দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয় না নিকাশি নালা।—নিজস্ব চিত্র।
বর্ষা প্রায় হাজির। দুর্ভোগের আশঙ্কায় এখনই কপালের ভাঁজ চওড়া হচ্ছে এ শহরের বাসিন্দাদের।
অবশ্য এই আশঙ্কা শুধু এ বারের নয়। শহরের দু’টি নিকাশি-নালাই দখল হয়ে গিয়েছে অনেক দিন আগে। তার জেরে ফি-বছর প্লাবিত হয় কাকদ্বীপ শহর এবং সংলগ্ন গ্রামগুলি। নোংরা জল পেরিয়ে যাতায়াত করতে হয় সাধারণ মানুষকে। এই দুর্ভোগ থেকে কী ভাবে পরিত্রাণ মিলবে, সেই প্রশ্নও এলাকাবাসীর অনেক দিনের।
কাকদ্বীপ শহর মুড়িগঙ্গা এবং ঘুঘুডাঙা নদী ঘেরা। শহর লাগোয়া রয়েছে চারটি পঞ্চায়েত— প্রতাপাদিত্য, স্বামী বিবেকানন্দ, ঋষি বঙ্কিম এবং শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণ। শহরে প্রাণকেন্দ্র কাকদ্বীপ বাসস্ট্যান্ড। বাসস্ট্যান্ড ঘেঁষে গিয়েছে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক। সড়কের দু’দিকে দুই নিকাশি খাল— কাকদ্বীপ এবং কালনাগিনী। ১০০ মিটার চওড়া ওই দুই খালই এক সময়ে বর্ষায় প্রধান নিকাশি ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করত। কাকদ্বীপ খাল দিয়ে বর্ষার বাড়তি জল গিয়ে মিশত মুড়িগঙ্গা নদীতে। কালনাগিনী খালের জল গিয়ে পড়ত ঘুঘুডাঙা নদীতে। খাল দু’টি দিয়ে নৌকা, মাছের ট্রলারও চলত।
কিন্তু সে সব এখন অতীত। কোথাও খালের জমি দখল করে বাড়ি-দোকানঘর তৈরি হয়েছে, কোথাও বা কচুরিপানা গজিয়ে ওঠায় নিকাশি-পথ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কাকদ্বীপ খাল যেখানে মুড়িগঙ্গা নদীতে মিশছে, সেখানে চরও পড়ে গিয়েছে। সেই চর কবে মুক্ত হবে, খালের জবরদখল আদৌ সরানো যাবে কি না, এ নিয়ে আশার কথা শোনাতে পারেনি কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের বুদ্ধদেব দাস। তিনি বলেন, ‘‘বর্ষায় জল নিকাশির জন্য শহর লাগোয়া চারটি পঞ্চায়েতে কয়েকটি পাকা নালা তৈরি করা হয়েছে। আরও কিছু নিকাশি নালা করার পরিকল্পনা রয়েছে।’’ তবে, কাকদ্বীপ মহকুমা সেচ দফতরের সহকারী বাস্তুকার কৌশিক সিংহ জানান, খালগুলি সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের অধীন। কালনাগিনী খালের ৩ কিলোমিটার সংস্কারের জন্য সম্প্রতি ওই পর্ষদ ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করে সেচ দফতরকে কাজের দায়িত্ব দিয়েছে। আগামী জুলাই মাসের মধ্যেই সেই কাজ শুরু হবে।
তবে, শহরের বর্ষার জল নিকাশির জন্য শুধু খালই ভরসা ছিল না। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ছোটবড় পুকুরে জমা জল নেমে গিয়ে নিকাশি সমস্যার অনেকটাই সমাধান করে দিত। গত সেই সব পুকুরের অনেকগুলিই ভরাট হয়ে তৈরি হয়েছে ঘরবাড়ি। ফলে, নিকাশি সমস্যা বেড়েছে। অক্ষয়নগরের বাসিন্দা রামপদ দলুই বলেন, ‘‘কাকদ্বীপ খাল দখল হয়ে যাওয়ায় ফি-বছর বর্ষায় বাড়িঘর, রাস্তা জলে ডুবে যায়। এমনকী, যেটুকু নিকাশি ব্যবস্থা রয়েছে, তা-ও সংস্কার করা হয় না। জমা জল নামতে তিন-চার দিন লেগে যায়।’’ ওই এলাকারই আর এক বাসিন্দা পরমেশ্বর জানার ক্ষোভ, ‘‘বর্ষার জমা জলে নানা আবর্জনা পচে এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়ায়। মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ে। স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনে পুকুর-খাল ভরাট করে ঘরবাড়ি তৈরি হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’ একই অভিযোগ তুলেছেন সিপিএমের কাকদ্বীপের শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক মৃতেন্দু ভুঁইয়াও। তিনি মনে করেন, ‘‘যা পরিস্থিতি, তাতে ভবিষ্যতে চরম ভোগান্তির স্বীকার হতে হবে বাসিন্দাদের। এ জন্য পঞ্চায়েত সমিতির উচিত মাস্টার-প্ল্যান করা।’’
পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা অবশ্য ঠারেঠোরে মানছেন, কাকদ্বীপ পুরসভার মর্যাদা না পাওয়া পর্যন্ত নিকাশি সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। সমস্যা যে সহজে মেটার নয়, তা এক রকম ধরেই নিয়েছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy