করোনা সংক্রমণ বাড়ছে নানা জায়গায়। কিন্তু মাস্ক ভুলেছে জনতা। গাদাগাদি ভিড় হাটে-বাজারে। শুক্রবার হাবড়া বাজারে ছবিটি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি।
বিভিন্ন দেশে ফের ছড়াচ্ছে করোনা। ভারতে এখনও সংক্রমণ না বাড়লেও, করোনা নিয়ে রাজ্যগুলিকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্র। সেই মতো প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজ্যগুলি। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তারা বলছেন, আবার মানুষকে সচেতন হতে হবে।
শুক্রবার দুই ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অবশ্য দেখা গেল সচেতনতা কার্যত শিকেয় উঠেছে। হাতেগোনা কিছু মানুষ মাস্ক পরছেন। দূরত্ববিধির বালাই নেই।
এ দিন বনগাঁ শহরে মাস্ক পরে বেরিয়েছিলেন এক তরুণী। তাঁর কথায়, “কোভিড না থাকলেও আমি মাস্ক পরা বন্ধ করিনি। মাস্ক পরলে রাস্তার ধুলোবালি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়।” বারাসতের বাসিন্দা নন্দিতা ভট্টাচার্য মাস্ক পরে বেরিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “সর্দি-কাশি হয়েছে। তাই মাস্ক পরে বেরিয়েছি।”
কিন্তু কোভিড সতর্কতার জন্য মাস্ক পরেছেন, এমন মানুষ কার্যত খুঁজে পাওয়া গেল না। মাস্ক পরার কথা বললেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন অনেকে। একজনের কথায়, “ছাড়ুন তো। মাস্ক-ফাস্কের কথা বলবেন না। সরকারও বলেনি। অযথা আতঙ্ক ছড়াবেন না।”
বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, “সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। একবার ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত গতিতে বাড়বে। তাই শুরুতেই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তা হলে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে। বাড়ির প্রবীণ সদস্যদের দিকে নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে যাঁরা ক্যানসার বা কিডনির অসুখে ভুগছেন। আমরা দেখেছি, প্রবীণ মানুষেরা পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে আক্রান্ত হন। তাই বাড়ির সদস্যদের উচিত বাইরে থেকে ফিরে হাত, পা, শরীর স্যানিটাইজ় করে প্রবীণ সদস্যদের সংস্পর্শে যাওয়া।”
জেলা স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, সংক্রমণ বাড়লে তা মোকাবিলার জন্য তৈরিই আছে স্বাস্থ্য দফতর। দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার কোভিড হাসপাতালগুলি অনেকদিন আগেই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেগুলি সাধারণ হাসপাতালে পরিণত হয়েছে। তবে এক কর্তা জানান, হাসপাতালগুলিতে করোনা রোগী ভর্তির পরিকাঠামো, শয্যা সব তৈরি আছে। প্রয়োজন হলে চালু করে দেওয়া হবে।
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে, করোনা রোগীদের জন্য ২০টি শয্যা রাখা আছে। ওয়ার্ডটি আপাতত বন্ধ আছে। সুপার কৌশিক ঢল বলেন, “অনেকদিন হল করোনা রোগী ভর্তি হননি। ওয়ার্ডটি বন্ধ আছে। প্রয়োজন হলে চালু করে দেওয়া হবে।”
হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালেও অনেক দিন করোনা রোগী ভর্তি হননি। সুপার বিবেকানন্দ বিশ্বাস বলেন, “প্রয়োজন হলে শয্যা চালু করা হবে।”
বারাসত জেলা হাসপাতালে শেষ করোনা রোগী ভর্তি হয়েছিলেন প্রায় ছমাস আগে। সুপার বলেন, “করোনা রোগীদের জন্য ৫০টি শয্যা তৈরি রাখা আছে। এখন করোনা রোগী নেই বলে সাধারণ রোগী সেখানে আছেন। পরিস্থিতি তৈরি হলে করোনা রোগীদের জন্য চালু করে দেওয়া যাবে।”
মহকুমা হাসপাতাল, গ্রামীণ হাসপাতাল বা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে এখন র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা হচ্ছে। আরটিপিসিআর পরীক্ষার সংখ্যা খুবই কম। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, এখন কোনও শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা বা জ্বর থাকা রোগী এলে তাঁর করোনা পরীক্ষা করার নির্দেশ এসেছে।
ডায়মন্ড হারবার ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ১০০ শয্যার কোভিড ভবন রয়েছে। পাথরপ্রতিমা ও কুলপিতে দু’টি ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল রয়েছে। প্রয়োজনে সেগুলি চালু কর হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। ডায়মন্ড হারবার স্বাস্থ্যজেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়ন্ত সুকুল বলেন, “করোনা নিয়ে স্বাস্থ্যভবনের নির্দেশ মতো আমরা তৈরি আছি।”
ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রের খবর, যে সমস্ত রোগীদের অস্ত্রোপচার হয়, তাঁদের করোনা পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। তা ছাড়া, আর কারও পরীক্ষা হচ্ছে না। বর্তমানে রোজ প্রায় দেড়শোজনের পরীক্ষা হচ্ছে। তবে পজ়িটিভের সংখ্যা খুবই কম।
দুই জেলার বেশিরভাগ হাসপাতালে বুস্টার ডোজ় দেওয়া হয়েছে। তবে নতুন করে লোকজন বুস্টার নিতে আসছেন না বলেই জানা গেল। বুস্টার ডোজ় নেওয়ার ব্যাপারে সচেতনতা কর্মসূচি প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ায় অনেক মানুষই আর বুস্টার ডোজ় নেননি। মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে আগ্রহ কমে গিয়েছিল। চিকিৎসকদের পরামর্শ, করোনা পরিস্থিতি যেমনই থাকুক, বুস্টার ডোজ় নিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy