ভাঙড়ের কাঁঠালিয়া হাইস্কুলের সামনে গন্ডগোল ঠেকাতে পুলিশের প্রস্তুতি। মঙ্গলবার রাতে তোলা। —নিজস্ব চিত্র।
আপাত শান্ত ভোট গণনার পরিবেশ বদলে গিয়েছে হঠাৎ করেই। মুহুর্মুহু গুলি, বোমায় মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। গুলি লেগেছে পুলিশেরও! কিন্তু দিনভর শান্তিতে গণনা হচ্ছে বলে ভাঙড়ের সব পক্ষ যে দাবি করেছিলেন, তা কী করে হঠাৎ বদলে গেল রাত বাড়তেই? আপাতত এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে।
ভোটকেন্দ্রের মধ্যে মঙ্গলবার দিনভর কাটানো অনেকেই যদিও দাবি করেছেন, গন্ডগোল যে হতে পারে, তার একটা পূর্বাভাস মিলতে শুরু করেছিল মঙ্গলবার দুপুর থেকেই। বিশেষ করে, আরাবুলের কেন্দ্র পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েত যে তৃণমূলের হাতছাড়া হচ্ছে, তা স্পষ্ট হওয়ার পরেই শাসক দলের নেতাদের বেরিয়ে যেতে দেখা যায় গণনা কেন্দ্র থেকে। সেই সময়ে বেরিয়ে যান আরাবুলও। পরে তিনি ফিরে এসে সোজা গিয়ে ঢোকেন পঞ্চায়েত সমিতির ভোট গণনার জায়গায়। তাঁর শরীরী ভাষায় তখন প্রবল প্রত্যয়। ‘‘একটা গিয়েছে তো কী? বাকি সব আমাদের হবে!’’ এমনও বলেন আরাবুল। সেই সময়ে তাঁর ছেলে তথা একটি জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী হাকিমুল ইসলামকেও বলতে শোনা যায়, ‘‘সব ক’টা জেলা পরিষদ আমাদের হবে। ভাল করে সব গোনাতে হবে।’’
স্কুলের গণনা কেন্দ্রের ভিতরে বিডিও কার্তিকচন্দ্র রায়ের কার্যালয়ে তখন ভিড় উপচে পড়ছে। একের পর এক পঞ্চায়েতের ফলাফল সামনে আসছে। কোনও কেন্দ্রে পরাজয় ঘটেছে দেখলেই উপস্থিত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা আইএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, হামলা করে ভোট করতে না দেওয়ার। সেই সময়ে এক আইএসএফ প্রার্থী উপস্থিত হয়ে তাঁর আসনে পুনর্গণনার অনুরোধ জানান। তিনি বিষয়টি জানিয়ে বিডিও-র দফতরে ইমেল করেছেন বলেও দাবি করেন। কিন্তু বিডিও তাঁকে বলে দেন, ‘‘আপনার বক্তব্য শুনলাম। কিন্তু কিছু করার নেই। আপনি আসতে পারেন।’’ বিডিও কার্তিক ওই সময়ে মন্তব্য করেন, ‘‘একের পর এক জেলা পরিষদের ফল বেরোচ্ছে। খাদিজা বিবির মতো কাজের লোক থাকলে ভাল।’’ উপস্থিত অন্যদের উদ্দেশ্যে এর পরে তিনি বলেন, ‘‘এই রকম এক জন জেলা পরিষদে থাকলে ভাল নয় কি?’’ ঘটনাচক্রে, রাত বাড়তেই দেখা যায়, খাদিজা বিবি দাঁড়িয়েছেন যেখানে, সেই ৮৩ নম্বর জেলা পরিষদের ফলাফল ঘিরেই গন্ডগোল।
ওই আসনে তৃণমূলের খাদিজার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আইএসএফের জাহানারা বিবি। আইএসএফের দাবি, প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটে এগিয়ে ছিলেন জাহানারা। কিন্তু তাঁকে সার্টিফিকেট দেওয়ার বদলে তৃণমূল নেতা আরাবুলের নির্দেশে পুনর্গণনা করান বিডিও। তত ক্ষণে ভাঙড়ে যে তিনটি জেলা পরিষদে নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে ৮১ নম্বরে জিতে গিয়েছেন আরাবুলের ছেলে হাকিমুল। ৮২ নম্বরে জয়ী হয়েছেন আইএসএফ প্রার্থী। ফল ১-১ হয়ে যাওয়ায় দু’পক্ষের কেউই ৮৩ নম্বর আসনটি হাতছাড়া করতে চান না। আইএসএফ প্রার্থীকে জয়ী সার্টিফিকেট না দেওয়া এবং পুনর্গণনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। আইএসএফ কর্মীরা গণনা কেন্দ্র ঘিরে ফেলেন। বোমা পড়ে, গুলি চলে।
বুধবার বিডিও কার্তিককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, খাদিজার মতো এক জনের জেলা পরিষদে থাকা উচিত বলে করা তাঁর মন্তব্য কি সম্পূর্ণ কাকতালীয়? আইএসএফ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। বিডিও এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। প্রশ্ন শুনে তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘এ ব্যাপারে বাইরে কিছুই বলব না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy