ইদের প্রস্তুতি হিসাবে তৈরি হচ্ছে লাচ্চাও। ছবি: নির্মল বসু।
‘‘জাগো জাগো রোজাদার জাগো, সেহেরি হয়েছে, আঁখি মেলে দেখ, রমজানের এই রোজার শেষে আসবে খুশির ইদ।’’
আর ঘুম নয়। সময় হয়েছে সেহেরির। গলায় সুর তুলে হাঁক দিয়ে চলে যায় রাত জাগানিয়ার দল। গোটা রমজান মাস জুড়েই চোখে ঘুম নেই এই রাত জাগানিয়াদের। না হলে গ্রামবাসীদের রোজার জন্য তৈরি হতে বলবে কে? সূর্য ওঠার আগে সবাইকে ঘুম থেকে তুলে সেহেরি (রমজান মাসে সূর্য ওঠার আগেই যে খাবার খান মুসলিমরা) খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেওয়াই ওঁদের কাজ। তাই রমজান মাস পড়লেই কাজে নেমে পড়েন তাঁরা। সাধারণ মানুষের কাছে ওঁদের পরিচিতি ‘জাগনদার দল’। হাতে টর্চ, লাঠি, হ্যাচাক, হ্যারিকেন, ব্যাটারির আলো নিয়ে রোজার মাসে রাত জাগে তাঁরা।
বসিরহাট মহকুমায় কয়েক হাজার জাগানিয়ার দল আছে। সারা রাত ধরে গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাঁরা গাইতে থাকেন গজলের পংক্তি। আর সেই সুর শুনেই সেহেরির জন্য প্রস্তুত হতে থাকেন যাঁরা রোজা রাখেন তাঁরা। প্রচণ্ড গরম, বৃষ্টি কোনও কিছুই বিরত করতে পারে না এই রাত জাগানিয়াদের। বসিরহাটের মথুরাপুরে সেহেরি সমিতি, দেভোগ ইসলামিক সেহেরি পার্টি, ভেবিয়া সেহেরি সংহতি, তারাগুনিয়া আজানতলা সেহেররি কমিটি, হাড়োয়া ইসলামিক সেহেরি সমিতি, হাড়োয়া ইসলামিক সেহেরি সমিতি, তারাগুনিয়া-উত্তর দিয়াড়া আজানতলা সেহেরি কমিটি-সহ কয়েকটি দল প্রতি রমজান মাসে এই কাজ করে। প্রতিটি সংগঠন মনে করে এটি তাঁদের সামাজিক কর্তব্য।
জাগানিয়াদের পরণে থাকে লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, পাজামা এবং টুপি। মনসুর মোল্লা, আয়ুব আলি মোল্লারা বলেন, ‘‘আমাদের হাতে টর্চ, হ্যারিকেন থাকে। অনেকে ব্যাটারির আলো ব্যবহার করে। রাতের অন্ধকারে সাপ, কুকুরের থেকে বাঁচতে অনেকে লাঠি নেয়।’’
রাত জাগানিয়া দলের ঐতিহ্য অবশ্য অনেক পুরনো। আগে যখন সময় গ্রামাঞ্চলে সময় দেখার তেমন বন্দোবস্ত ছিল না, তখন থেকেই রোজাদারদের সেহেরি খাওয়ানোর জন্য রয়েছেন জাগানিয়ারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy