Advertisement
E-Paper

প্রয়াত রেজ্জাক মোল্লা, বাম-তৃণমূল দুই আমলেরই মন্ত্রী অসুস্থ ছিলেন দীর্ঘ দিন, শোকপ্রকাশ মমতার

শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ নিজের বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবার সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন রেজ্জাক। অনেক দিন ধরে দূরেও ছিলেন সক্রিয় রাজনীতি থেকে।

Abdur Razzak Molla passes away at 80

রেজ্জাক মোল্লা। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:০৭
Share
Save

জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়— রাজ্যে পর পর তিন আমলেরই মন্ত্রী, বাংলার রাজনীতির বর্ণময় চরিত্র রেজ্জাক মোল্লা প্রয়াত। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের মিলন বাজারের কাছে বাঁকড়া গ্রামের বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৮০। পরিবার সূত্রে খবর, পৈতৃক ভিটেতে তাঁর দেহ সমাধিস্থ করা হবে। গত চার-পাঁচ বছর ধরে ওই বাড়িতেই থাকছিলেন তিনি।

রেজ্জাকের প্রয়াণে নিজের এক্স হ্যান্ডলে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন, ‘‘আমার সহকর্মী, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লার প্রয়াণে আমি শোকাহত ও মর্মাহত। তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী ছিলেন। তাঁকে আমি শ্রদ্ধা করতাম, সম্মান করতাম। বাংলার গ্রামজীবন, কৃষি-অর্থনীতি ও ভূমি-সংস্কার বিষয়ে তাঁর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছিল সুবিদিত। তাই এক সময় অন্য ধারার রাজনীতি করলেও, মা-মাটি-মানুষের সরকারে তাঁর মিলিত হয়ে যাওয়া ছিল সহজ ও স্বাভাবিক। তাঁর প্রয়াণে বাংলার রাজনৈতিক জীবনে অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হল। আমি তাঁর পরিবারবর্গ, অসংখ্য অনুগামী ও শুভানুধ্যায়ীকে আমার আন্তরিক সমবেদনা জানাই।’’ রেজ্জাকের মৃত্যুতে অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণাও করেছে রাজ্য সরকার। প্রাক্তন সহকর্মী রেজ্জাকের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর বাড়ি গিয়েছেন সিপিএম নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।

এক্স হ্যান্ডলে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এক্স হ্যান্ডলে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পরিবার সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন । অনেক দিন ধরে দূরেও ছিলেন সক্রিয় রাজনীতি থেকে। ১৯৭২ সালে ভাঙড় বিধানসভা থেকে সিপিএমের টিকিটে জিতে প্রথম বার বিধায়ক হয়েছিলেন রেজ্জাক মোল্লা। নিজেকে ‘চাষার ব্যাটা’ বলে পরিচয় দিতে ভালবাসতেন। তিনি প্রথম বার মন্ত্রী হন ১৯৮২ সালে। বামফ্রন্টের ভূমি সংস্কার দফতরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছেন দীর্ঘ দিন। জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দু’জনেরই মন্ত্রিসভার মন্ত্রী ছিলেন রেজ্জাক।

বুদ্ধদেবের সরকারে থাকাকালীন তাঁর সঙ্গে রেজ্জাকের সম্পর্ক কখনওই তেমন ‘মসৃণ’ ছিল না। রেজ্জাক বিভিন্ন সময়ে বুদ্ধদেব সম্পর্কে বহু ‘বিরূপ’ মন্তব্য করেছিলেন। ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকারের যখন পতন হয়, সে সময়ে রেজ্জাক বুদ্ধদেব সম্পর্কে তির্যক মন্তব্য করে বলেছিলেন, ‘হেলে ধরতে পারে না, কেউটে ধরতে যায়।’ এই মন্তব্য ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল সেই সময়। শুধু বুদ্ধদেবই নয়, বাম আমলের শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের সঙ্গেও রেজ্জাকের একাধিক বার বিরোধ বেধেছিল।

বুদ্ধদেবের আমলে সিপিএমের জমি অধিগ্রহণ নীতির কট্টর সমালোচক ছিলেন তৎকালীন মন্ত্রী রেজ্জাক। সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে যখন আন্দোলন দানা বাঁধছে, তখন দলের অন্দরে কৃষকসভার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। সিপিএম সূত্রে খবর, সেই সময় দলের কাউকে কিছু না জানিয়ে দিল্লি চলে গিয়েছিলেন রেজ্জাক। দেখা করেছিলেন প্রকাশ কারাটের সঙ্গে। সেখানে দলের জমি অধিগ্রহণে ‘আগ্রাসী মনোভাবের’ তীব্র সমালোচনা করে এসেছিলেন তিনি।

পলিটব্যুরো সেই সময়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীকে সতর্কও করেছিল। এমনকি, ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম ‘শূন্য’ হয়ে যাওয়ার পরে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি যে পর্যালোচনা করেছিল, তাতেও উল্লেখ ছিল বুদ্ধদেব জমানার জমি অধিগ্রহণ নীতির ‘ত্রুটির’ কথা। সিপিএমের নথিতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছিল যে, বুদ্ধদেবের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার যে ভাবে জমি অধিগ্রহণ করেছিল, তা দলের ‘শ্রেণি দৃষ্টিভঙ্গি’র সঙ্গে খাপ খায় না। প্রসঙ্গত, পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা পরবর্তী কালে মেনে নিয়েছিলেন বুদ্ধদেব নিজেও। ২০১৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট ‘অনিচ্ছুক’ কৃষকদের জমি ফিরিয়ে দেওয়ার রায় দেয়। সেই সময়ে বুদ্ধদেব বলেছিলেন, ‘‘প্রক্রিয়াগত ত্রুটি থাকলেও উদ্দেশ্য সৎ ছিল।’’

২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন রেজ্জাক। সে বার ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতার মন্ত্রিসভার মন্ত্রীও হন। ছিলেন ২০২১ সাল পর্যন্ত। ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, অসুস্থতার কারণেই এর পর রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন রেজ্জাক।

রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পরে নিঃসঙ্গ রেজ্জাক ঘনিষ্ঠমহলে বহু বার বলেছেন, সিপিএমের লোকজন তাঁর অসুস্থতার খবর নিলেও বর্তমান শাসকদলের কেউ খবর রাখে না। যদিও তাঁর এক কালের ‘শিষ্য’ তথা বর্তমানে তৃণমূলের ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা মাঝে রেজ্জাকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তাঁর বাড়িতে। তাতে আপ্লুতও হয়েছিলেন রেজ্জাক। প্রসঙ্গত, এক সময়ে রেজ্জাকের হাত ধরেই রাজনীতির ময়দানে প্রবেশ শওকতের। সে সময়ে রেজ্জাকের ‘দুই হাত’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন শওকত মোল্লা এবং সাত্তার মোল্লা।

Abdur Razzak Molla CPM Leader Tmc Leader Death News

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}