টানা ২৮৬ দিন মহাকাশে কাটিয়ে দু’সপ্তাহ আগে পৃথিবীতে ফিরেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভশ্চর সুনীতা উইলিয়ামস। দীর্ঘ দিন মহাকাশ স্টেশনে থাকায় তাঁর শরীরে যে প্রভাব পড়েছিল, তা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। এক সাংবাদিক বৈঠকে সুনীতা জানিয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যেই ২ মাইল ছুটে নিজের শারীরিক ক্ষমতা পরখ করে খুশি হয়েছেন। অর্থাৎ মহাকাশ থেকে ফেরার পরে তাঁদের হাঁটাচলার যে সমস্যা হচ্ছিল, তার নিরাময় হচ্ছে। কিন্তু মহাকাশে থাকাকালীন সুস্বাদু খাওয়াদাওয়ার যে ভাবনাকে প্রায় ভুলতে হয়েছিল, পৃথিবীতে ফেরার পরে তার কোনও প্রতিকার হয়েছে কি? সুনীতা এর উত্তরে জানিয়েছেন, মহাকাশে থাকাকালীন তাঁর যে খাবার খেতে সবচেয়ে বেশি ইচ্ছে করত, পৃথিবীতে ফেরার পরেও সেই খাবারটিই প্রথম খেয়েছেন তিনি। সেটি কী খাবার? সুনীতার জবাব, ‘‘ফুড, দ্যাট ইজ় হোম...’’।
‘ফুড, দ্যাট ইজ় হোম’ অর্থাৎ ‘খাবার, যা বাড়ির মতোই’। এমন খাবার, যা খেলে বাড়িতে না থাকলেও মনে হবে বাড়িতেই আছেন। কারণ, সেই খাবারের সঙ্গে মিশে রয়েছে বাড়ির স্বাচ্ছন্দ্য আর বাড়ির আরাম। সুনীতা জানিয়েছেন, পৃথিবীতে ফেরার পরে তিনি যা খেয়েছেন, তার সঙ্গে তাঁর বাবার স্মৃতিও জড়িত। তিনি বলছেন, ‘‘আমার বাবা নিরামিষাশী ছিলেন। আমিও বাড়ি ফিরে নিরামিষ খাবারই খেয়েছি। সেই খাবার আমাকে বাবার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে।’’
‘ফুড, দ্যাট ইজ় হোম’ই কমফোর্ট ফুড
পৃথিবীতে ফেরার কিছুদিন আগেও সুনীতা জানিয়েছিলেন তিনি মায়ের হাতের ডাল মিস করছেন। তবে দু’সপ্তাহ আগে পৃথিবীতে ফেরার পরে সুনীতা প্রথম যে খাবারটি মুখে তুলেছেন, তা ডাল ভাত নয়। সেটি একটি চিজ় দেওয়া নিরামিষ গ্রিলড স্যান্ডউইচ। সুনীতা জানিয়েছেন, সেটিই তাকে নিমেষে বাড়ির স্বাচ্ছন্দ্যে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে।

সাধারণ ডাল-ভাত-আলুপোস্তও পারে বাড়ির আরাম দিতে। ছবি: পিকচারম্যানিয়া স্টুডিয়োজ়।
যে খাবার খেয়ে বাড়ির আরাম বোধ করার কথা বলেছেন, খাবারের দুনিয়ায় ওই ধরনের খাবারের একটা নাম আছে— ‘কমফোর্ট ফুড’। সুনীতার ‘কমফোর্ট ফুড’ যেমন নিরামিষ গ্রিলড স্যান্ডউইচ, তেমনই কারও ‘কমফোর্ট ফুড’ হতে পারে ডাল-ভাত-আলুপোস্ত কিংবা খিচুড়ি অথবা নুডল্স বা মায়ের হাতে তৈরি কেক— যা খুশি। কিন্তু খাবার কী করে বাড়ির আরাম আর স্বাচ্ছন্দ্য দিতে পারে? পুষ্টিবিদ বৈশালী বর্মা বলছেন, ‘‘কিছু কিছু খাবারের সঙ্গে আমাদের বিশেষ ধরনের আবেগ জড়িয়ে থাকে। সেই খাবারের স্বাদ কতটা ভাল, সেটা বিচার্য নয়, ওই খাবারের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আবেগই তার স্বাদে বাড়ির মতো নিরাপদ আশ্রয় জোগায়, বাড়ির স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসে। সেই অনুভূতিগুলোই একটি সাধারণ খাবারকে করে তোলে কমফোর্ট ফুড।’’
কমফোর্ট ফুড-এর বিশেষত্ব

সুনীতার কমফোর্ট ফুড চিজ় গ্রিলড স্যান্ডউইচ। ছবি: সংগৃহীত।
১। সুখস্মৃতি এবং নিশ্চিন্তির বোধ: সুনীতার ক্ষেত্রে গ্রিলড চিজ় স্যান্ডউইচ তাঁর বাবার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। হয়তো বাবা তাঁকে ওই স্যান্ডউইচ বানিয়ে দিতেন। কিংবা তাঁরা একসঙ্গে ওই খাবার খেতেন। মোট কথায়, আনন্দের স্মৃতি। নিরাপদ, নিশ্চিন্ত জীবনের স্মৃতি। পুষ্টিবিদ বলছেন, ‘‘আমরা যতই সারা দিন ছুটে বেড়াই, অধিকাংশই দিনের শেষে একটু নিশ্চিন্ত হতে চাই। কমফোর্ট ফুডের স্বাদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা স্মৃতি আমাদের অজান্তেই সেই নিশ্চিন্তির বোধকে জাগিয়ে দেয়।’’
২। ডোপামিন এবং মেজাজ: খারাপ মেজাজও বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে কমফোর্ট ফুড। পুষ্টিবিদ বলছেন, কমফোর্ট ফুড মস্তিষ্কে ডোপামিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, কমফোর্ট ফুড খাওয়ার সময় মস্তিষ্কের সেই অংশ সক্রিয় হয়, যা কোনও ভাল কাজ করার পরে পুরস্কার পেলেও হয়। বৈশালী বলছেন, ‘‘শুধু খাবারটি খেতে পারবেন, এই ভাবনাই ডোপামিনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দিতে পারে।’’