Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

সময় মতো ঘর ছাড়লে স্ত্রী প্রাণে বাঁচত, আফসোস করছেন পুলিন

হঠাৎ হাওয়ায় ঘরের ছাদ উড়ে যায়। ভেঙে পড়ে মাটির দেওয়াল।

ফ্রেজ়ারগঞ্জে তুবড়েছে মোবাইলের টাওয়ার। নিজস্ব চিত্র

ফ্রেজ়ারগঞ্জে তুবড়েছে মোবাইলের টাওয়ার। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু
বসিরহাট শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২০ ০৬:১৭
Share: Save:

আয়লায় ভেসে গিয়েছিল ঘর। ত্রাণ শিবিরে চলে যান কর্তা-গিন্নি। ফিরে এসে দেখেন, চুরি গিয়েছে ঘটিবাটি, সামান্য জমা টাকাটুকুও।

এ বার প্রশাসনের বহু অনুরোধ সত্ত্বেও তাই ঘর ছাড়েনি সন্দেশখালির সরবেড়িয়ার বাসিন্দা পুলিন সর্দার ও তাঁর স্ত্রী কুন্তী। কিন্তু বুধবার রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন বাড়তে থাকল হাওয়ার দাপট, পুলিনরা বুঝে যান, সিদ্ধান্তটা ঠিক হয়নি। ততক্ষণে অবশ্য অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। ঘরে বসে ভয়ে কাঁপছিলেন দম্পতি। বাইরে তখন প্রবল পরাক্রমে ফুঁসছে আমপান।

হঠাৎ হাওয়ায় ঘরের ছাদ উড়ে যায়। ভেঙে পড়ে মাটির দেওয়াল। চাপা পড়েন কুন্তী (৪২)। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে জানিয়ে দেন। পুলিনের আফসোস, প্রশাসনের কথা মতো ত্রাণ শিবিরে গেলে হয় তো প্রাণ বেঁচে যেত স্ত্রীর।

বসিরহাট মহকুমা জুড়ে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব বৃহস্পতিবার সন্ধে পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। কারণ, অধিকাংশ জায়গায় মোবাইলের সংযোগ নেই। ইন্টারনেট কাজ করছে না। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন প্রায় অধিকাংশ এলাকা। প্রাথমিক পাওয়া খবরের ভিত্তিতে মহকুমা প্রশাসন জানাচ্ছে, গাছ চাপা পড়ে, দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১০ জনের। তাঁদেরই তালিকায় আছেন কুন্তী। অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) শঙ্করপ্রসাদ পাল বলেন, ‘‘মোবাইলের টাওয়ার না পাওয়ায় সব খবর সময় মতো পৌঁছচ্ছে না।’’

বসিরহাটের তিনটি পুরসভা এবং দশটি ব্লকেই বড় রকম ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেশ কয়েকটি জায়গায় নদী বাঁধ ভেঙেছে। জল উপচেও প্লাবিত হয়েছে এলাকা। বেশ কয়েক হাজার মাটির বাড়ি, গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়েছে। সাড়ে চারশো ত্রাণ শিবিরে দুর্গত মানুষকে রেখে খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

আমপানের দাপটে বিপর্যস্ত মিনাখাঁ, সন্দেশখালি। মিনাখাঁয় বিদ্যাধরী নদীর প্রায় এগারোটি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে যায়। উচিলদহ, গড়কুয়াটি, ভাঙাপাড়া-সহ প্রায় ১৫টি গ্রামে জল ঢুকেছে। এলাকায় প্রায় ৯০০টি কাঁচা বাড়ি ঝড়ের দাপটে ভেঙে গিয়েছে। খেতের ফসল, পুকুরের মাছ নষ্ট হয়েছে বিস্তর।

উচিলদহ গ্রামে স্থানীয় বাসিন্দারা নদী বাঁধ সারানোর কাজে হাত লাগান। সন্দেশখালি ব্লকে অন্তত ১৫টি জায়গায় নদী উপচে বা বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকেছে। কাটাখালি, দ্বারিকজঙ্গল এলাকাতেও বাঁধ ভেঙেছে।

এ দিন সকালে বেরিয়ে দেখা গেল, পথঘাটে সর্বত্র ধ্বংসের চিহ্ন। সাইনবোর্ড, ব্যানার, টিন, অ্যাসবেস্টসের ছাউনি ভেঙে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। বসিরহাট পুলিশ সুপারের দফতরেও জল ঢুকেছে। সকাল থেকে দেখা গেল, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য বিপর্যয় দফতরের কর্মীরা রাস্তার উপরে পড়ে থাকা গাছ, বিদ্যুতের পোল সরিয়ে ফেলতে ব্যস্ত।

রাতভর বসিরহাট মহকুমাশাসকের দফতরে জেগেছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মন্ত্রী বেরিয়ে পড়েন বসিরহাটের বিভিন্ন রাস্তায়। বসিরহাটের বিভিন্ন রাস্তা, টাকি রোড, হাসনাবাদ রোড, বাদুড়িয়া রোড, হিঙ্গলগঞ্জ রোডের উপর থেকে বিদ্যুতের খুঁটি এবং গাছ সরিয়ে ফেলার কাজ চলছে জোরকদমে।

বহু মানুষকে আগে ভাগে সরিয়ে ফেলায় প্রাণহানি আয়লার তুলনায় অনেক কম হয়েছে বলে মনে করছেন প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ। জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘‘প্রশাসনের সকলের মিলিত চেষ্টায় আমপানের মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। এখন আমাদের কাজ হবে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত রাস্তাঘাট সারিয়ে তোলা। যে সব বাড়ি ভেঙেছে, তা নতুন করে গড়া। দুর্গত মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছনো।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy