মোমবাতির আলোয় পড়াশোনা করছে ওরা (বাঁ দিকে)। খুঁটি বসলেও তার টানা হয়নি এখনও। নিজস্ব চিত্র
৯টি খুঁটি বসেছে। বাকি আর মাত্র দু’টি।
কিন্তু আবেদন করার পরে পাঁচ বছর কেটে গেলেও সেই দু’খানি খুঁটির অভাবে গীতা কয়ালের ছেলেদের প্রতি সন্ধ্যায় পড়তে বসতে হয় মোমবাতি জ্বেলে। মোবাইল চার্জ করাতে যেতে হয় বাজার বা পড়শির বাড়িতে। গরমে ভরসা হাতপাখা। বিদ্যুতের অভাবে ঘর-গেরস্থালির আর যা কিছু সমস্যা— সবই সহ্য করে দিন কাটাচ্ছে পরিবারটি।
এক সময়ে ‘দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনা’ ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। পরে তা নাম বদলে হয়েছে ‘সহজ বিজলি হর ঘর যোজনা’ বা ‘সৌভাগ্য’। ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পের ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লক্ষ্য ছিল, গ্রামের সব বাড়িতে বিদ্যুৎ এবং গরিব মানুষের বাড়িতে নিখরচায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া। ২০১৯ সালের মার্স মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে ২০২৩ সালেও বিদ্যুৎ পৌঁছল না হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বিশপুর পঞ্চায়েতের পুবেরঘেরি গ্রামের গীতা কয়ালের বাড়িতে।
গীতার অভিযোগ, ২০১৭ সাল থেকে বিদ্যুৎ দফতরে গিয়ে গিয়ে জুতোর শুকতলা খুইয়েও ফেলেছেন। সেই চেষ্টার ফল পেয়েছেন খানিকটা। দু’বছর হল ৯টি বিদ্যুতের খুঁটি বসেছে। গীতার দাবি, দফতর থেকে জানানো হয়েছে, তাঁর বাড়ি পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌঁছতে আরও ২টি খুঁটি লাগবে। কিন্তু সেই তথ্য জানার ফলে গীতার সমস্যা ঘোচেনি। বাড়তি দু’টি খুঁটি আর পোঁতা হয়নি।
গীতা জানান, ২০১৭ সাল থেকে স্বামী ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন এই গ্রামে। হিঙ্গলগঞ্জ বিদ্যুৎ দফতরে বার বার বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আবেদন করেছেন। গীতা বলেন, “আমাদের বাড়ি রাস্তা থেকে বেশ কিছুটা ভিতরে। বিদ্যুৎ দফতরের তরফে প্রথমে বলা হয়েছিল, ১০টি খুঁটি লাগবে। পরে জানানো হয়, ১২টি খুঁটি লাগবে বাড়ি পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌঁছতে। কিন্তু অতিরিক্ত দু’টি খুঁটি আর বসল না।’’
গীতা জানান, দু’টি খুঁটির জন্য নতুন করে আবেদন করতে বলা হয়েছিল। তা করেছেন গীতা। জানালেন, যত দূর পর্যন্ত খুঁটি বসেছে, তত দূর পর্যন্ত তারই টানা হয়নি এখনও। পোঁতা হয়নি বাড়তি খুঁটি দু’টিও।
চাষবাস করে সংসার চলে গীতাদের। তেমন সচ্ছল অবস্থা নয়। তবু পাকা বাড়ি তৈরির সময়ে যন্ত্রপাতি চালানোর প্রয়োজনে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে দিনে ৪০০-৫০০ টাকার বিনিময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়েছিলেন।
বাড়ির ছোট ছেলে অয়ন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে শৌভিক পড়ে এক ক্লাস উপরে। শৌভিক বলে, ‘‘বাড়িতে বিদ্যুৎ না থাকায় হ্যারিকেনের আলোতেই পড়াশোনা করি। ৭-৮ মাস ধরে কেরোসিন মিলছে না কোথাও। তাই মোমবাতি দিয়ে কাজ চালাই। খুবই সমস্যা হয়। হাওয়া দিলে বার বার বাতি নিভে যায়।”
বাড়ির কর্তা মৃণাল বলেন, ‘‘রাত হলে কার্যত অন্ধকারের মধ্যে থাকতে হয় সপরিবার। আশপাশে জঙ্গল-মাঠ। সাপ, পোকামাকড়ের ভয় আছে।” মৃণাল জানালেন, মোবাইল ফোন চার্জ করতে বাজারে যেতে হয়। বেশিরভাগ সময়ে ফোন বন্ধই হয়ে যায়।
গীতা জানান, গত নভেম্বর মাসে হিঙ্গলগঞ্জ বিদ্যুৎ দফতর থেকে বলা হয়েছল, ডিসেম্বর মাসে ব্যবস্থা হবে। ডিসেম্বর মাসে জানানো হয়, দুয়ারে সরকারের শিবির শেষ হলে বিষয়টি দেখা হবে। জানুয়ারি মাসে জানিয়ে দিয়েছে, মাঝামাঝি নাগাদ ব্যবস্থা হতে পারে।
বিশপুরের প্রধান সঞ্জিত জানা বলেন, ‘‘বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। বিদ্যুৎ দফতরের উচিত, দ্রুত সংযোগ দেওয়া। ২০২৩ সালে এসে এমন ঘটনা কাম্য নয়।”
হিঙ্গলগঞ্জ বিদ্যুৎ দফতরের স্টেশন ম্যানেজার বৃন্দাবন কর্মকার বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র স্বপ্ন দেখা দেশের নাগরিক গীতার কাছে এখন এই আশ্বাসটুকুই সম্বল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy