(বাঁ দিকে) সন্দীপ ঘোষ। তন্ময়কান্তি হালদার (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে তাঁরা একসঙ্গে পড়াশোনা করেছেন। পুরনো সেই সহপাঠীর জন্যই এখন লজ্জা বোধ করছেন বনগাঁ হাই স্কুলের প্রাক্তন পড়ুয়ারা। শুধু তা-ই নয়, তাঁর দাবি, ‘বন্ধু’ যদি দোষী হন, তবে শাস্তি হোক।
আরজি কর মেডিক্যালে কর্তব্যরত মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পরেই সেখানকার তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের নাম প্রকাশ্যে আসে। চিকিৎসক এবং পড়ুয়াদের অভিযোগ ছিল, সন্দীপ অত্যন্ত ‘প্রভাবশালী’। তদন্ত প্রক্রিয়াকে তিনি প্রভাবিত করতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন অনেকে। তাঁর পদত্যাগের দাবি উঠেছিল আরজি কর থেকেই। এর মাঝেই গত ১২ অগস্ট সন্দীপ সংবাদমাধ্যমের সামনে ইস্তফার কথা ঘোষণা করেন। স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে ইস্তফাপত্র জমাও দেন। আরজি করের অধ্যক্ষ এবং অধ্যাপকের পদ ছেড়ে দেন সন্দীপ। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই যদিও সন্দীপকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ করে স্বাস্থ্যভবন।
আরজি কর-কাণ্ডের পর এ ভাবে সন্দীপের নাম প্রকাশ্যে আসায় লজ্জিত তাঁরই এক সময়কার ‘বন্ধু’ তন্ময়। বনগাঁ হাই স্কুলে একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন সন্দীপ। সেই সময় তাঁর সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তেন তন্ময়। সেই থেকে চেনাজানা। তন্ময়ের কথায়, ‘‘সন্দীপ খুব আত্মকেন্দ্রিক ছিল। নিজের গ্রুপের বাইরে কারও সঙ্গেই মিশত না। পড়াশোনায় ভাল ছিল। তবে পড়াশোনার ব্যাপারে কারও সঙ্গে কিছু আলোচনা করত না।’’
উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর স্কুলের কোনও বন্ধুর সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রাখতেন না সন্দীপ। তন্ময়ের দাবি, ‘‘ডাক্তার হওয়ার পর ও কারও সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি।’’ বর্তমানে পুরনো বন্ধুর খবরে ভরে থাকে সংবাদপত্রের পাতা। টিভি চ্যানেলে দিনের বেশির ভাগ সময়েই আলোচনা হয় সন্দীপকে নিয়ে। সিবিআই, লালবাজারের আতশকাচের নীচে রয়েছে তাঁর কাজকর্ম এবং গতিবিধি।
সব জায়গায় বন্ধুকে নিয়ে আলোচনা শুনে কিছুটা বিড়ম্বনাতেই পড়তে হচ্ছে বলে জানান তন্ময়। তাঁর কথায়, ‘‘বর্তমানে যা পরিস্থিতি দেখছি, তা দেখে ওর সহপাঠী হিসাবে আমি লজ্জিত। সিবিআই তদন্তে যদি দোষী প্রমাণিত হয়, তবে ওর শাস্তি হোক। অনেকেই জিজ্ঞেস করছেন সন্দীপকে নিয়ে। মাঝেমধ্যেই তা বিড়ম্বনা তৈরি করছে।’’ তবে বন্ধুর শাস্তি হলে দুঃখ হবে, তা-ও লুকোননি তন্ময়। কিন্তু তিনি চান, দোষী হলে শাস্তি হোক সন্দীপের।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই উত্তাল গোটা দেশ। এই ঘটনায় প্রশ্ন ওঠে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকায়। ঘটনার সময় আরজি কর মেডিক্যালের অধ্যক্ষ পদে ছিলেন সন্দীপ। মঙ্গলবার নিয়ে টানা পাঁচ দিন তাঁকে জেরা করছে সিবিআই। কখনও ১০ ঘণ্টা, কখনও ১২-১৩ ঘণ্টা সিবিআই দফতরে থাকতে হচ্ছে সন্দীপকে। তার মধ্যেই লালবাজারও তদন্ত শুরু করেছে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ঘটনার পর নির্যাতিতার নাম প্রকাশ করেছিলেন সন্দীপ। শুধু তা-ই নয়, আরজি কর হাসপাতালকে কেন্দ্র করে ভিন্ন অভিযোগে তদন্তের কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকারও। ২০২১ থেকে চলা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করতে বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট গঠনের নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন। উল্লেখ্য, এই সময় কালে আরজি করের অধ্যক্ষ ছিলেন সন্দীপই। কলকাতা হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টেও তাঁর ভূমিকা প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy