টোটোয় গায়ত্রী। নিজস্ব চিত্র
আলো ফোটার আগে ঘুম থেকে উঠে পড়ে মেয়েটি। সকাল ৬টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ে টোটো নিয়ে। বেলা ৩টের মধ্যে বাড়ি ফিরে স্নান-খাওয়া সেরে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে ফের বেরিয়ে পড়ে পথে। রাত ৮টায় বাড়ি ফিরে পড়াশোনা করতে বসে বছর পনেরোর গায়ত্রী হালদার৷ যে দিন সে স্কুলে যায়, সে দিন টোটো চালাতে পারে না। রোজগারও বন্ধ। এই পরিস্থিতিতেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে গাইঘাটার মধ্য বকচরা এলাকার কিশোরী।
পরিবার সূত্রে জানা গেল, বছরখানেক আগেও সংসারের অবস্থা ছিল অন্য রকম। গায়ত্রীর বাবা অলোক টোটো চালাতেন। অনটনের মধ্যেও কোনও রকমে সংসার চলে যাচ্ছিল। বিপত্তি বাধে গত বছর কালীপুজোর পরে। অলোকের ব্রেনস্টোক হয়। তারপর থেকে তিনি শয্যাশায়ী। পরিবারের একমাত্র রোজগারে ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়ায় সংসার ভেসে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখনই ছোট্ট মেয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, সে-ই ধরবে সংসারের হাল।
গায়ত্রী বলে, "বাবা অসুস্থ হওয়ার পরে একদিন বলেছিল, তোর দ্বারা কিছু হবে না। সংসারটা ভেসে যাবে। জেদ চেপে যায়। সে দিন দুপুরেই বাবার টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়ি পথে। দ্রুত শিখে নিই টোটো চালানোর কায়দা-কানুন।"
বাড়িতে বাবা, মা, দিদি আছে গায়ত্রীর। তার কথায়, "দিদি টোটো চালাতে পারে। কিন্তু ওর ইচ্ছে, পুলিশে চাকরি করবে। তাই আমি কাজ করে সংসার চালানোর চেষ্টা করছি।" গায়ত্রীর মা কৃষ্ণা অন্যের বাড়িতে রান্নার কাজ করেন। তিনি বলেন, "মেয়ে লড়াই করছে সংসারটা বাঁচানোর জন্য। কিন্তু আমার এটা ভাল লাগে না। কোনও উপায়ও নেই। সরকারের কাছে আবেদন, যদি ওর বাবাকে ভাল চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলা যায়। তা হলে আর মেয়েটাকে টোটো চালাতে হবে না। মন দিয়ে পড়াশোনা করতে পারবে।"
টোটো চালানোর অভিজ্ঞতা কেমন?
ঢাকুরিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী গায়ত্রী বলে, "প্রথম দিকে লোকজন কেমন ভাবে যেন তাকাত, হাসত। অনেকে কটূ কথা বলত। আমি কানে নিতাম না। আমি টোটো চালাই, রাতে বাড়ি ফিরি বলে মাকেও অনেকে অনেক কথা শোনায়। এ কারণে এক বাড়ি থেকে মাকে কাজ ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আমি হাল ছাড়ছি না।"
গায়ত্রীর এই বয়সে টোটো চালানো শিশুশ্রমের মধ্যে পড়ে। কিন্তু সে কাজ না করলে পরিবারের হাল খারাপ হবে। সে কারণে অনেকেই বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখছেন। তাঁরা চান, সরকার যেন পরিবারটির পাশে দাঁড়ায়। বিষয়টি জেনে শনিবার বিকেলে বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর গায়ত্রীর বাড়িতে যান। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে পরিবারটির খোঁজ-খবর নেওয়া। মেয়েটির বাবার সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছিল। হার্টের সমস্যা আছে। আমি ওঁকে কল্যাণী এইমএস-এ চিকিৎসার ব্যবস্থা করছি। সব রকম ভাবে পরিবারটির পাশে থাকব। দুই বোনের পড়াশোনা করতে যাতে অসুবিধা না হয়, তা-ও দেখব।" শিশুশ্রম বিষয়ে শান্তনু বলেন, "রাজ্যে সুশাসন না থাকায় এই পরিস্থিতি। রাজ্য তো এখন আদালত চালাচ্ছে!"
মন্ত্রী বাড়িতে যাওয়ায় এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়ায় ভরসা পাচ্ছেন কৃষ্ণা। গায়ত্রী বলে, "বন্ধুরা আগে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল। এখন বলছে। বাবা কাজ করতে পারলে আবার পড়াশোনায় পুরো সময় দিতে পারব।"
গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি, তৃণমুলের গোবিন্দ দাসের কথায়, "মেয়েটির পরিবারকে কী ভাবে সাহায্য করা যায়, তা নিয়ে বিডিওর সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা মেয়েটির মায়ের একটা কাজের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy