লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা বন্ধ হওয়ায় সমস্যায় মানুষ। প্রতীকী চিত্র।
বিডিওর ঘরের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন মাঝবয়সি এক ভদ্রলোক। ‘‘স্যার আমাকে বাঁচান’’— কাঁদতে কাঁদতেই জানালেন, গত কয়েক মাস হল লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
বিডিও ধমক দিয়ে বলেন, ‘‘আপনি তো পুরুষমানুষ, আপনি কী ভাবে লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা পাবেন?’’ ভদ্রলোক তাঁকে একখানা কাগজ দেখিয়ে জানান, তাঁর নামেই এতদিন লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা আসত। অভাবের সংসারে দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে বিপদে পড়েছেন বলে জানান তিনি।
সব কিছু শোনার পরে বিডিও কাগজপত্র খতিয়ে দেখেন। জানতে পারেন, ভাঙড় ২ ব্লক এলাকার লাঙলবেঁকি গ্রামের বাসিন্দা আখের সাঁফুইয়ের নামে গত ছ’মাসে ধরে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের ৫০০ টাকা করে ঢুকেছে। আখের তাঁর স্ত্রী মর্শিদা বিবির নামে লক্ষ্মীর ভান্ডারে আবেদন করেছিলেন। মর্শিদা ও তাঁর স্বামীর জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকতে শুরু করে। হঠাৎ করে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
এমন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে ভাঙড়ের বেশ কিছু পরিবার।
কেন এই পরিস্থিতি?
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাঙড় ২ ব্লকে ৬০ হাজার মহিলা লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন। এঁদের মধ্যে বেশ কিছু মানুষের তথ্যে ভুল রয়েছে। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে আবেদন করতে হলে অবশ্যই আবেদনকারী মহিলার নামে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে মর্শিদা বিবির নামের বদলে আখের সাঁফুইয়ের নামে কার্ড। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে আখেরের নামের পাশে ‘ফিমেল’ (মহিলা) লেখা রয়েছে। মর্শিদার নামের পাশে লেখা ‘মেল’ (পুরুষ)। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করার ক্ষেত্রে পরিবারের প্রধান মহিলার নামে কার্ড করতে হবে এবং ওই মহিলার নামের সঙ্গে পরিবারের অন্য সদস্যদের নাম স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে নথিভূক্ত করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে লিঙ্গ বিভ্রাটের কারণে আখেরের পরিবারের লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের টাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে ব্লক প্রশাসন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প চালু হয়। ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সি সমস্ত মহিলাই এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন বলে জানানো হয়েছিল। তবে সরকারি কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী বা সরকারি ভাতা পান এমন কোনও মহিলা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন না। উপভোক্তাকে পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দাও হতে হবে। এই প্রকল্পে সাধারণ মহিলারা ৫০০ টাকা এবং তপসিলি জাতি ও উপজাতির মহিলারা মাসে ১০০০ টাকা পান।
ভাঙড় ২ বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায় বলেন, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার ও স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন করার সময়ে সফটওয়্যারের কোনও সমস্যায় লিঙ্গ-বিভ্রাট ঘটেছে। যে কারণে আখেরের নামের পাশে ফিমেল এবং মর্শিদার নামের পাশে মেল হয়ে গিয়েছে। সে কারণেই লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা ঢোকা বন্ধ হয়েছে। বিষয়টি আমার নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলা হয়েছে, সমস্যার সমাধান করার জন্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy