সতর্কতা: স্বাস্থ্য পরীক্ষা গোসাবার গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য এখনও নিরাপদ রয়েছে সুন্দরবন এলাকা। তবে নিজেকে কত দিন এই ভাবে নিরাপদ রাখতে পারবে সুন্দরবন, তা নিয়ে প্রশ্নও আছে।
ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রায় চার হাজার বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে সুন্দরবন। মোট ১০২টি দ্বীপ রয়েছে সেখানে। এরমধ্যে ৫৪টি দ্বীপে মানুষের বাস। উত্তর ২৪ পরগনার ৬টি ব্লক ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ১৩টি ব্লক মিলিয়ে সরকারি হিসেব অনুযায়ী প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ বাস করেন সুন্দরবনে। করোনা সারা বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে থাবা বসালেও সুন্দরবন এলাকায় এখনও পর্যন্ত তার প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, মূলত মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সুন্দরবনের গোসাবা, সাতজেলিয়া, লাহিড়িপুর, ছোট মোল্লাখালির মত দ্বীপগুলির সরাসরি যোগাযোগ না থাকার কারণেই এখনও পর্যন্ত করোনার প্রকোপ এই সমস্ত প্রত্যন্ত দ্বীপাঞ্চলে পড়েনি।
সম্প্রতি রাষ্ট্রসঙ্ঘের একটি রিপোর্ট থেকে জানা গিয়েছে, বিশ্বের প্রায় ১৬টি দেশে কোনও ভাবেই থাবা বসায়নি করোনা। এমনকী, এই সমস্ত দেশে করোনা সংক্রমণের ভয়ও নেই বললে চলে। কারণ, কিরিবাতি, লেসথো, মার্শাল আইল্যান্ড, মাইক্রোশিয়া, পালাউ, সামোয়া আইল্যান্ড, টোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপি, সলোমোন আইল্যান্ডের মতো দেশে পর্যটক বা বিদেশি নাগরিক প্রায় আসেন না বললেই চলে। মূলত এই দেশগুলি একটি বা কয়েকটি দ্বীপের সমষ্টি নিয়ে গঠিত। তা ছাড়া, বিশ্বজুড়ে করোনা গ্রাসের খবর ছড়াতেই এই সমস্ত দেশগুলি তাদের সঙ্গে প্রতিবেশী সমস্ত দেশের বিমান ও নৌ যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে।
লকডাউনে একমাত্র জরুরি পরিষেবা ছাড়া সুন্দরবন এলাকার খেয়া যোগাযোগ একেবারেই বন্ধ। এর ফলে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এই ব্লকের মানুষের যোগাযোগ সে ভাবে নেই বললেই চলে।
গোসাবা ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকে এ বিষয়ে যথেষ্ট কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে। যাতে কোনও ভাবেই মানুষজন এই ব্লকের কোথাও বাইরে থেকে ঢুকে পড়তে না পারেন, সে জন্য সমস্ত খেয়াঘাটগুলিতে সিভিক ভলান্টিয়ার, পুলিশকর্মী ও স্বাস্থ্যকর্মীরা নজরদারি চালাচ্ছেন। জরুরি প্রয়োজনেও যদি কেউ খেয়া পারাপার করেন, তাঁদের নাম নথিভুক্তকরণের পাশাপাশি তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে প্রশাসনের চোখে ফাঁকি দিয়ে রাতের অন্ধকারে কিছু মানুষজন এই ব্লকের বিভিন্ন প্রান্তে ঢুকে পড়ছেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। গোসাবা এলাকার বহু মানুষ দক্ষিণ শহরতলির গড়িয়া, সোনারপুর, বারুইপুর এলাকায় থাকেন। সেই সমস্ত এলাকায় করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ায় রাতের অন্ধকারে ওই এলাকা থেকে মানুষজন গোসাবায় নিজেদের দেশের বাড়িতে ফিরে আসছেন।
সেই কারণে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন। যদিও এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে গোসাবা ব্লক প্রশাসন। প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এই ব্লককে করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে আমরা দিনরাত এক করে লড়াই করছি। এখনও পর্যন্ত এই এলাকায় কোনও সংক্রমণের খবর নেই।”
উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকাও এখনও সংক্রমণমুক্ত রাখতে পেরেছে নিজেকে।
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের জনসংখ্যা প্রায় ২ লক্ষ। সন্দেশখালি ১ ব্লকের জনসংখ্যা দেড় লক্ষের বেশি। সন্দেশখালি ২ নম্বর ব্লকের জনসংখ্যাও প্রায় কাছাকাছি। সুন্দরবনের এই দ্বীপ এলাকায় করোনা আক্রান্তের এখনও কোনও খবর নেই। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে দেখতে গেলে এই ব্লকগুলি মূলত এক একটা দ্বীপ। শহরের সঙ্গে যোগাযোগ খুবই কম। বাইরের মানুষের আসা-যাওয়া এই এলাকায় তেমন হয় না বললেই চলে।
লকডাউন হওয়ার পর থেকে শহরের সঙ্গে যোগাযোগ কার্যত বন্ধ। তবে মূলত এই তিনটি ব্লকের অনেক মানুষ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এবং বেশিরভাগ বাইরে রাজ্যে কাজ করেন। যেমন হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের হেমনগর থানা এলাকার সামশেরনগর, কালীতলা, হেমনগর একদমই সুন্দরবনের জঙ্গল-লাগোয়া গ্রাম। এই সব গ্রাম-সহ যোগেশগঞ্জ, পারঘুমটি এলাকা থেকে বহু মানুষ বাইরের রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। লকডাউনের আগে আগেই হেমনগর থানা এলাকায় কমপক্ষে ২০০-৩০০ মানুষ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঢুকেছেন।
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বিভিন্ন প্রান্তে বাইরে থেকে এসেছেন হাজারখানেক মানুষ। অন্য দিকে, সন্দেশখালি ২ ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে লকডাউনের আগে আগেই সরকারি ভাবে এসেছেন দেড়শো মানুষ। সন্দেশখালি ১ ব্লকেও শতাধিক মানুষ এসেছেন লকডাউনের আগে। তাই করোনাভাইরাস এই সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিলই। তেমনটা অবশ্য এখনও হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy