অমৃতা সিংহের (বাঁ দিকে) শোকার্ত মা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
কামারহাটি এলাকায় জ্বরের প্রকোপ চলছেই। শনিবার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় অমৃতা সিংহ (১৪) নামে এক কিশোরীর। কামারহাটি টেক্সম্যাকো সংস্থার শ্রমিক আবাসনের বাসিন্দা অমৃতা।
শ্রমিক আবাসনের পাশেই শ্রমিক কলোনিতে গত ১০ অক্টোবর ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে আরশিয়ানা পরভিন (১২) নামে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুই কিশোরীর মৃত্যুর পরে সেখানে ডেঙ্গির আতঙ্ক তাড়া করতে শুরু করেছে স্থানীয়দের।
নবম শ্রেণির ছাত্রী অমৃতা দিন কয়েক ধরেই জ্বরে ভুগছিল। তার পরিবারের সদস্যেরা জানান, শনিবার দুপুরে অমৃতাকে প্রথমে বেলঘরিয়ার সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতির কারণে শনিবার রাতেই ওই কিশোরীকে আর জি করে স্থানান্তরিত করতে হয়। রাত ৩টে নাগাদ সেখানে মারা যায় অমৃতা।
আরশিয়ানার ডেথ সার্টিফিকেটে ‘ডেঙ্গি হেমারেজিক শক’ বলে উল্লেখ করা ছিল। তবে অমৃতার মৃত্যুর কারণ ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা হয়েছে ‘এন এস-১, রিঅ্যাকটিভ ফিভার অ্যান্ড শক’। তবে তাঁর পরিবারের দাবি, অমৃতার মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে। তাঁদের অভিযোগ, অমৃতার চিকিৎসায় গাফিলতি হয়েছে। পরিবারের এক সদস্যের কথায়, ‘‘পাঁচ দিন আগেই জ্বর হয়েছিল অমৃতার। সাগর দত্ত হাসপাতালে নিয়ে আসি। কিন্তু জ্বরের ওষুধ দিয়ে অমৃতাকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।’’ পরিবারের দাবি, সেই সময়ই অমৃতাকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা করলে তাকে হয়তো বাঁচানো যেত।
এ দিন সেই ক্ষোভ থেকে অমৃতার পরিবার ও স্থানীয় মানুষ হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ দেখান। তবে সাগর দত্ত হাসপাতালের দাবি, তখন অমৃতার বেশি জ্বর ছিল না। তাই জ্বরের ওষুধ দিয়ে ওই কিশোরীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। অমৃতার পরিবার সূত্রে খবর, তার দাদাও জ্বরে আক্রান্ত।
কামারহাটি পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে টেক্সম্যাকো। ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গল ও মশার আঁতুড়ঘর তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে বলে একাধিকবার অভিযোগ করেছিল কামারহাটি পুরসভা। এমনকি আবাসন চত্বরে পুরসভার কর্মীরা তেল ও ব্লিচিং ছড়াতে গেলেও তাঁদের সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয় না বলেও দাবি করেছে পুরসভা। অন্য দিকে টেক্সম্যাকোর দাবি ছিল, এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব পুরসভার। এই চাপান-উতোর চলার মাত্র তিন দিনের মধ্যে দুই কিশোরীর মৃত্যু হল। দু’জনেই টেক্সম্যাকোর দুই কর্মীর সন্তান।
পরিস্থিতির উপরে নিয়ন্ত্রণ রাখতে এ দিন টেক্সম্যাকোর তরফে এলাকার জঙ্গল সাফাইয়ের কাজ শুরু হয়। ছড়ানো হয় ব্লিচিংও। মাত্র তিন দিনের মধ্যে দুই কিশোরীর মৃত্যুতে ওই এলাকার স্থানীয়েরা এ দিন চেঁচামেচি শুরু করে দেন। অমৃতার মৃত্যুর খবর পেয়ে কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) বিমল সাহা এবং স্থানীয় ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রূপালি সরকার পরিস্থিতির জন্য টেক্সম্যাকোর ওই তল্লাটকে দায়ী করেছেন। বিমলবাবু বলেন, ‘‘কামারহাটির অন্যান্য ওয়ার্ড প্রায় ডেঙ্গিমুক্ত। এই ওয়ার্ডে ওই কোম্পানির উদাসীনতার জন্যই বাড়ছে।’’ অন্য দিকে, রূপালিদেবীর কথায়, ‘‘ওই জায়গায় যে জ্বর হচ্ছে, তা অনেক দিন ধরেই বলছি। জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বা়ড়ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy