—প্রতীকী চিত্র।
বিজেপির শক্ত ঘাঁটি বনগাঁ মহকুমা। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট এবং ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে এই তথ্যই উঠে আসে। বনগাঁ লোকসভা আসনটি বিজেপির দখলে। বিধানসভা ভোটে মহকুমায় থাকা ৪টি আসনেই বিজেপি প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন। মহকুমা থেকে বিজেপির এক জন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রীও আছেন।
এ হেন এলাকায় বিজেপি এ বার গ্রাম পঞ্চায়েত-স্তরে অনেক আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি। পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের আসনে অবশ্য প্রার্থী দিয়েছে তারা। বনগাঁয় মনোনয়ন-পর্ব মিটেছিল মোটের উপর শান্তিতেই। মনোনয়ন জমা দেওয়ায় বিরোধীরা বাধার মুখে পড়েছেন— এমন বড়সড় কোনও অভিযোগও ওঠেনি।
এই পরিস্থিতিতেও কেন বিজেপি গ্রাম পঞ্চায়েতে সর্বত্র প্রার্থী দিতে পারল না, সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বনগাঁ মহকুমায় ৩৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন ৯২৪টি। বিজেপি প্রার্থী দিয়েছে ৮৩৭টি আসনে। ৮৭টি আসনে তাদের প্রার্থী নেই। মহকুমায় ১১৪টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে অবশ্য বিজেপি ১১২টিতেই প্রার্থী দিয়েছে। জেলা পরিষদের ৯টি আসনেও তাদের প্রার্থী আছে। ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে সব আসনে বিজেপি প্রার্থী দিতে পারল না কেন? তা হলে কী নিচুতলায় সাংগঠনিক-স্তরে ফাঁকফোকর থেকে গিয়েছে?
সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা মানতে নারাজ বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি রামপদ দাস। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, "বনগাঁয় আমরা সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী না হলে এত আসনে প্রার্থী দিতে পারলাম কী ভাবে?" তাঁর যুক্তি, ‘‘নিচুতলায় কিছু আসনে তৃণমূলের অত্যাচার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ জোটবদ্ধ হয়ে তাঁদের পছন্দের প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। তেমন কিছু আসনে প্রতীক ছাড়া আমাদের প্রার্থীরা রয়েছেন। তা ছাড়া, দু'একটি সংখ্যালঘু এলাকায় তৃণমূলের সন্ত্রাসের কারণে আমরা প্রার্থী দিতে পারিনি।"
যদিও স্থানীয় রাজনৈতিক মহল মনে করছেন, গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে মহকুমায় বিজেপির সাংগঠনিক ক্ষেত্রে এখনও কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে। বিধানসভা এবং লোকসভা ভোটের তুলনায় গ্রাম পঞ্চায়েত ভোটে জয়ী হতে শক্তশালী বুথভিত্তিক সংগঠনের প্রয়োজন হয়। মহকুমার সর্বত্র বিজেপির তেমন সংগঠন চোখে পড়ে না। বিজেপির যদি নিজস্ব শক্তিশালী প্রার্থী থাকত, তা হলে কি ‘মানুষের জোটের প্রার্থী’কে সমর্থন করতে হত?
বিধানসভা ভোটের পর থেকে এখানে বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল বার বার প্রকাশ্যে এসেছে। পঞ্চায়েতে সর্বত্র প্রার্থী দিতে না পারার পিছনে সেই কারণই কাজ করছে বলে রাজনৈতিক মহলের মত। অভিযোগ, শুধু মাত্র নেতৃত্বের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে ইছাপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে বিজেপি প্রার্থী দিতে পারেনি।
অন্য দিকে, তৃণমূলকে ভাবাচ্ছে নির্দল কাঁটা, গোষ্ঠীকোন্দল এবং পরিবারতন্ত্র। তৃণমূল গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদের প্রতিটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। ইতিমধ্যেই গ্রাম পঞ্চায়েতের তিনটি আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছে। তারপরেও তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসকে সাংবাদিক বৈঠক করে দলের গোঁজ প্রার্থীদের উদ্দেশ্য হুঁশিয়ারি দিতে হয়েছে। বলতে হয়েছে, মনোনয়ন প্রত্যাহার না করলে দলের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।
তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই হুঁশিয়ারির পরেও বেশ কিছু গোঁজ প্রার্থী থেকে গিয়েছে। পঞ্চায়েত-স্তরে মহকুমার ৯২৪টি আসনের মধ্যে নির্দল প্রার্থী রয়েছেন ১৩৬ জন। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই নির্দল প্রার্থীদের মধ্যে তৃণমূলের গোঁজই বেশি। ছয়ঘরিয়া পঞ্চায়েতো তৃণমূলের এক মহিলা প্রার্থীর বিরুদ্ধে তৃণমূলেরই এক জন বিদায়ী পঞ্চায়েত সদস্য নির্দল হিসাবে দাঁড়িয়েছেন। এমন উদাহরণ অসংখ্য আছে।
এ বিষয়ে বিশ্বজিৎ বলেন, "নির্দল প্রার্থীদের আরও কয়েকটা দিন সময় দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, লিফলেট ছড়িয়ে ভোটপর্ব থেকে সরে আসুন। তাঁরা তা না করলে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। নির্দল প্রার্থীরা কোনও প্রভাব ফেলতে পারবেন না।"
স্থানীয় স্তরে নেতানেত্রীদের কোন্দলের প্রভাবে গোঁজ প্রার্থী দাঁড়িয়েছে বলেই তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে। বেশ কিছু পরিবার থেকে একাধিক প্রার্থী হয়েছেন। যেমন, বাগদা পশ্চিম ব্লকের সভাপতি অঘোরচন্দ্র হালদার পঞ্চায়েত সমিতির আসনে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর স্ত্রী স্বপ্না হালদার গ্রাম পঞ্চায়েতে দাঁড়িয়েছেন। পরিবারতন্ত্র নিয়ে কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বনগাঁ মহকুমায় সিপিএমের মিটিং-মিছিল, জনসভায় প্রচুর ভিড় দেখা গিয়েছিল। কিন্তু তার প্রতিফলন গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে দেখা গেল না। গ্রাম পঞ্চায়েতের ৯২৪টি আসনের মধ্যে সিপিএম প্রার্থী দিয়েছে ৬৪৮টিতে। এ ছাড়া, কিছু আসনে ফরওয়ার্ড ব্লক এবং সিপিআই প্রার্থী দিয়েছে। তারপরেও অনেক আসনে বামেদের প্রার্থী নেই।
কেন এই পরিস্থিতি?
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রমেন আঢ্য বলেন, "আমরা যাঁদের প্রার্থী ঠিক করেছিলাম, তৃণমূলের পক্ষ থেকে তাঁদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হয়। ফলে শেষ মুহূর্তে অনেকেই আতঙ্কে মনোনয়ন জমা করতে সাহস পাননি। নিচুস্তরে কিছু জায়গায় তৃণমূলকে হারাতে আমাদের কর্মীরা নির্দলকে সমর্থন করেছেন। ফলে সেখানে প্রার্থী দেওয়া হয়নি। শরিক দলগুলির প্রার্থী দেওয়ার কথা ছিল, এমন কিছু আসনে শেষ মুহূর্তে তাঁরা জানান, প্রার্থী দিতে পারছেন না। দ্রুত সেখানে প্রার্থী ঠিক করা যায়নি। তা ছাড়া, কিছুটা আমাদের সংগঠনিক দুর্বলতা থেকে গিয়েছে।" সমিতি এবং জেলা পরিষদের আসনে বামেরা প্রায় সব আসনেই অবশ্য প্রার্থী দিয়েছেন।
কংগ্রেস কিছু আসনে প্রার্থী দিয়েছে। জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি (গ্রামীণ) কৃষ্ণপদ চন্দ বলেন, "আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা আছে, এটা অস্বীকার করা যায় না। তবে আমরা যাঁদের প্রার্থী ঠিক করেছিলাম, তৃণমূল চাপ দিয়ে, ভয় দেখিয়ে তাঁদের মনোনয়ন জমা করতে দেয়নি।"
হুমকির অভিযোগ প্রসঙ্গে বিশ্বজিৎ বলেন, "বনগাঁয় এত সুষ্ঠু মনোনয়ন-পর্ব আগে দেখা যায়নি। বিরোধীদের প্রার্থী দিতে না পারাটা তাঁদের সাংগঠনিক দৈন্যদশাই প্রমাণ করছে।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy