Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Barrackpore Jewellery Shop Robbery

ব্যারাকপুরে সোনার দোকানে যুবক খুনে যাবজ্জীবন সাজা পাঁচ জনের

রায়দানের সময়ে বিচারক কেন ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন সাজা দিলেন, তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাও দেন।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৪২
Share: Save:

ভরসন্ধ্যায় ব্যারাকপুর স্টেশন সংলগ্ন আনন্দপুরী এলাকায় সোনার দোকানের মধ্যে, বাবার সামনেই ছেলেকে খুন করে গয়না লুট করে পালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। দোকানের এক কর্মচারীকে নিয়ে জখম বাবা ওই অবস্থাতেই পাঁজাকোলা করে ছেলের মৃতদেহ নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন। এই ঘটনা গত বছর ২৪ মে-র। ঘটনার ১৫ মাস পরে, গত শনিবার ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতের অতিরিক্ত দায়রা বিচারক (তৃতীয়) অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন পাঁচ জনকেই। সরকার নিযুক্ত আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় ঘটনার নৃশংসতা ও অপরাধীদের অতীত কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরেছিলেন আদালতে। একাধিক খুন, ধর্ষণ, লুটের ঘটনায় ধরা পড়া, জেল খাটা এবং জেল পালানোর তথ্যপ্রমাণ দিয়ে ফাঁসির আর্জি জানিয়েছিলেন তিনি। এক সপ্তাহ পরে, শুক্রবার সকালে ওই পাঁচ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা হল। সেই সঙ্গে ২০ হাজার টাকা জরিমানা।

নিহত যুবক নীলাদ্রি সিংহের (২৬) দেহ ময়না তদন্তের দিনই ব্যারাকপুরের নগরপাল অলোক রাজোরিয়া মৃতের বাবা, স্বর্ণ ব্যবসায়ী নীলরতন সিংহকে আশ্বস্ত করেছিলেন, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন। উত্তমকুমার উপাধ্যায়, শফি খান, জামসেদ আনসারি, রাজবীর সিং এবং আসিফ খান ওরফে আশিস কুমার রায় নামে পাঁচ কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে পুলিশ গ্রেফতারও করেছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, এর মধ্যে উত্তমকুমার গুলি করেছিল নীলাদ্রিকে। সোনার দোকানে ফেলে যাওয়া ব্যাগের মধ্যে থাকা ব্লুটুথের ডিভাইস মিলিয়ে, সিসি ক্যামেরা ও মোটরবাইকের নম্বর প্লেটের সূত্র
ধরে এই পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।

রায়দানের সময়ে বিচারক কেন ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন সাজা দিলেন, তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাও দেন। যদিও সেই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন বলে জানিয়ে সরকার নিযুক্ত আইনজীবী বলেন, ‘‘ব্লুটুথ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৯০ দিনের মাথায় যে ভাবে ওদের ধরা হল, তা দেশের ইতিহাসে নজির হয়ে থাকবে। শুধুমাত্র নীলাদ্রিকে খুন নয়, প্রতিটি খুনই এরা নির্মম ভাবে করেছে।’’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে দোষীরা বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নয়, বরং জেল থেকে বেরোতে পারলে তদন্তের সঙ্গে জড়িতদের সরাসরি দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে তারা। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সরকারের পক্ষ থেকেই উচ্চ আদালতে এই মামলায় দোষীদের সর্বোচ্চ সাজার আবেদন জানাব এ বার।’’

এই রায়ে হতাশ নীলরতনও। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘নিজের দোকানে একমাত্র সন্তানের মৃতদেহ লুটিয়ে পড়ল চোখের নিমেষে। দোকান লুট হল। পনেরোটা মাস সেই দোকানেই প্রতিদিন তালা খুলে বসি আর অপেক্ষা করি ছেলেকে যারা মারল, তারা শেষ হবে। পুলিশের ভূমিকা যথেষ্ট ভাল ছিল, তাই আশায় বুক বেঁধেছিলাম যে দোষীরা চরম শাস্তি পাবে। কিন্তু এরা যে ধরনের দুষ্কৃতী, এদের যে জেল ৎআটকে রাখতে পারবে না, তা অঙ্গভঙ্গীতেই বুঝিয়ে দিচ্ছে। কী করব বুঝতে পারছি না। তরতাজা ছেলেটাকে খুনের বিচার চেয়ে আরও দীর্ঘ লড়াই করতে হবে।’’

এ দিন বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে নগরপাল জানান, ‘‘ধৃতদের মধ্যে রাজবীর হাবেভাবে আদালতের মধ্যেই দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। আসিফ এর আগে এক ইতিহাসের শিক্ষিকাকে নৃশংস ভাবে খুন করে নাম ভাঁড়িয়ে গা ঢাকা দিয়েছিল। শফি জেল পালানো আসামী। ব্যারাকপুরের ঘটনার পরে এরা পঞ্জাবে গিয়ে একই ভাবে সোনার দোকানে লুট করেছে। এত কিছুর পরেও সর্বোচ্চ সাজা না হওয়ায় আমরা উচ্চ আদালতে বিচারপ্রার্থী
হব বলে ঠিক করেছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Barrackpore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy