Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Joynagar Murder

‘নাসির ছিল, বড়ভাই ছিল, গুলি আমি চালাইনি, গুলি করেছে সাহাবুদ্দিন’, দাবি জয়নগরকাণ্ডে ধৃত দুষ্কৃতীর

শাহরুলকে ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিল পুলিশ। আদালত তাঁকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর তাঁকে আবার আদালতে হাজির করানো হবে।

image of accused

আদালত থেকে বার করা হচ্ছে তৃণমূল নেতা খুনে অভিযুক্ত শাহরুলকে। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
জয়নগর শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৫:৩০
Share: Save:

তিনি গুলি চালাননি। মঙ্গলবার বারুইপুর আদালত থেকে বেরিয়ে একাধিক বার এই দাবিই করলেন ধৃত শাহরুল শেখ। জয়নগরে তৃণমূল নেতা সইফুদ্দিন লস্করের খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে সোমবার তাঁকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বারুইপুর আদালত থেকে বেরিয়ে শাহরুল জানান, খুনের নির্দেশ দিয়েছিলেন নাসির। গুলি করেছিলেন সাহাবুদ্দিন। তবে কে এই নাসির, তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে।

শাহরুলকে ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন করেছিল পুলিশ। আদালত তাঁকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ২৪ ডিসেম্বর তাঁকে আবার আদালতে হাজির করানো হবে। পাশাপাশি, আদালত সঠিক সময়ে অভিযুক্তের মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর নির্দেশও দিয়েছে। কোর্ট লকআপে তাঁর উপর যাতে কোনও অত্যাচার না হয়, সেই নির্দেশও দিয়েছেন বিচারক।

সোমবার শাহরুলকে গ্রেফতারের পর জেরা শুরু করে পুলিশ। তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, জেরায় অনেক নতুন নতুন তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার তাঁকে আদালতে হাজির করানো হয়। আদালত থেকে বার হওয়ার শাহরুল বলেন, ‘‘নাসির খুন করার অর্ডার দিয়েছিলেন।’’ কে সেই নাসির? শাহরুল শুধু বলেন, ‘‘বড়ভাই।’’ কার বড়ভাই, তা অবশ্য প্রকাশ করেননি। শুধু বার বার দাবি করেছেন, ‘‘গুলি আমি চালাইনি, চালিয়েছে সাহাবুদ্দিন।’’ তৃণমূল নেতা খুনের পর এই সাহাবুদ্দিনকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে।

শাহরুলকে জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, সইফুদ্দিন কখন, কোথায় যান, তাঁর গতিবিধির উপর নজর রাখতে তৃণমূল নেতার বাড়ির পাশেই একটি বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন শাহরুল। জয়নগরের বামনগাছির যে জায়গায় সইফুদ্দিনের প্রাসাদোপম বাড়ি আছে, তার একটু দূরেই কয়েক দিন ধরে থাকছিলেন তিনি। শাহরুল আদতে ডায়মন্ড হারবারের নেতড়ার বাসিন্দা। পুলিশ সূত্রে খবর, বছর তেইশের শাহরুল চুরি-ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত। পুলিশের খাতায় আগেও তাঁর নাম উঠেছে। পাশাপাশি, দর্জির কাজও করতেন তিনি। পুলিশি জেরায় শাহরুল জানিয়েছেন, তিনি ‘নতুন কাজের বরাত’ পান কিছু দিন আগে। তাঁকে বলা হয়, একটি ‘চুরির কাজ’ আছে। তাই একটি বাড়িতে নজর রাখতে হবে। রাজি হয়ে যান ওই যুবক। তার পর তিনি চলে আসেন বামনগাছি এলাকায়। সোমবার তৃণমূল নেতাকে গুলি করে খুনের সময় তিনিও ছিলেন। পুলিশের দাবি, শাহরুলই খবর দিতেন যে, কখন নমাজ পড়তে মসজিদে যান সইফুদ্দিন। তাঁর কথা মতোই ‘অপারেশন’-এর সময় ঠিক করে নেন।

জয়নগরের ‘প্রভাবশালী’ তৃণমূল নেতা খুনের পিছনে যে ভাড়াটে খুনি রয়েছে, তা আগেই আন্দাজ করেছেন তদন্তকারীদের একাংশ। আততায়ীদের গুলি করার দিনক্ষণ এবং অপারেশনের ধরন দেখে তদন্তকারীরা অনুমান করছেন, খুনের নেপথ্যে কোনও ‘পাকা মাথা’ রয়েছে। সূত্রের খবর, তদন্তকারীরা এ-ও জানতে পেরেছেন, ওই খুনে এক লক্ষ টাকা সুপারি দেওয়া হয়েছিল। সেই ভাড়াটে খুনিদের খোঁজ চলছে। এখনও পর্যন্ত তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় দু’জনের হদিস পাওয়া যায়নি বলে জানাচ্ছে পুলিশ। অন্য দিকে মৃত সাহাবুদ্দিনের বাড়ি জয়নগরের গোদাবর এলাকায়। সাহাবুদ্দিন দর্জির কাজ করতেন। শাহরুলও অন্য সময়ে সেলাইয়ের কাজ করতেন। সেই সূত্রেই দু’জনের আলাপ। যদিও মৃত সাহাবুদ্দিনের স্ত্রী জরিনা বিবির দাবি, তাঁর স্বামী এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন এবং তাঁরা তৃণমূল করেন। মৃতের মেয়ে রুবিয়ার কথায়, ‘‘আইন-আদালত থাকা সত্ত্বেও কেন একজনকে এ ভাবে পিটিয়ে মারা হল! আমরা বিচার চাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Joynagar Murder Murder Accused
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE