Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
library

Library: খুদেদের বইমুখো করছে কুলপির কমিউনিটি লাইব্রেরি ‘বোধিপাঠ’

অগত্যা একার উদ্যোগেই গ্রামের এক প্রতিবেশীর বাড়িতে কয়েকটি মাত্র বই রেখে ছোট একটি লাইব্রেরি চালু করেছিলেন বছর তেইশের সৌম্যদীপ্ত বসু।

হরেক কিসিমের বই পড়তে ভিড় জমাচ্ছে খুদে পড়ুয়ারা।

হরেক কিসিমের বই পড়তে ভিড় জমাচ্ছে খুদে পড়ুয়ারা। —নিজস্ব চিত্র।

সৈকত ঘোষ
কুলপি শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২১ ২৩:২০
Share: Save:

লকডাউনে টানা বন্ধ স্কুল। ফলে স্কুলের শিশুদের মধ্যে নিয়মমাফিক পড়াশোনার অভ্যাস কমেছে। শিশুদের বইমুখো করতে তাই অভিনব প্রচেষ্টা দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির এক বাসিন্দার। এলাকার শিশুদের জন্য একেবারে নিজের উদ্যোগেই গড়ে তুলেছেন কমিউনিটি লাইব্রেরি— ‘বোধিপাঠ’। এ উদ্যোগে সাড়াও পড়ছে ধীরে ধীরে। ‘বোধিপাঠ’-এ গিয়ে হরেক কিসিমের বই পড়তে ভিড় জমাচ্ছে খুদে পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও বাহবা কুড়োচ্ছে এ ভাবনা।

‘বোধিপাঠ’-এর ভাবনার জন্মদাতা কুলপির দেরিয়ার বাসিন্দা বছর তেইশের সৌম্যদীপ্ত বসু। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজসেবা বিভাগের ছাত্র সৌম্যদীপ্ত লকডাউনে নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন। লকডাউনের সময় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়-সহ যাবতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি নির্দেশে বন্ধ থাকায় তার ‘কুফল’ও টের পেয়েছেন তিনি। গ্রামের শিশুদের মধ্যে যে বই পড়ার অভ্যাস কমেছে, তা আর সকলের মতো সৌম্যদীপ্তরও নজর এড়ায়নি। অগত্যা একার উদ্যোগেই গ্রামের এক প্রতিবেশীর বাড়িতে কয়েকটি মাত্র বই রেখে ছোট একটি লাইব্রেরি চালু করেছিলেন। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাতে সাড়া মেলে। সকালে-বিকেলে আশপাশের বহু শিশুই তাতে পা রাখতে শুরু করে। সে ভিড় দেখে গোটা এলাকা জুড়েই কমিউনিটি লাইব্রেরি খোলার সিদ্ধান্ত নেন সৌম্যদীপ্ত। ধীরে ধীরে গ্রামের অন্য পাড়াগুলিতেও চালু হয় লাইব্রেরি। কুলপির রামকিশোরপুর অঞ্চলের বড়বেড়িয়া, সরদারপাড়া, রামরামপুর এবং দেরিয়া এলাকায় গড়ে ওঠে সেগুলি।

পছন্দের বই শুধু বসে পড়াই যাবে না, প্রয়োজনে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে খুদেরা।

পছন্দের বই শুধু বসে পড়াই যাবে না, প্রয়োজনে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে খুদেরা। —নিজস্ব চিত্র।

সৌম্যদীপ্ত জানিয়েছেন, এলাকার প্রতিটি পাড়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের বাড়িতেই একটি করে কমিউনিটি লাইব্রেরি তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও শিশুদের জন্য প্রচুর গল্পের বই, কমিক্স রাখা হয়েছে। পছন্দের বই শুধু বসে পড়াই যাবে না, প্রয়োজনে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে খুদেরা। সব মিলিয়ে প্রায় হাজারেরও বেশি বই রয়েছে লাইব্রেরিতে। সৌম্যদীপ্ত বলেন, ‘‘শিশুদের বইমুখো করতে গোটা গ্রামকেই একটা লাইব্রেরি করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলাম। বাবা এবং কয়েক জন পরিচিতর কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়ে শিশুদের জন্য প্রচুর বই কিনি। ধীরে ধীরে এলাকার সব পাড়াতেই একটি করে কমিউনিটি লাইব্রেরি করেছি। গ্রামের বাচ্চাদেরও তা মনোমত হয়েছে। সময়সুযোগ মতো প্রতিদিনই লাইব্রেরিতে আসছে শিশুরা৷’’

ধীরে ধীরে পড়াশোনাতেও আগ্রহ তৈরি হচ্ছে ছোটদের।

ধীরে ধীরে পড়াশোনাতেও আগ্রহ তৈরি হচ্ছে ছোটদের। —নিজস্ব চিত্র।

লাইব্রেরিতে একসঙ্গে বহু শিশুর পা পড়লেও করোনাবিধি অবহেলা করছেন না কেউ। সৌম্যদীপ্ত বলেন, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে লাইব্রেরিতে ঢুকতে হলে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হয় শিশুদের। আপতত ছ’টি লাইব্রেরি খোলা হয়েছে। তবে আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শিশুদের জন্য আরও চারটি লাইব্রেরি চালু করব।’’

ঘরের দোরগোড়ায় ছেলেমেয়েদের জন্য লাইব্রেরি হওয়ায় প্রশংসা করছেন অভিভাবকেরাও। রামরামপুরের বাসিন্দা মলয় প্রামাণিক বলেন, ‘আমার ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। স্কুল বন্ধ থাকায় কিছুতেই বই পড়তে চাইছিল না। কিন্তু পাড়ায় নতুন লাইব্রেরি হওয়ামাত্র সেখানেই ছোটরা ভিড় করছে। ছেলেকেও ওই লাইব্রেরিতে নিয়ে যাচ্ছি। অন্যদের সঙ্গে সেখানে বসে বই পড়ছে সে। ধীরে ধীরে পড়াশোনাতেও আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। এখন সময় পেলে নিজে থেকেই লাইব্রেরিতে চলে যায়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Education library Book Kulpi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy