যত্রতত্র: পোলেরহাটে দোকানে বিক্রি হচ্ছে কাটাতেল। নিজস্ব চিত্র।
গত কয়েক দিনে হঠাৎ করে চাহিদা বেড়ে গিয়েছে বেআইনি কাটাতেলের। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় কাটাতেলেই চলছে অটো, ভ্যানো, ট্রলার, ভুটভুটি। যা থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। কিন্তু যে ভাবে দিনের পর দিন জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে, তাতে করে কাটা তেলের উপরে নির্ভরতা আরও বাড়তে পারে বলেই আশঙ্কা।
গত কয়েক দিনে ভাঙড়, গোসাবা, বাসন্তী, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ, ডায়মন্ড হারবার সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বিক্রি বেড়েছে কাটাতেলের। ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ, নামখানা, রায়দিঘি এলাকায় কয়েকশো মৎস্যজীবী ট্রলার, ভুটভুটি মাছ ধরতে যান। পেট্রল-ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় মৎস্যজীবীরা কাটাতেলের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
কেরোসিন তেলের সঙ্গে সলভিন মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে কাটা তেল। খোলাবাজারে মুদির দোকান থেকে শুরু করে বিভিন্ন দোকানে সেই তেল বিক্রি হচ্ছে। বিশেষ করে প্রত্যন্ত সুন্দরবন সহ গ্রামীণ এলাকায় রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে বেআইনি কাটাতেল। কিছু দিন আগে ভাঙড় ও কাশীপুর থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে কাটাতেল বিক্রি কার্যত বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ। সে সময়ে পুলিশ কয়েক হাজার লিটার কাটা তেল-সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করে। কিন্তু তারপরেও ভাঙড়ের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, প্রশাসনের নজরদারি এড়িয়ে ফের রমরমিয়ে বিক্রি হচ্ছে কাটাতেল।
ভাঙড়ের এক পেট্রল পাম্প মালিক বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছে পেট্রলের দাম। এখন লিটার প্রতি পেট্রলের দাম ৯১.৯২ টাকা, ডিজেল ৮৪.৭৯ টাকা। গত মাসে পেট্রলের দাম ছিল ৮৬.৭৯ টাকা। ডিজেলের দাম ছিল ৭৯.১৩ টাকা।’’ এই পরিস্থিতিতেই কাটা তেলের বিক্রি বাড়ছে বলে মনে করেন তিনি। ভাঙড়ের ভুমরু গ্রামের বাসিন্দা নজরুল মোল্লা তিনটি মোটর ভ্যান রয়েছে। তিনি নিজে একটি গাড়ি চালান। বাকি দু’টি গাড়ি ভাড়ায় খাটান। নজরুল বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে পেট্রল-ডিজেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গিয়েছে। যা আমাদের মতো মানুষের পক্ষে কেনা অসম্ভব। তাই বাধ্য হয়ে কাটাতেলের উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে।’’ তিনি জানান, কাটা তেল বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা লিটার। ১ লিটার কাটাতেলে প্রায় ৯০-১০০ কিলোমিটার গাড়ি চলে। পাম্পের তেল হলে মাইলেজ আর একটু ভাল পাওয়া যায়। কিন্তু সস্তা বলেই কাটা তেলের উপরে ভরসা করছেন অনেকে।
ট্রলার মালিক সম্রাট মণ্ডল বলেন, ‘‘দিনের পর দিন পেট্রল-ডিজেলের দাম হু হু করে বাড়ছে। যে ভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে, তাতে খরচ উঠছে না। তাই বাধ্য হয়ে তুলনামূলক সস্তার কাটাতেলের উপরে নির্ভর করা ছাড়া উপায় নেই। তাতে কিছুটা হলেও টাকার সাশ্রয় হচ্ছে।’’ এ বিষয়ে কাকদ্বীপ মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘কিছু কিছু ভুটভুটি, ট্রলার কাটা তেল ব্যবহার করছে বলে শুনেছি। পেট্রল-ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকে ওই তেল ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।’’
পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পেট্রোল ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় গ্রামীণ এলাকায় কাটাতেলের রমরমা বেড়েছে। এর ফলে ভয়ঙ্কর ভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। বায়ুমণ্ডলে তার প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে সুন্দরবনের জীববৈচিত্রের উপরে দূষণের প্রভাব পড়ছে। আমরা এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্তরে জানিয়েছি। পরিবেশ আদালতে মামলা করব।’’
বারুইপুর জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘কাটাতেলের বিরুদ্ধে এর আগেও আমরা অভিযান চালিয়েছি। কোথাও কাটাতেল বিক্রি হচ্ছে খবর পেলেই সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই। কাটাতেলের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযান চালানো হয়।’’
—সহ প্রতিবেদন: দিলীপ নস্কর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy