Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

‘ছেলে ভুল করেছে, ওকে ছেড়ে দিন’, মার খেয়েও এ ভাবে থানায় আসেন বাবা

ওসি আশিস দলুইয়ের কাছে অনুরোধ করেন, ‘‘ছেলেটা ভুল করে ফেলেছে। তবে ছেড়ে দিন ওকে।’’

পিতৃস্নেহ: একই বাড়িতে ছেলের সঙ্গে মানিকলাল। —নিজস্ব চিত্র

পিতৃস্নেহ: একই বাড়িতে ছেলের সঙ্গে মানিকলাল। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
অশোকনগর শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৮ ০২:৫৬
Share: Save:

ছেলের হাতের চড়-থাপ্পড় খেয়ে বেমালুম মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন বৃদ্ধ বাবা। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় সে ছবি ভাইরাল হয়ে পড়ায় ঘটনা জানাজানি হয়। পুলিশ আসে বাড়িতে। পড়শিরাও বৃদ্ধকে বোঝান। শেষমেশ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন অশোকনগরের বিল্ডিং মোড়ের বাসিন্দা মানিকলাল বিশ্বাস। পুলিশ গ্রেফতার করে ছেলে প্রদীপকে।

সেই ছেলেকেই ছাড়িয়ে নিয়ে যেতে বুধবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ অশোকনগর থানায় হাজির মানিকলাল। ওসি আশিস দলুইয়ের কাছে অনুরোধ করেন, ‘‘ছেলেটা ভুল করে ফেলেছে। তবে ছেড়ে দিন ওকে।’’ বৃদ্ধের ‘অপরাধ’, স্ত্রী বন্দনাকে আড়ালে ডেকে মিষ্টি খাইয়েছিলেন তিনি। স্ত্রী সুগারের রোগী। বাবা কেন তাঁকে মিষ্টি খাওয়ালেন, তা নিয়ে রেগে আগুন ছেলে। বাবাকে ‘শিক্ষা দিতে’ গায়ে হাত তুলতেও বাধেনি তার।

এত সবের পরেও বাবার স্নেহ দেখে ওসি হতবাক। লকআপ থেকে তিনি ডেকে পাঠান প্রদীপকে। বলেন, ‘‘দেখো, তুমি বাবাকে মারধর করো, আর উনিই তোমাকে ছাড়াতে থানায় এসেছেন।’’ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল ছেলে। বলে, ‘‘অন্যায় করেছি, এমন কাজ আর করব না।’’

ততক্ষণে অবশ্য বৃদ্ধ বাবাকে মারধরের ঘটনা নির্দিষ্ট আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। প্রদীপকে থানা থেকে ছাড়া হয়নি। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বা়ড়ি পাঠানো হয় তাঁকে। বৃহস্পতিবার বারাসত জেলা আদালতে তোলা হয় প্রদীপকে। জামিন পেয়েছে সে। আদালত চত্বরে মানিকলালকে বলতে শোনা যায়, ‘‘ছেলে জামিন না পেলে আমি আত্মহত্যা করব।’’

পাড়া-পড়শির অভিযোগ, ২০ অক্টোবরের যে ঘটনার ছবি সোস্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে, তা নতুন কিছু নয়। বৃদ্ধ বাবাকে প্রায়ই মারধর করত প্রদীপ। সকলে যে কারণে খাপ্পা অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার কর্মী বছর চল্লিশের প্রদীপের বিরুদ্ধে।

এ দিন সকালে স্থানীয় বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মানিকবাবু গালে হাত দিয়ে বসে। বললেন, ‘‘ছেলে অন্যায় করেছে ঠিকই, তবে ওর কোনও শাস্তি হোক চাই না। আমার একটাই তো ছেলে। ওর কিছু হলে আমাদের কে দেখবে।’’ প্রদীপের মা বন্দনাও স্বামীর কথায় সায় দেন।

বৃদ্ধের একটাই আফসোস, ‘‘ছেলে মারধর করে, আমি তো কখনও কাউকে বলিনি। লোকজন যে কী ভাবে সব জেনে গেল...!’’

অন্য বিষয়গুলি:

Ashoknagar Father Beaten Son Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE