প্রতীকী ছবি।
১৮৬৪ জন ছাত্রীর জন্য ১২টি আর ৩৪ জন শিক্ষিকার জন্য ২টি!
এই হল টাকি ষষ্টীবর লালমাধব উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শৌচালয়ের সংখ্যা। পর্যাপ্ত শৌচালয়ের অভাবে অসুবিধায় পড়েন এই স্কুলের শিক্ষিকারা। অসুবিধা হয় ছাত্রীদেরও। বিশেষত বয়ঃসন্ধি পেরোনো ছাত্রীদের সমস্যাটা আরও প্রকট।
স্কুলে শৌচালয় যে শুধু সংখ্যাতেই কম তা নয়, গুণমানের দিক থেকেও খারাপ। ফলে অনেক ছাত্রীই দীর্ঘক্ষণ বাথরুম চেপে রাখে। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। বসিরহাট জেলা হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদার বলেন, ‘‘বাথরুম পেলে সঙ্গে সঙ্গে শৌচালয়ে যাওয়া জরুরি। না হলে একাধিক অসুখ দেখা দিতে পারে। ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন, বার বার বাথরুম পাওয়া, মাথার যন্ত্রণা, পেট ব্যথা, বমি ভাব, কিডনিতে জল জমার মতো নানা অসুখের আশঙ্কা থাকে।’’
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মনীষা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুলে সাফাই কর্মীর পদ দীর্ঘ দিন হল উঠে গিয়েছে। আংশিক সময়ের কর্মচারী দিয়ে সঠিক ভাবে শৌচালয় পরিচ্ছন্ন রাখা সম্ভব হয় না। তার উপরে এই এলাকার জল আর্সেনিকযুক্ত। শৌচালয়েও ওই জল ব্যবহার করা ক্ষতিকর। অনেক মেয়েই একান্ত প্রয়োজন না পড়লে সারা দিন শৌচালয় এড়িয়ে চলে।’’ তিনি আরও জানান, পরিচ্ছন্ন শৌচালয়ের অভাবে ঋতুমতী ছাত্রীরা সমস্যায় পড়ে। স্কুলে তারা প্রয়োজনে ন্যাপকিন পরিবর্তন করতে পারে না। এ রকম দীর্ঘ দিন চলতে থাকলে অসুস্থতার আশঙ্কা থেকেই যায়। অনেক মেয়ে অসুস্থও হয়। প্রধান শিক্ষিকার কথায়, ‘‘দূর দূর থেকে শিক্ষিকারা এই স্কুলে পড়াতে আসেন। শৌচালয়ে গিয়ে সংক্রমণ হতে পারে এই ভয়ে তাঁদের অনেকে সারা দিন জল পর্যন্ত খান না।’’
শিক্ষিকা অনন্যা মিত্র আসেন টালা থেকে। তিনি বলেন, ‘‘স্কুলে আসতে অন্তত আড়াই ঘণ্টা সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে বাথরুম পেলে তা চেপেই রাখতে হয়। এ দিকে, স্কুলে এসেও স্বস্তি নেই। স্কুলের শৌচালয় নোংরা। স্যানিটারি ন্যাপকিন পরিবর্তন এবং ব্যবহৃত ন্যাপকিন ফেলার জায়গা নেই। আর্সেনিকযুক্ত জল ব্যবহার করলেও ইউরিনারি ট্র্যাকে ইনফেকশনের ভয় থাকে। অধিকাংশ শিক্ষিকা এবং ছাত্রীকেই এ জন্য ভুগতে হয়।’’ বিরাটি থেকে আসা শিক্ষিকা চিত্রা মৈত্র জানান, ইউরিনারি ট্র্যাকের ইনফেকশনে কয়েক বছর ভুগতে থাকায় তাঁকে ভেলোর পর্যন্ত যেতে হয়েছিল।
এই পরিস্থিতির কোনও প্রতিবিধান নেই?
স্কুলে ছাত্রী এবং শিক্ষিকাদের জন্য আরও অন্তত ১২টি শৌচালয় জরুরি জানিয়ে প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘স্কুলে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনও জরুরি। তা ছাড়া, শৌচালয় ব্যবহার করার আগে সেখানে যে জল দিতে হয় এই সচেতনতাও অনেক ছাত্রীর নেই। তাদের সেটা শিখতে হবে। এ ভাবে ইউরিনারি ট্র্যাকে ইনফেকশনের আশঙ্কা কমবে।’’
সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের অনেক স্কুলেই শৌচাগারের সমস্যা আছে। অনেক স্কুলের শৌচাগারই অপরিষ্কার, অস্বাস্থ্যকর। কোথাও আবার শৌচাগারের দরজা নেই। কোথাও নেই জলের উপযুক্ত ব্যবস্থা।হাসনাবাদের পাটলিখানপুর পঞ্চায়েতের খোলসেখালি আদিবাসী এফপি স্কুলে শৌচালয় থাকলেও দরজা নেই। ওই স্কুলে ৭০ জন পড়ুয়ার জন্য আছেন ৪ জন শিক্ষিকা। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ দূর থেকে আসেন। কারও কারও স্কুলে পৌঁছতে তিন-চার ঘণ্টা লাগে। আর্সেনিকমুক্ত জলের ব্যবস্থা না থাকায় পড়ুয়াদের সঙ্গে বিপাকে পড়তে হয় তাঁদেরও। অশোকনগর থেকে আসেন চৈতালি মজুমদার। বেলঘরিয়া থেকে আসেন পাপিয়া কুণ্ডু। তাঁরা সকলেই জানালেন, স্কুলের বাথরুম ব্যবহারের অযোগ্য। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিতাইচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সুবিধার্থে শৌচাগার নির্মাণ জরুরি।’’ বিডিও অরিন্দম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy