরে এই পরিস্থিতি চলার ফলে পান পাতা হলুদ হয়ে গিয়েছে। কোথাও শুকিয়ে যাচ্ছে পানের বরজ। দেখা গেল, বেশ কিছু বরজ ঝড়-বৃষ্টিতে উপড়ে পড়ে রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পানচাষি জয়ন্ত মাইতি, সুভাষ পট্টনায়ক, শ্রীকন্ঠ জানা, গৌতম জানাদের অভিযোগ, ‘‘আমাদের ২ থেকে ৩টি করে পানের বরজ আছে। এই চাষই একমাত্র জীবিকা। কিন্তু জল জমে শ’য়ে শ’য়ে বরজ নষ্ট হয়েছে এই এলাকায়। ক্ষতিপূরণের জন্য পঞ্চায়েতে বা কৃষি দফতরের কাছে গেলে আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে এটা তাদের এক্তিয়ারে নেই।’’ এলাকার বাসিন্দা তথা মহকুমা পানচাষি সমিতির সভাপতি সত্যরঞ্জন মাইতি বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে চা চাষ নিয়ে সাহায্যে সরকারি ব্যবস্থা থাকলেও দক্ষিণবঙ্গের পানচাষের ক্ষেত্রে কোমও সরকারি উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অথচ কাকদ্বীপ মহকুমায় ধানের পরে পানই এক মাত্র অর্থকরী ফসল। এই এলাকার বাংলা পান রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে তো বটেই, ভিন রাজ্যেও চলে যায়।’’
চাষিদের ক্ষতিপূরণের দাবির পাশেই দাঁড়িয়েছেন তিনি। সত্যরঞ্জনবাবুর আরও বক্তব্য, অতিবৃষ্টি ছাড়াও এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া কালনাগিনীর সংযোগকারী খেয়াবতী খালটি সংস্কার না হওয়ায় জল নামতে পারছে না। এলাকায় পান ছাড়াও আমন ধান ও সব্জিচাষেও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে।
কাকদ্বীপ ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা শ্যামল প্রামাণিক জানান, পানচাষে ক্ষতি নিয়ে তাঁর কাছে তথ্য নেই। তবে এলাকার ২০,৬৫০ হেক্টর কৃষিজমির মধ্যে প্রায় সাড়ে চারশো হেক্টর জমির বীজতলা জলে ডুবে রয়েছে। বীজ রোপন করা আড়াই হাজার হেক্টর জমির ফসলও জলের তলায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy