জ্বলেছে আলো। উচ্ছ্বাস বাসিন্দাদের। —নিজস্ব চিত্র।
এ আলো সবার ছিল না। হাতেগোনা কয়েকটি সচ্ছল পরিবার যে ভাবে বাড়িতে সৌরশক্তির আলো জ্বালাত, তা দেখে আক্ষেপ করতেন কার্যত অন্ধকারে ডুবে থাকা ঘোড়ামারা দ্বীপের বাকি বাসিন্দারা। তাঁদের ভরসা ছিল কেরোসিনের কুপি, হ্যারিকেন। স্বাধীনতার পরে, এই প্রথম সৌরশক্তির সাহায্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই প্রত্যন্ত দ্বীপে আলো জ্বলছে ঘরে-ঘরে।
‘স্বদেশ’ সিনেমার নায়ক শাহরুখ খান জলবিদ্যুতের সাহায্যে তাঁর ছেলেবেলার গ্রামে আলো এনেছিলেন। সেখানকার এক বৃদ্ধা প্রথম বার বৈদ্যুতিক আলো জ্বলে উঠতে দেখে অস্ফুট-আবেগে বলে উঠেছিলেন, ‘বিজলি’! সম্প্রতি তেমন বিস্ময়ে বিদ্যুতের আলো উপভোগ করছেন ঘোড়ামারার অণিমা রাউত। বলছেন, ‘‘এতগুলো বছর অন্ধকারে কেটেছে। এখন আলোর মুখ দেখলাম। বেঁচে থাকার নতুন আশা পেলাম।”
তিন দিক নদী এবং এক দিক সমুদ্র ঘেরা ঘোড়ামারায় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের অনুমোদনে এবং আইআইটি খড়গপুরের সহযোগিতায়। ঘোড়ামারা সৌরপ্রকল্প রূপায়ণ কমিটির চেয়ারম্যান, বিশেষজ্ঞ শান্তিপদ গণচৌধুরী বলেন, “বিচ্ছিন্ন ঘোড়ামারা দ্বীপে প্রচলিত শক্তি নিয়ে যাওয়া প্রযুক্তিগত ভাবে কঠিন। তাই এখানে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনা হয়। তা সফল হয়েছে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, দ্বীপের মিলন বিদ্যাপীঠের মাঠে প্রায় ২৫০ কিলোওয়াটের ‘সোলার পাওয়ার প্লান্ট’ তৈরি করা হয়েছে। ওড়িশা, অসম, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের চারটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চলে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের যে কাজ হয়, তার মধ্যে ঘোড়ামারার প্রকল্পটিই সবচেয়ে বড়। এ জন্য ব্যয় হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। আইআইটি খড়গপুরের তরফে আগামী পাঁচ বছর প্রকল্পটির দেখাশোনা করা হবে। বর্তমানে দ্বীপে ১,১২৫টি পরিবারের বাস। জনসংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। ৬৫০টি পরিবার সরাসরি প্লান্ট থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে। বাকি ৪৫০টি বাড়ির ছাদে ‘সোলার প্যানেল’ বসানো হয়েছে। প্রতিটি পরিবারের জন্য প্লান্ট থেকে প্রতিদিন ১০০ ওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ হয়েছে। এ জন্য মাসিক ৬০ টাকা করে দিতে হবে। প্রতিটি পরিবার বিকেল ৫টা থেকে সাত-আট ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাবে। আলো, টিভি, ফ্যান চলবে। মোবাইল চার্জ দেওয়া যাবে।
এলাকার পঞ্চায়েত অফিস, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, বাজারেও সৌরশক্তিচালিত আলো লাগানো হয়েছে। রাস্তাঘাট, জেটিতেও আলোর ব্যবস্থা হবে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র-সহ অন্য জরুরি পরিষেবায় ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ মিলবে। সৌরশক্তির সাহায্যে পানীয় জল তোলার ব্যবস্থাও করা হবে। কাকদ্বীপের লট ৮ ঘাট পর্যন্ত একটি সৌরশক্তিচালিত বোটও চালু হবে। স্থানীয় বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরার দাবি, ‘‘এ বার স্থানীয় অর্থনীতির হাল ফিরবে।’’
চুনপুরি গ্রামের বাসিন্দা স্মৃতিকণা মণ্ডল ঘোড়ামারা মিলন বিদ্যাপীঠ হাই স্কুল থেকে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। ছাত্রীটি বলে, ‘‘হ্যারিকেনের জন্য কেরোসিন তেল কিনলেও মেপে চালাতে হত। এখন মনে হচ্ছে, অন্ধকার থেকে আলোয় এলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy