ভোগান্তি: দাউদপুরের বহু এলাকায় এখনও জমে জল। ছবি: নবেন্দু ঘোষ।
প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত বসিরহাট মহকুমার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। বৃষ্টির জলে ঘর, বাড়ি, পুকুর, মেছোভেড়ি ভেসে গিয়েছে। বড় ক্ষতি হয়েছে জমির ফসলের। মহকুমার হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, হাড়োয়া, হাসনাবাদ, মিনাখাঁর বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। রবিবার পর্যন্ত বহু জায়গায় জল নামেনি। তবে কমছে।
সন্দেশখালির আতাপুর, মণিপুর, দাউদপুরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, জলমগ্ন হয়ে পড়েছে রাস্তা, মেছোভেড়ি, বাড়ির উঠোন। যোগেশগঞ্জ এবং দাউদপুরের বেশ কিছু বাড়ির ভিতরে জল ঢুকেছে। মিনাখাঁর বামুনপুকুরের খ্রিস্টানপাড়া, চৈতল, চাঁপালির বেশ কিছু জায়গায় গ্রামের ভিতর হাঁটুসমান জল জমে গিয়েছে। এক হয়ে গিয়েছে পুকুর-মাঠ।
হিঙ্গলগঞ্জের আমবাড়িয়া, মামুদপুর, সাহেবখালির বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। এই সব এলাকার বেশ কিছু বাগদা, গলদা চিংড়ি চাষের পুকুর ডুবে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদের। গোটা মহকুমা জুড়েই মাছের ভেড়ি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ইয়াসের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির পরে ঘুরে দাঁড়াতে অনেকেই ঋণ নিয়ে মাছ, আনাজ চাষ করেছিলেন। বৃষ্টিতে ফের ক্ষতির মুখে পড়ায় ঋণশোধ কী ভাবে করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা।
ইয়াসের পরে এখনও বাড়ি মেরামত করে উঠতে পারেননি অনেকে। রাস্তায় ত্রিপল টাঙিয়ে কোনও রকমে দিন কাটাচ্ছেন। টানা বৃষ্টিতে সমস্যায় পড়েছেন তাঁরাও। ঘর হারিয়ে দীর্ঘদিন রাস্তায় ত্রিপলের নীচে দিন কাটানো হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দা কৃষ্ণা মণ্ডল, সুমিতা সর্দাররা জানালেন, ভারী বৃষ্টিতে ত্রিপল ছিঁড়ে জল ঢুকছে। নতুন ত্রিপল না পেলে দিন কাটানোই সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সমস্যা তৈরি হয়েছে সন্দেশখালি ২ ব্লকের দুর্গামণ্ডপ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ইয়াসের পর এলাকায় নদীর বাঁধ ভেঙে যে জল ঢুকেছিল তা সব বেরোতে পারেনি। তার মধ্যে টানা বর্ষণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বসিরহাট মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তের মতোই সন্দেশখালি থানার দুর্গামণ্ডপ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার একের পর এক বাড়ি, রাস্তা, পুকুর, চাষের জমি জলে ডুবে গিয়েছে। অতিবৃষ্টিতে গ্রামের মাটির বাড়ি, গোয়াল জলে ডুবে থেকে থেকে ভেঙে পড়তে শুরু করে।
এলাকার বিভিন্ন স্কুলে গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয় নিতে শুরু করেন গ্রামবাসীরা। এই পঞ্চায়েতের দাউদপুর এইচএল শিক্ষানিকেতন (উচ্চ মাধ্যমিক) স্কুলের চত্বরে বুধবার থেকে জল জমতে শুরু হয়। বৃহস্পতিবার থেকে জলস্তর বাড়তে থাকে। স্কুল ভবনের নীচের তলার ঘরগুলিতে জল ঢুকে যায়। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রদীপ সাহা বলেন, “কয়েকশো বই খাতা এবং কয়েক বস্তা মিড ডে মিলের চাল জলে ডুবে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আলমারিতে রাখা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। অনেক গ্রামবাসী গরু-ছাগল নিয়ে আমাদের স্কুলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।”
দুর্গামণ্ডপ পঞ্চায়েতের দাউদপুর, জ্যোতিষপুর, সুখদুয়ানি, গাববেড়িয়া মৌজার সবটাই জলমগ্ন। ফলে সব মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০ হেক্টর চাষের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর।
এ ছাড়া, এই পঞ্চায়েতে যত মাছ চাষ হয়েছিল সবটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গ্রামের ভিতরের বিভিন্ন রাস্তা জলে ডুবে থেকে এমন অবস্থা, দাউদপুর বাজার সংলগ্ন এলাকার একটি রাস্তায় দেখা গেল, ভ্যান জলে ডুবে যাওয়ায় অনেকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার রাস্তা হাঁটুসমান জল জমে থাকায় গ্যাসের সিলিন্ডার জলে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে আবার ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন বাড়ির আশপাশে জল জমে থাকায়।
দাউদপুর এলাকার বাসিন্দা সুস্মিতা পাহাড়ি সাহা, সুপর্ণা মণ্ডলরা জানান, তাঁদের বাড়ি অনেকটা উঁচু জায়গায় তবুও বাড়ির নীচের তলার ঘরে জল চলে এসেছে। চারিদিকে এখনও জল দাঁড়িয়ে।
এমন পরিস্থিত আগে কোনওদিনও দেখেননি বলে জানিয়েছেন তাঁরা। সুস্মিতা বলেন, “ইয়াসের পর নদী বাঁধ ভেঙে আশপাশের গ্রাম প্লাবিত হলেও আমাদের বাড়ির আশপাশে এ ভাবে জল জমেনি।” স্থানীয় বাসিন্দা গৌর মণ্ডল, বলেন, “আমাদের মাটির বাড়ি এখনও জলে ডুবে। বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। আমরা বাধ্য হয়ে বাড়ি ছেড়ে প্রতিবেশীর পাকা বাড়িতে উঠেছি শুক্রবার বিকেলে।”
দুর্গামণ্ডপ পঞ্চায়েতের প্রধান লক্ষ্মণ অধিকারী বলেন, “গোটা পঞ্চায়েতের চারিদিকে শুধুই জল আর জল। কয়েকশো মাটির বাড়ি এবং কিছু পাকা বাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক মানুষ বাড়ি ছেড়ে গরু-ছাগল নিয়ে বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে ঝড় বা বৃষ্টি না থাকায় এখন ক্রমশ অনেকে বাড়ি ফিরছেন।”
তিনি আরও বলেন, “অনেক গরু ছাগল গোয়াল চাপা পড়ে এবং বিভিন্ন ভাবে মারা গিয়েছে। চাষের জমিতে এ বার চাষ হবে না। গোটা বিষয় মহকুমাশাসক ও বিডিওকে লিখিত ভাবে আমরা জানাচ্ছি, যাতে সরকারি সাহায্য পান ক্ষতিগ্রস্তেরা।” প্রধান আরও জানান, দ্রুত জল বের করার জন্য আশপাশের বিভিন্ন স্লুইস গেট খুলে দেওয়া হয়েছে।
হিঙ্গলগঞ্জের বিডিও শাশ্বতপ্রকাশ লাহিড়ি বলেন, “নদীতে ভাটা হলে জমা জল নেমে যাবে। তবে কিছু মাছের ভেড়ি, আনাজ ও ধানের ক্ষতি হতে পারে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।”
সন্দেশখালি ১ বিডিও সুপ্রতিম আচার্য বলেন, “সমস্ত পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যদের সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। কোনও মানুষ বিপদে পড়লে, আমরা পাশে দাঁড়াব।” সন্দেশখালি ২ বিডিও অর্ণব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “প্রবল বৃষ্টিতে গোটা পঞ্চায়েত এলাকা জলে ডুবে গিয়েছে। চাষের খুব ক্ষতি হয়েছে। খোঁজ-খবর নিচ্ছি, কত বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। সব রিপোর্ট জেলা স্তরে পাঠানো হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, কী ভাবে মানুষকে সাহায্য করা যায়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy