Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

লুঠ রুখতে তৎপর গ্রামবাসী, মারধরে জখম ১৩

এক সময়ে ভয় পেয়ে দরজা খুলে দেন কর্মীরা। অভিযোগ, হই হই করে ঘরে ঢুকে পড়ে একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতী। প্রিসাইডিং অফিসার অর্ণব পালের কাছে জানতে চায়, ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার কোথায়।

প্রতিরোধ: বাগদার ধুলুনি গ্রামে প্রতিবাদ বিজেপির মহিলা সমর্থকদের। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

প্রতিরোধ: বাগদার ধুলুনি গ্রামে প্রতিবাদ বিজেপির মহিলা সমর্থকদের। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

সীমান্ত মৈত্র
বাগদা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ০৪:২০
Share: Save:

ছাপ্পা, বুথ দখল, বোমাবাজি, সন্ত্রাসের মাঝে কোথাও কোথাও ঘুরে দাঁড়াল জনতা। তাতে কাজও হল। পিছু হটতে হল হামলাকারীদের।

রবিবার রাত তখন প্রায় ৩টে। বাগদা ব্লকের আষাঢ়ু পঞ্চায়েতের আমডোব হাইস্কুলের বুথে যে ঘরে ভোটকর্মীরা ছিলেন, তার দরজায় লাথি, ঘুষি পড়তে থাকে। ভিতরে সিঁটিয়ে ভোটকর্মীরা। দরজা খোলার জন্য দুষ্কৃতীরা হুঙ্কার ছাড়তে থাকে।

এক সময়ে ভয় পেয়ে দরজা খুলে দেন কর্মীরা। অভিযোগ, হই হই করে ঘরে ঢুকে পড়ে একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতী। প্রিসাইডিং অফিসার অর্ণব পালের কাছে জানতে চায়, ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার কোথায়। অর্ণববাবুর মুখের কথা খসার আগেই দুষ্কতীরা ব্যালটের তাড়া এনে তাঁর সামনে ফেলে বলে, ‘‘নিন, সই করে দিন।’’ আপত্তি করেন প্রিসাইডিং অফিসার। কিন্তু দুষ্কৃতীদের হুমকির মুখে সই করতে বাধ্য হন।

ঘর থেকে বেরিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ইতিমধ্যে রাতের অন্ধকারে স্কুলের মাঠে শুরু হয় বোমাবাজি। বোঝা যায়, দুষ্কৃতীদের তাড়া করেছে এক দল লোক। পাল্টা গুলি চালাতে চালাতে পালানোর চেষ্টা করে হামলাকারীরা।

কিন্তু ততক্ষণে শ’খানেক মানুষ হাজির। তারা ঘিরে ফেলে দুষ্কৃতীদের। কয়েকজন পালায়। ধরা পড়ে যায় ৬ জন। বাঁশ, শাবল, ইট দিয়ে শুরু হয় বেধড়ক মার।

এ দিকে, আক্রমণের খবর পেয়ে আরও কিছু লোক তাদের উদ্ধার করতে হাজির হয়। তাদের ধরেও পেটাতে শুরু করে জনতা। জখম হয় ১৩ জন। পরে পুলিশ এসে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সকলকে বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়। সেখান থেকে একজনকে পরে পাঠানো হয়েছে আরজিকরে।

প্রিসাইডিং অফিসার অর্ণব জানান, ৮২০টি ব্যালট পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দুপুরের পরে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছিল।

কিন্তু বিশেষ কেউ ভোট দিতে আসেননি। ওই বুথে ফের ভোট নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে তৃণমূল।

এ দিকে, এই ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বুথে হামলাকারীরা তৃণমূলের লোক বলেই দাবি সিপিএমের। দলের পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী নির্মলকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা ব্যালট লুঠ করতে এসেছিল। গ্রামের লোক পাহারায় ছিলেন। তাঁরা কয়েকজনকে ধরে ফেলেন।’’

অন্য দিকে, তৃণমূলের বাগদার পর্যবেক্ষক শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘ব্যালট লুঠ হচ্ছে বলে খবর এসেছিল। আমাদের কর্মী-সমর্থকেরা বিষয়টি দেখতে যান। সে সময়ে হামলা হয়েছে।’’

জখমদের মধ্যে বাগদা ব্লক যুব তৃণমূল সভাপতি হিজবুর রহমান মণ্ডলও আছেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, ‘‘বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতীদের আনা হয়েছিল। বাগদায় আমাদের কমী-সমর্থকদের উপরে হামলা হয়েছে। মদত দিয়েছে বিজেপি।’’

বিজেপির জেলা সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শুধু বাগদা নয়, দেগঙ্গা, হাবড়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় আমরা গ্রামবাসীদের নিয়ে প্রতিরোধ করেছিলাম শাসকদলের আক্রমণ ঠেকাতে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE