বাংলা আবাস প্লাসের তালিকা থেকে বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠল রায়দিঘির নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েত এলাকায়। ‘রাজনৈতিক কারণেই’ এই পঞ্চায়েতের ১১০ জন বিজেপি কর্মী-সমর্থকের নাম চূড়ান্ত তালিকায় থাকলেও আটকে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। কেন এই উপভোক্তাদের নাম তালিকা থেকে বাদ গেল, সে বিষয়ে তথ্য জানার অধিকার আইনে (আরটিআই) জানতে চেয়েছেন এক বিজেপি কর্মী। মথুরাপুর ২ বিডিও নাজির হোসেন জানিয়েছেন, সমীক্ষা করেই তালিকা তৈরি হয়েছে। কোনও অভিযোগ থাকলে জানাতে পারেন। প্রকৃত প্রাপকেরা আবাসের টাকা অবশ্যই পাবেন।
নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের আসন ২২। এর মধ্যে তৃণমূল ১২, বিজেপি ৯টি আসন পেয়েছিল। বেছে বেছে বিজেপির জেতা বুথগুলি থেকে দলের কর্মী-সমর্থকদের নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে বলেও অভিযোগ ‘বঞ্চিতদের’।
স্থানীয় বাসিন্দা জয়ন্তী হালদার বলেন, ‘‘মাটির বাড়িতে থাকি। ঝড়ের সময় ভেঙেও গিয়েছে। কটালে নদীর জল বাড়ির কাছে উঠে আসে। তখন অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়। আমাদের নাম আবাস তালিকায় ছিল। কিন্তু এখন শুনছি, বাদ দিয়েছে। আমরা গরিব মানুষ। মাছ-কাঁকড়া ধরি। বিজেপিকে ভোট দিয়েছি বলে আমাদের নাম কেটে দিয়েছে তৃণমূল। অথচ, পাকা বাড়ি আছে, এমন তৃণমূল কর্মীও ঘর পাচ্ছেন।’’ রামপ্রসাদ নস্কর জানালেন, আবাস প্লাসের চূড়ান্ত তালিকায় তাঁর নাম ছিল। দরমার ঘরে থাকেন। কিন্তু এখন ঘর দেওয়া হচ্ছে না। তিনি জানান, বেশ কয়েক বার পঞ্চায়েত, বিডিওকে জানিয়েছেন। ‘দিদিকে বলো’ হেল্পলাইন নম্বরেও অভিযোগ জানিয়েছেন। তদন্তকারীরা এসেছিলেন। কিন্তু সুরাহা মেলেনি।
বিষয়টি নিয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে সরব হয়ে স্থানীয় বিজেপি কর্মী দিপু বর বলেন, ‘‘প্রাপক তালিকায় নাম রয়েছে এমন ১১০ জন যোগ্য ব্যক্তির নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই বিজেপি কর্মী-সমর্থক। প্রত্যেকেই দুঃস্থ, সহায়-সম্বলহীন। কারও কারও অ্যাকাউন্টে টাকাও ঢুকে গিয়েছিল। অনেকে কাজ শুরু করে দেন। কিন্তু তারপরে তৃণমূলের মদতে এই সব গরির মানুষের টাকা আটকে রাখা হচ্ছে।’’
নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান জগদ্ধাত্রী হালদার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি পাল্টা ‘দোষ’ চাপিয়েছেন সরকারি সমীক্ষক দলের উপরে। জগদ্ধাত্রী বলেন, ‘‘বিরোধীরা পুরোপুরি মিথ্যাচার করছে। আসলে, যাঁরা সমীক্ষা করতে এসেছিলেন, তাঁরা গ্রামের সকলকে চেনেন না। হয় তো অনেকে পাকা বাড়ি না দেখিয়ে সমীক্ষক দলের সামনে মাটির বাড়ি দেখিয়েছেন। তাই তাঁদের হয় তো কিছুটা ভুল হয়েছিল। কিন্তু আমরা অভিযোগ পাওয়ার পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। আমি চাই, যদি কেউ সত্যি ঘর পাওয়ার যোগ্য হন, অবশ্যই তিনি যেন তা পান।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)