একাকী: নিজের বাড়িতে সুশীলের মা লক্ষ্মীরানি দাস। ছবি: সুজিত দুয়ারি
২০১৮ সালের ১৪ মে ছিল পঞ্চায়েত ভোট। হাবড়ার বাসিন্দা দুই বৃদ্ধা মায়ের জীবন বদলে দিয়েছিল সেই দিন।
ভোটের দিন রাজনৈতিক হিংসায় মারা গিয়েছিলেন তাঁদের সন্তানেরা। তারপর থেকে সময় গড়িয়েছে প্রায় পাঁচ বছর। এখনও সে দিনের স্মৃতি টাটকা সন্তানহারা মায়েদের মনে। দুই বৃদ্ধারই আবেদন, এ বার ভোটে যেন আর কোনও মায়ের কোল খালি না হয়!
লক্ষ্মীরানি দাসের বয়স ৮৭। থাকেন হাবড়া পুরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ হাবড়া এলাকায়। গত পঞ্চায়েত ভোটে তিনি হারিয়েছেন ছেলে সুশীলকে। মেয়ে মিনতির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। কাছেই থাকেন। সুশীলের মৃত্যুর পরে রাজ্য সরকার মিনতিকে খাদ্য দফতরে গ্রুপ ডি পদে চাকরি দিয়েছে। মিনতি জানালেন, মায়ের খরচপত্র তিনিই সামলান।
সুশীলের কথা তুলতেই চোখে জল মিনতির। বললেন, ‘‘ওই সব কথা মনে করিয়ে আর কাঁদাবেন না।’’ লক্ষ্মীরানির কথায়, ‘‘সন্তান হারানোর ব্যথা মায়েরা ছাড়া অন্য কেউ বোঝে না। সব সময়ে ছেলের কথা মনে পড়ে। ঘুমের মধ্যে দেখি, ছেলে খেতে চাইছে আমার কাছে।’’ বৃদ্ধা বলেন, ‘‘শুনেছি সামনে আবার পঞ্চায়েত ভোট। একটাই প্রার্থনা, আর যেন কোনও মাকে আমার মতো কাঁদতে না হয়।’’
সুশীলের বাড়ির কাছেই বাড়ি নিহত আর এক যুবক উজ্জ্বল শূরের। পঞ্চায়েত ভোটের হিংসার বলি হয়েছিলেন তিনিও। সে কথা উঠতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন মা মঞ্জু। ছেলের মৃত্যুর পরে বৌমা লিপিকে রাজ্য সরকার চাকরি দিয়েছে। মঞ্জু বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ। বড় ছেলেকে নিয়ে একই বাড়িতে আলাদা থাকি। বৌমা মাসে হাজার টাকা করে দেন। ওতে কী সংসার চলে!’’ বাড়ির কাছেই রুটি বিক্রি করেন বলে জানালেন মঞ্জু। ছেলে বেঁচে থাকলে এই কষ্ট করতে হত না বলেই মনে করেন। আততায়ীরা সকলে গ্রেফতার হয়নি, শাস্তি হয়নি বলে ক্ষোভ আছে সন্তানহারা মায়ের। তাঁর কথায়, ‘‘রাজনীতি বুঝি না। কিন্তু ভোটে যেন হিংসা বন্ধ হয়। আমার মতো কারও যেন অকালে কপাল না পোড়ে।’’
পঞ্চায়েত ভোটের দিন কী ঘটেছিল? বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৪ মে পৃথিবা পঞ্চায়েতের যশুরের মহাত্মা শিশিরকুমার আদর্শ বিদ্যাপীঠ স্কুলে ভোটগ্রহণ কেন্দ্র হয়েছিল। সকাল থেকে মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিচ্ছিলেন। দুপুরের পর থেকে এলাকায় শুরু হয় বাইক বাহিনীর তাণ্ডব। বিকেলে ওই স্কুলের সামনে বাইকে হাজির হয় কিছু লোক। অভিযোগ, তারা জোর করে বুথে ঢুকে ছাপ্পা দিতে শুরু করে। ভোটের লাইনে দাঁড়ানো মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। উত্তেজিত জনতা কয়েক জনকে মারধর করে। ব্যালট বাক্স ভেঙে ফেলা হয়। মারধরে মারা যান উজ্জ্বল ও সুশীল। ভোট পণ্ড হয়ে যায়। পরে ফের ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা হয়েছিল ওই বুথে। উজ্জ্বল, সুশীল কেউই ওই এলাকার বাসিন্দা ছিলেন না। তাঁদের খুনের মামলায় তদন্ত ভার নেয় সিআইডি। কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
তৃণমূল নেতা তথা হাবড়ার পুরপ্রধান নারায়ণ সাহা বলেন, ‘‘গত পঞ্চায়েত ভোটে নিহত দুই তৃণমূল কর্মীর পরিবারের দু’জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। ওই দিন ওঁরা ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বাইরে দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিজেপি পরিকল্পিত ভাবে খুন করে।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে বিজেপির হাবড়া শহর দক্ষিণ মণ্ডলের সভাপতি দীপঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওঁরা ছিলেন তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনীর সদস্য। পঞ্চায়েত ভোটের দিন ভোট লুট করতে এসেছিলেন। সাধারণ মানুষ প্রতিরোধ করেন।’’
রাজনৈতিক চাপানউতোরের ভাষা বোঝেন না দুই বৃদ্ধা। তাঁদের একটাই আবেদন, হানাহানি বন্ধ হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy