Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Joynagar Murder

না আছে রান্নাঘর, না চাল, খোঁজ নেই স্বজনদেরও! পুরুষশূন্য জয়নগরের গ্রাম, কান্নার রোল মহিলাদের

সোমবার সকালে মসজিদে নমাজ পড়তে যাওয়ার পথে খুন হন জয়নগরের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর। তার পরেই তাণ্ডব শুরু হয় বামনগাছির দোলুয়াখাঁকির গ্রামে। চলে ভাঙচুর, লুটপাট। আগুন ধরানো হয় বাড়িঘরে।

লস্করপাড়ায় পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে কান্না মহিলাদের।

লস্করপাড়ায় পুড়ে যাওয়া বাড়ির সামনে কান্না মহিলাদের। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
জয়নগর শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:২০
Share: Save:

বেলা গড়িয়েছে। কিন্তু এখনও হাঁড়ি চড়েনি উনুনে। অবশ্য উনুনই বা আর কোথায়! ভাতের হাঁড়ি দুমড়েমুচড়ে পড়ে আছে যেখানে সোমবার সকাল পর্যন্ত সেখানে একটা রান্নাঘর ছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বামনগাছির দোলুয়াখাকি গ্রামের একের পর এক বাড়িতে এমনই ছবি দেখা গেল মঙ্গলবার দুপুরে। মহিলারা অঝোরে কেঁদেই চলেছেন। পেটে দানাটুকু পড়েনি বাচ্চাদের। অনেকে ঘরের কর্তাদের খোঁজও পাচ্ছেন না।

সোমবার সকালে মসজিদে নমাজ পড়তে যাওয়ার পথে খুন হন জয়নগরের তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্কর। তার পরেই তাণ্ডব শুরু হয় বামনগাছির দোলুয়াখাকির লস্করপাড়ায়। একের পর এক বাড়িতে আগুন ধরানো হয়। চলে মারধর, লুটপাট। সিপিএমের অভিযোগ, ওই বাড়িগুলো তাদের সমর্থকদের। তৃণমূলের লোকজন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে হামলা চালিয়েছে। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল। ঘটনাটিকে ‘জনরোষ’ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন স্থানীয় নেতারা। তার পর ২৪ ঘণ্টা কেটেছে। মঙ্গলবার দুপুরে লস্করপাড়ায় গিয়ে দেখা গেল, পোড়া পোড়া বাড়িঘর, জ্বলে যাওয়া আসবাবপত্র আর সেই ধ্বংসস্তূপের সামনে শূন্যদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা কয়েক জন মহিলাকে। কেউ তারস্বরে কেঁদেই চলেছেন। সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলছেন অন্য মহিলারা। ঠিক ভাবে কথা বলার মতো অবস্থাতেই নেই কেউ। তার মধ্যে কোনও রকমে কেউ কেউ জানালেন, রাতভর আতঙ্কে কেটেছে তাঁদের। এখনও খাবার জোটেনি।

ফিকে হয়ে যাওয়া লাল রঙের শাড়ি পরা এক মহিলা মাথায় হাত দিয়ে বসে ধ্বংসস্তূপে। ‘‘এখন কী অবস্থা?’’— জিজ্ঞাসা করতেই জবাব এল, ‘‘না আছে চাল, না আছে উনুন। খাব কী?’’ মহিলা জানাচ্ছেন, সোমবার দুপুর থেকে বিদ্যুৎহীন এলাকা। অবশ্য আলো জ্বলার মতো বাড়িও নেই তাঁদের। এখন বাচ্চাদের নিয়ে খোলা আকাশের নীচে দিন কাটছে।

সোমবার সন্ধ্যায় এলাকায় রুটমার্চ করেছিল পুলিশ। গভীর রাত পর্যন্ত পুলিশ থাকলেও তাঁরা কেউ এলাকায় ছিলেন না বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। সকালে এলাকায় আবার রুট মার্চ করেছে পুলিশ। কেউ কেউ বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু অনেকেই পরিবারের সদস্যদের খোঁজ পাননি। তাঁরা কোথায় আছেন, কেমন আছেন, সে খবরটুকুও নেই। লস্করপাড়া গ্রামে গোল হয়ে বসে কেবল কেঁদেই চলেছেন কয়েক জন মহিলা। পাশেই খেলছে অভুক্ত শিশুরা।

দুপুরে ওই গ্রামে গিয়েছিলেন সিপিএম সুজন চক্রবর্তীরা। পরে তিনি ‘ঘরছাড়াদের’ নিয়ে জয়পুর থানায় যান। পুলিশকে তিনি বলেন, ‘‘পাঁচ- ছ’দিন সময় দিলাম। যদি তার মধ্যে ওঁদের গ্রামে ফেরাতে না পারেত, তখন আমরা দেখে নেব।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE