উত্তেজনা: বৈঠক চলাকালীন
হোম-বিতর্কে ফের উত্তেজনা ছড়াল মাটিয়ায়। মেরামতি শেষ হলেই মেয়েরা হোমে ফিরতে পারবে বলে জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফে। আবাসিকদের যে সব জিনিসপত্র হোমে আটকে রাখা হয়েছিল, তা-ও ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে কথা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আলোচনাকালীন এক সরকারি আধিকারিকের কটূক্তি ঘিরে উত্তেজনা দানা বাঁধে। কবে হোম খোলা হবে, তা নিয়েও মেলেনি স্পষ্ট উত্তর।
বুধবার দুপুরে বসিরহাট ২ বিডিও-র দফতরে এ নিয়ে বৈঠক হয়। জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের যুগ্ম ডিরেক্টর বলাইকান্ত মুর্মু বলেন, ‘‘ধান্যকুড়িয়া বালিকা রাষ্ট্রীয় কল্যাণ আলয় মেরামতির জন্য সাময়িক ভাবে বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তা পাকাপাকি ভাবে বন্ধ করা হচ্ছে না। মেরামতির কাজ শেষ হলেই হোমে ফিরে আসার অগ্রাধিকার পাবে মেয়েরা। এই সিদ্ধান্তের কথা হোমের সামনে নোটিস বোর্ডে লাগানো হবে।’’ বিডিও মধুমিতা ঘোষ বলেন, ‘‘মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা আপাতত পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মাসে ষোলোশো টাকা করে সরকারি ভাতা পাবে।’’
দুঃস্থ ও অনাথ মেয়েদের জন্য ১৯৪৮ সালে বসিরহাট মহকুমার ধান্যকুড়িয়া জমিদার বাড়ির গাইন গার্ডেনে হোম চালু হয়। পরবর্তিতে জেলা পরিষদ ওই জমি কিনে নেয়। বর্তমানে ওই হোমে থেকে ৮৫ জন মেয়ে থেকে পড়াশোনা করছিল। তাদের মধ্যে ১১ জন মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষা দিচ্ছে। সম্প্রতি হোমের বাড়ি মেরামতির নামে মেয়েদের বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পুজোর ছুটির পরে সকলে এসে দেখেন, দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। জেলা শিক্ষা দফতর।
প্রতিবাদ জানিয়ে পথ অবরোধ হয়। হোমের জমিতে পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার চক্রান্ত চলছে বলে অভিযোগ তোলেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের পক্ষে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক এটিএম আব্দুল্লা রনি বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে বলে আশ্বাস দেন।
এ দিন বৈঠকে প্রশাসনের আধিকারিক-ছাত্রীরা ছা়ড়াও ছিলেন অভিভাবকেরা। তাঁদের নিয়ে গিয়েছিলেন রনি। দীর্ঘ আলোচনার পরে আধিকারিকদের প্রস্তাব মেনে নেন অধিকাংশ ছাত্রী-অভিভাবক।
এ দিকে, ছাত্রীরা হোমে গিয়ে ঘরে বই-খাতা আনতে চাইলে উত্তেজিত হয়ে পড়েন এক শিক্ষা আধিকারিক। সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে বলে দাবি করে এক অভিভাবিকাকে কটূক্তি করেন। তার জেরে উত্তেজনা ছড়ায়। রনি বলেন, ‘‘আমাদের অন্ধকারে রেখে হোম থেকে ছাত্রীদের বার করে দেওয়া হল। তার উপরে একজন সরকারি কর্মচারী আপত্তিকর মন্তব্য করলেন।’’ বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন রনি।
অভিভাবক ফতেমা বিবি, লতা দাস, তানিয়া খাতুন, সালমা বিবিরা বলেন, ‘‘শিক্ষা আধিকারিকেরা আমাদের কয়েকটি দাবি মানলেও কবে হোম ফের খুলবে, সে কথা স্পষ্ট ভাবে জানালেন না। যদি হোম মেরামতির জন্য দু’চার বছর লেগে যায়, তা হলে তো এখানে ফিরে আসার পথ বন্ধই হয়ে গেল ধরে নিতে হবে।’’ হোম কবে খুলবে, তা জানানো হচ্ছে না কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিডিও কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। এতেই সন্দেহ আরও দানা বাঁধছে অভিভাবকদের মনে। হোম আদৌ খোলা হবে তো, প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছে তাঁদের মনে। রনি বলেন, ‘‘এই হোম আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। তা কোনও ভাবে তুলে দেওয়া যাবে না।’’
— ছবি: নির্মল বসু
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy