Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
Farmers

Heavy rainfall: অকাল বর্ষণে ক্ষতির মুখে চাষি

এ বার গ্রীষ্মকালে অনেক আশায় বুক বেঁধে বোরো চাষের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন চাষিরা। কিন্তু পাকা ধান কাটার মুখেই টানা বৃষ্টি চাষিদের আশায় জল ঢেলে দিল।

 উদ্বিগ্ন: ফসল অবস্থা কী, দেখছেন এক চাষি।

উদ্বিগ্ন: ফসল অবস্থা কী, দেখছেন এক চাষি। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২২ ০৮:৪৮
Share: Save:

পাকা ধানের শিষে ভরে আছে মাঠ। খেত থেকে সেই ধান ঘরে তোলার সময় হয়েছে। কিন্তু ক’দিনের টানা বৃষ্টিতে ফসল ডুবে গিয়েছে জলে। কপালে হাত বোরো চাষিদের।
ডায়মন্ড হারবার মহকুমা ৯টি ব্লক ডায়মন্ড হারবার ১, ২, ফলতা, মগরাহাট ১, ২, মন্দিরবাজার, কুলপি, মথুরাপুর ১ ও ২ মূলত কৃষিনির্ভর এলাকা। বেশ কয়েক বছর ধরে এই এলাকায় বর্ষার ধান চাষের পাশাপাশি বোরো চাষ হয়। গত বছরের অতি বৃষ্টি ও অনিয়মিত বৃষ্টির কারণে বীজতলা তৈরি করতে পারেননি অনেক চাষি। ফলে বর্ষার চাষ করাও সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া, বর্ষায় মাঠে কোমরসমান জল দাঁড়িয়ে যাওয়ায় চাষের অনুকূল পরিস্থিতি ছিল না।
এ বার গ্রীষ্মকালে অনেক আশায় বুক বেঁধে বোরো চাষের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন চাষিরা। সময় মতো বীজতলা তৈরি ও তা রোপণও করা হয়েছিল। গত তিন মাসে বোরো খেত পরিচর্যা করা ও চাষের উপযোগী আবহাওয়া পাওয়ায় ফলনও চাহিদামতো হয়েছিল। কিন্তু পাকা ধান কাটার মুখেই টানা বৃষ্টি চাষিদের সমস্ত আশায় আক্ষরিক অর্থেই জল ঢেলে দিল। আবহাওয়ার পূর্বাভাস শুনে তড়িঘড়ি কয়েকজন চাষি পাকা ধান গোলায় তুলতে সক্ষম হলেও, অনেকের ধান এখনও পড়ে আছে মাঠে। ঝড়-বৃষ্টিতে পাকা ধানের শিষ বেঁকে গিয়ে জলে ডুবে গিয়েছে। এই অবস্থায় একাধিক দিন পড়ে থেকে ধানের ‘কলা’ বেরোতে শুরু করেছে, ধান পচে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা।
মগরাহাটের মাহিতালাব গ্রামের আঙ্গুরা বিবি প্রায় ১০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। সার, কীটনাশক, বীজ ধান, শ্রমিক, ট্র্যাক্টর, জল দেওয়ার যন্ত্র— সব মিলিয়ে তাঁর বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৮ হাজার টাকা। অন্য চাষিদের মতোই ঋণ করে সেই টাকা জোগাড় করেছিলেন আঙ্গুরা। ভেবেছিলেন, ধান ওঠার পরে দেনা মেটাবেন। আঙ্গুরা বলেন, “কী করে ধার মেটাবো, জানি না। মাঠের ধান মাঠেই পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”
মেহেদি হাসান ফকির জানালেন, এই এলাকা বেশ নিচু। ফলে গতবারের বর্ষায় খেতে কোমরসমান জল জমে গিয়ে বর্ষার ধান চাষ করা যায়নি। ফের কয়েক বিঘা জমিতে গ্রীষ্মের বোরো ধানের চাষ করেছিলেন। সেটাও প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে জলে ডুবে রয়েছে। ধান পচে যাচ্ছে। এখান থেকে চাল করতে গেলে তা ভেঙে যাবে। বাজারেও এই ধান বিক্রি করা যাবে না। মন্দিরবাজারের চাষি ধনঞ্জয় হালদারের কথায়, “বর্ষার ধান চাষের সময়ে বীজতলা তৈরি করতে না পারায় আত্মীয়দের থেকে সামান্য কিছু বীজতলায় এনে চাষ করেছিলাম। ফের বৃষ্টির জেরে বোরো ধান চাষে ক্ষতি হল।”
এলাকার চাষিদের অভিযোগ, নিকাশি খালগুলি যদি সংস্কার করা হত, তা হলে জল দ্রুত নেমে যেত। এত বড় ক্ষতি তাঁদের হয় তো হত না। জানা গেল, এলাকায় বছরের পর বছর ধানের ফলন না হওয়ায় বাধ্য হয়ে শ্রমিকের কাজে ভিন্ রাজ্যে চলে যাচ্ছেন অনেকে। এখানে চাষ হলে জমিতে শ্রমিকের কাজ জুটত, কিন্তু এখন কৃষকদের মধ্যেই ধান চাষের প্রতি এক রকম অনীহা তৈরি হয়েছে। পরবর্তী প্রজন্ম অন্য পেশা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। চাষিদের দাবি, সরকার কৃষকদের জন্য কিছু অন্তত আর্থিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করুক।
সেচ দফতরের এক আধিকারিক জানান, আর্থিক বরাদ্দের অভাবে খালগুলি সংস্কার করা যাচ্ছে না। ডায়মন্ড হারবারের মহকুমাশাসক অঞ্জন ঘোষ বলেন, “বৃষ্টির জলে বড় ক্ষতি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চাষিদের নিজের এলাকার কৃষি দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত জানানোর পাশাপাশি তাঁদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট আমরা জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠাতে পারি।”

অন্য বিষয়গুলি:

Farmers Heavy Rainfall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy