Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সংযোগ এলেও গ্রামে চলছে হুকিং

মিটার থাকা সত্ত্বেও কেন হুকিং? জড়ো হওয়া মানুষের মধ্যে থেকে এ ওর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করেন প্রশ্ন শুনে।

জাল: এ ভাবেই হুকিংয়ের তার ছড়িয়ে সরিষার গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

জাল: এ ভাবেই হুকিংয়ের তার ছড়িয়ে সরিষার গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

দিলীপ নস্কর
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২৩
Share: Save:

সরিষা ভুসনার লস্করপাড়ায় ২০-৩০টি পরিবার। পাড়ায় বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য বছর আটেক আগে খুঁটি বসানো হয়েছিল। বিদ্যুৎ সংযোগ আসবে, এই আশায় মিটারের জন্য বিদ্যুৎ দফতরে আবেদন করেছিলেন মইদুল লস্কর, সালাম লস্করেরা। কিন্তু বছরের পর বছর কেটে গেলেও আজও তাঁদের পাড়া বিদ্যুৎ সংযোগ পায়নি। বাধ্য হয়ে প্রায় ২০০ মিটার লম্বা তার জুড়ে হুকিং করে সারা পাড়ায় সংযোগ নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে তাঁদের দাবি।

আবার বড় ভুসনা গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে বৈধ মিটারের বিদ্যুৎ সংযোগের পাশাপাশি দেখা গেল হুকিং করেও সংযোগ নেওয়া রয়েছে। মিটার থাকা সত্ত্বেও কেন হুকিং? জড়ো হওয়া মানুষের মধ্যে থেকে এ ওর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করেন প্রশ্ন শুনে।

মঙ্গলবার বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক কিশোর মৃত্যুর ঘটনার জেরে সরিষা বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির অফিসে, গাড়ি ভাঙচুর করা হয়, আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তাতে কারও নাম উল্লেখ না থাকলেও সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনার উল্লেখ আছে। তবে কেউ গ্রেফতার হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বুধবার এলাকায় গিয়ে জানা গেল বিদ্যুদয়নের বাস্তব চিত্রটা কেমন। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সরিষা ডিভিশনের অধীনে রয়েছে ডায়মন্ড হারবার ২, ফলতা ও মগরাহাট ১ ব্লকের একাংশ। বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। বছর কয়েক ধরে গ্রামীণ বিদ্যুদয়নের জন্য খুঁটি পোতা ও সংযোগের কাজ চলছে। দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রায় ৮০ শতাংশ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া গিয়েছে। বাকি গ্রামগুলিতে সংযোগ দেওয়ার কাজ চলছে। এ দিকে, অনেকেরই যেহেতু বাড়ির পাশ দিয়ে লম্বা বিদ্যুতের লাইন বেরিয়ে গিয়েছে, সেখান থেকে হুকিং করে সংযোগ নিয়ে টিভি-ফ্রিজ দেদার চলছে। মিটার সংযোগের আবেদনটুকু না করে অনেকে মোটরের সাহায্যে জরির কারখানা চালাচ্ছেন, পাম্প মেশিনে জল তোলা হচ্ছে, থেকে হিটারে রান্নাবান্না চলছে বলে বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির একটি সূত্রের দাবি।

দফতর থেকে যখন গ্রামে গিয়ে মাইকে দিনের পর দিন প্রচার করা হয়, বিদ্যুৎ চুরি আইনত অপরাধ, তখন তখন কিছুটা হুঁশ ফেরে বাসিন্দাদের।

কিন্তু তাঁদের সমস্যার কথাও উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। অনেকে জানালেন, মিটারের জন্য আবেদন করে সংযোগ পেতে পেতে বহু দিন কেটে যায়। আবার সংযোগ এলেও অনেকে হুকিংয়ের সুবিধা ছাড়তে পিছুপা হয় না। গ্রাহকদের একাংশের আবার অভিযোগ, কর্মীদের অতিরিক্ত টাকা না দিলে মিটার দিতে চায় না। এ ব্যাপারে বিভাগীয় তদন্ত হবে বলে জানান এক আধিকারিক।

২০১১ সালে হুকিং বিরোধী অভিযানে গিয়ে মগরাহাটে ভয়ানক কাণ্ড ঘটেছিল। পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধের মাঝে পড়ে এক পুলিশ কর্মী-সহ তিন জনের মৃত্যু হয়। রাজ্যে তোলপাড় চলে। ওই ঘটনার পর থেকে বিদ্যুৎ চুরি রুখতে দফতর রীতিমতো গা ঢিলে দিয়েছে বলে আধিকারিকদের একাংশও জানাচ্ছেন। গ্রামে ঢুকে বেআইনি সংযোগ কাটতে রীতিমতো ভয়ে ভয়ে থাকেন তাঁরা। পুলিশ নিয়ে গিয়েও বহু এলাকায় গ্রামবাসীদের বাধায় ফিরে আসতে হয়েছে কর্মীদের।

মগরাহাট-কাণ্ডের আগে পর্যন্ত বিদ্যুৎ চুরি রুখতে বণ্টন সংস্থা অভিযান চালাবে বলে প্রতি থানায় একটি করে গাড়ি বরাদ্দ করেই রাখা হত। সে সব বর্তমানে উঠে গিয়েছে। সংস্থার এক আধিকারিক জানালেন, অনেক সময়ে হুকিং রুখতে গেলে পুলিশকে পাশে পাওয়া যায় না। পুলিশ সঙ্গে গেলেও খুব একটা নিরাপদ বোধ করেন না কেউই। আর এই পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছেন কিছু গ্রামবাসী। জেলা বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার এক আধিকারিক জানান, চুরি রুখতে মাইকে প্রচার, লিফলেট বিলি হয়। মাত্র ৪৪৭ টাকার বিনিময়ে সংযোগ দেওয়া হবে, তা-ও গ্রাহক বোঝানো হয়েছে। তবে মিটার সরবরাহের সঙ্কটের কারণে আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে সংযোগ সব সময়ে দেওয়া যায় না বলেও জানান তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Hooking Electricity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE