জলে-ডুবে: খেতের হাল। মাথায় হাত চাষির। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
মরার উপরে খাঁড়ার ঘা!
বনগাঁ ব্লকের পূর্ব কালিয়ানি এলাকার হাজারখানেক চাষির দুর্দশার শেষ নেই। একে আমপানের দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে বিস্তীর্ণ কৃষিখেত। এরপরে নাওভাঙা নদীর জল উপচে প্লাবিত হয়েছে বিঘের পর বিঘে জমির পাট, তিল, ধান, আনাজ। জলমগ্ন কৃষিখেতের দিকে তাকিয়ে এখন চোখের জল ফেলছেন চাষিরা। ঘূর্ণিঝড়ে অনেক চাষির বাড়িঘরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে বা বাইরে থেকে টাকা ধার করে চাষিরা চাষবাস করেছিলেন। চাষ থেকে লাভ তো দূরের কথা, চাষের খরচই উঠল না। এখন ঋণের টাকা কী ভাবে মেটাবেন, তা ভেবেই অস্থির চাষিরা। তাঁদের অনেকের কথায়, ‘‘সরকার যদি কৃষিঋণ মুকুব না করে এবং আর্থিক সাহায্য না করে, তা হলে আমাদের পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে।’’
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসক) অরূপ দাস বলেন, ‘‘ক্ষতিপূরণের টাকা চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।’’ তবে ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া কৃষিঋণ মুকুবের বিষয়ে এখনও কোনও সরকারি নির্দেশ আসেনি বলে কৃষি দফতর সূত্রের খবর। তবে চাষিদের জমির খাজনা মুকুব করা হয়েছে।
পূর্ব কালিয়ানি গ্রামের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে বর্ডার রোড। সর্বক্ষণ বিএসএফ জওয়ানদের কড়া পাহারা। বিএসএফের চৌকি পেরিয়ে বর্ডার রোডে দাঁড়িয়ে দেখা গেল সড়কের দু’পাশে যত দূর চোখ যায়, শুধু জল আর জল। জলের তলায় পাটের ডগা উঁকি দিচ্ছে। খেতে কেটে রাখা ধান, লাউ-পটলের মাচা জলে ভেসে রয়েছে। এক চাষিকে দেখা গেল জলে পচা লাউ খেত থেকে তুলছেন।
রাস্তার বাঁক ঘুরে দু’দেশের সীমানার কাছাকাছি পৌঁছে দেখা গেল, বয়ে গিয়েছে নাওভাঙা নদী। যদিও ওই এলাকায় আলাদা করে নদীকে এখন চিহ্নিত করার উপায় নেয়। গোটা এলাকাতেই জল। কৃষিখেত সব জলের অনেক গভীরে তলিয়ে গিয়েছে। দূরে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের গ্রাম। কাছই পেট্রাপোল-পিরোজপুর বাওর। সেটাও ভেসে গিয়েছে। চাষিরা জানালেন, ইছামতীর জলও উলটে ঢুকছে।
কথা হচ্ছিল বৃদ্ধ চাষি রমেশ গায়েনের সঙ্গে। আড়াই বিঘে জমিতে তিল এবং সাড়ে তিন বিঘে জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। সব গ্রাস করেছে নাওভাঙার উপচে আসা জল। বৃদ্ধ বলেন, ‘‘এখানে রিভার পাম্প নেই। স্যালো মেশিনে খেতে জল দিতে হয়। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেছিলাম। প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কী ভাবে বাঁচব জানি না।’’ বৃন্দাবন বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তি জমি ভাগে নিয়ে লাউ, পাট করেছিলেন। সব জলের তলায়। বৃন্দাবনের কথায়, ‘‘জমির মালিককে ২ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে লিজে নিয়ে চাষ করেছিলাম। প্রায় ৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে চাষে। সব শেষ হয়ে গেল।’’ শঙ্কর হালদার ৬ বিঘে জমিতে ধান, পটল, তিল করেছিলেন। সব জলের তলায়। কাঙাল হালদারের মতো কোনও কোনও চাষি খেত থেকে ধান আগে থেকে তুলে নিতে পেরেছিলেন। ধান তুলে পাট চাষ করেছিলেন। সেই পাট শেষ।
এলাকাটি ছয়ঘড়িয়া পঞ্চায়েতের অধীন। ওই এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য বিশ্বজিৎ সরকার নিজে পাট করেছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত তিনিও। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘প্রায় ৫০০ বিঘে জমির ফসল জলের তলায়। হাজারখানেক চাষি সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছেন।’’ চাষিরা জানালেন, তাঁদের এলাকায় বছরে দু’বার চাষ হয়। এ বার প্রথম চাষ জলের তলায়, দ্বিতীয় চাষের সুযোগ নেই। কারণ, জমা জল বের হওয়ার পথ নেই। সামনেই বর্ষা। জল আরও বাড়বে। নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি তুলছেন চাষিরা।
পঞ্চায়েত প্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘নদীর জল উপচে খেত জলমগ্ন হয়েছে। বাংলাদেশ থেকেও জল ঢুকছে। চাষিরা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। কৃষি দফতরের কাছে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণের আবেদন করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy