—প্রতীকী চিত্র।
রাজ্যের কিছু এলাকার মতো আধার কার্ড বাতিলের চিঠি এসে পৌঁছেছে মতুয়া প্রধান বনগাঁতেও। মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। তৃণমূলের তরফে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, মতুয়াদের নাগরিকত্ব কেড়ে নিতেই তাঁদের আধার নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে। বিজেপির তরফে পাল্টা আশ্বাস দেওয়া হলেও ভয় কাটছে না মতুয়াদের।
রবিবারই বীরভূমের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আধার নিষ্ক্রিয় করার অভিযোগ তুলেছিলেন। বনগাঁ মহকুমায় আধার কার্ড নিষ্ক্রিয় করার চিঠি ইতিমধ্যেই অনেকে পেয়েছেন। দৈনন্দিন নানা কাজে তাঁদের অসুবিধে হচ্ছে বলে দাবি।
বনগাঁ শহরের দেবগড়ের বাসিন্দা, কৃষ্ণা বালা নামে এক মতুয়াভক্ত আধার বাতিলের চিঠি পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘স্বামী দিনমজুরি করেন। ব্যাঙ্কে সামান্য কিছু টাকা জমানো আছে। চিঠি আসার পর থেকে সেই টাকা তুলতে পারছি না। খুবই আতঙ্কে রয়েছি।’’ সুবর্ণা টিকাদার নামে আর এক মতুয়াভক্ত বলেন, ‘‘পরিবারে পাঁচ সদস্যের মধ্যে তিন জনের আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ার চিঠি এসেছে। রেশন তুলতে পারছি না, গ্যাস ‘বুক’ করতে পারছি না।’’ তাঁর উদ্বেগ, ‘‘শুনছি আধার কার্ড বাতিল হওয়া মানে এ দেশের নাগরিকত্ব চলে যাওয়া। খুবই আতঙ্কে রয়েছি।’’
আধার নিষ্ক্রিয় হওয়ায় অনুদান বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে জানালেন বীথিকা মণ্ডল নামে এক মহিলা। তাঁর কথায়, ‘‘ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছে। লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আমার বৌমা অন্তঃসত্ত্বা। তাঁরও কার্ড বাতিল হয়ে গিয়েছে।’’ কেন্দ্রকে দুষে তাঁর ক্ষোভ, ‘‘কেন্দ্র সরকারের এই সিদ্ধান্তে আমরা কী করে বাঁচব? আমরা ভোট দিয়ে সাংসদ বিধায়ক করলাম! এখন কী আমাদের আত্মহত্যা করতে হবে?’’
বনগাঁ লোকসভা এলাকায় বহু মতুয়া সমাজের মানুষের বাস। লোকসভা ভোটের আগে এই ঘটনায় বিজেপি নেতৃত্ব বিব্রত। জনমানসের এই ক্ষোভ-উদ্বেগকে হাতিয়ার করে বিজেপিকে নিশানা করেছে তৃণমূল। বনগাঁর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শম্পা মোহন্ত বলেন, ‘‘আমার ওয়ার্ড মতুয়া প্রধান। অনেকেই আধার বাতিলের চিঠি পেয়েছেন। আমার কাছে ক্রমাগত তাঁরা আসছেন। কেন্দ্র তো এনআরসি চালু করতে চাইছে। আমরা শান্তনু ঠাকুরের পদত্যাগ দাবি করছি।’’
বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনুর পদত্যাগ দাবি করেছেন মতুয়াদের একাংশও। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে সোমবার জরুরি বৈঠক করা হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মহাসঙ্ঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা বনগাঁর প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুরের অভিযোগ, ‘‘আধার নিষ্ক্রিয় করার মাধ্যমে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ঘুরিয়ে এনআরসি চালু করার পরিকল্পনা করেছে। বেনাগরিক করার চক্রান্ত করা হচ্ছে মতুয়াদের। মতুয়ারা ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলতে পারছেন না, জমি কেনাবেচা করতে পারছেন না।"
মতুয়াদের একাংশের দাবি, তাঁরা নাগরিকত্বের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করছেন। কেন্দ্র সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সিএএ চালু করার। কিন্তু এখন কেন্দ্র সরকার উল্টে তাঁদের আধার কার্ড বাতিল করছে। মমতার হুঁশিয়ারি, রাজ্য জুড়ে মতুয়ারা আধার নিষ্ক্রিয় করার চক্রান্তের প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু করছেন। রাজ্যপাল-রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। এরপরও এই চক্রান্ত বন্ধ না হলে মতুয়া ঠাকুরবাড়িতে আমরণ অনশন শুরু করা হবে।
যদিও বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনুর দাবি, ‘‘যাঁদের কাছে আধার বাতিলের চিঠি গিয়েছে, তাঁদের চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এটা একটা প্রযুক্তিগত সমস্যা ছিল। কারও আধার বাতিল হবে না। যাঁদের হয়েছে, তাঁদের কার্ডও আবার সক্রিয় হয়ে যাবে। আমি ই-মেল, হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিয়েছি। কেউ মনে করলে ঠাকুরনগরে আমার অফিসে যোগাযোগ করতে পারবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy