শোকার্ত: গোপালের স্ত্রী
মৎস্যজীবীদের উপরে বাঘের হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে সুন্দরবনে। চলতি সপ্তাহে এ নিয়ে তিনবার মৎস্যজীবীদের উপরে বাঘের হামলার ঘটনা ঘটল। রবিবার সকালে সুন্দরবনের ঝিলা ৬ নম্বর জঙ্গলে গোপাল বৈদ্য নামে মাঝবয়সী এক মৎস্যজীবীকে তুলে নিয়ে গেল বাঘ। বাকি দুই সঙ্গী অনেক চেষ্টা করেও বাঘের মুখ থেকে গোপালকে ছাড়িয়ে আনতে পারেননি।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সুন্দরবন কোস্টাল থানার অন্তর্গত সাতজেলিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ইমলিবাড়ি ঠাকুরনতলা এলাকা থেকে ৩ সেপ্টেম্বর মাছ-কাঁকড়া ধরার জন্য দুই সঙ্গী গৌর মণ্ডল ও প্রশান্ত মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে সুন্দরবনের ঝিলা জঙ্গল-লাগোয়া নদী-খাঁড়িতে গিয়েছিলেন গোপাল। রবিবার বিকেলেই তাঁদের ফিরে আসার কথা ছিল।
এ দিন সকালে ঝিলা ৬ নম্বর জঙ্গল-লাগোয়া কালীরচরে নেমে যখন তাঁরা কাঁকড়া ধরছিলেন, তখনই গোপালকে আক্রমণ করে একটি বাঘ। পিছন থেকে লাফিয়ে পড়ে ঘাড়ে কামড় বসায়। মুহূর্তেই নিস্তেজ হয়ে পড়েন গোপাল। তাঁর দুই সঙ্গী কাঁকড়া ধরার শিক নিয়ে বাঘের সঙ্গে লড়াই করে সঙ্গীকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করলেও বিফল হন।
তাঁরা সজনেখালি রেঞ্জ অফিসে খবর দেন। বনকর্মীদের দল ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তর খোঁজাখুঁজি করলেও খোঁজ মেলেনি গোপালের। প্রশান্ত ও গৌর বলেন, “ সকালে নৌকোয় বসে আমরা তিনজন ভাত খাই। ঘড়িতে তখন সাড়ে ৬টা বাজে। ভাটা নামতে শুরু করেছে দেখে সবে পাড়ে নেমেছি। তখনই গোপালের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল বাঘটা। ওঁকে টানতে টানতে জঙ্গলের ভিতর নিয়ে চলে গেল। আমরা চেষ্টা করেও ছাড়িয়ে আনতে পারিনি।” গোপালের জামাইকেও বছর দু’য়েক আগে একই ভাবে বাঘে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। বন দফতর সূত্রের খবর, সরকারি অনুমতিপত্র নিয়েই এই তিন মৎস্যজীবী মাছ, কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারি অনুমতিপত্র নিয়ে গেলেও যে কোর এলাকায় মাছ, কাঁকড়া ধরার উপরে মৎস্যজীবীদের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেই নিষিদ্ধ এলাকাতেই এঁরা কাঁকড়া ধরছিলেন বলে বন দফতর সূত্রের খবর। সেখানেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর তাপস দাস বলেন, ‘‘এক মৎস্যজীবীকে বাঘে তুলে নিয়ে গিয়েছে বলে শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাঁর খোঁজে তল্লাশি করছেন বনকর্মীরা।’’
গত কয়েক মাসে সুন্দরবনের জঙ্গলে, নদী, খাঁড়িতে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে একের পর এক মৎস্যজীবী বাঘের হামলার মুখে পড়েছেন। প্রাণ গিয়েছে বেশ কয়েকজনের। সুন্দরবনে বাঘে-কুমিরে আক্রান্ত বিধবাদের সংগঠনের সভাপতি চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরেই আমরা মৎস্যজীবীদের জন্য বিকল্প জীবিকার দাবি জানিয়ে আসছি। আক্রান্তদের পরিবারকে ভাতা, সরকারি ঘর দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না হলে এই মৃত্যুমিছিল ঠেকানো
যাবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy