উত্তমকুমারের ছবির পোস্টার থেকে ইংরেজ সাহেবের চালু করা নোট, প্রাচীন মৃৎপাত্র থেকে কড়ি— সুন্দরবনের সঙ্গে সম্পর্কিত নানা প্রত্নসামগ্রী ও উপাদান নিয়ে সংগ্রহশালা চালু হল গোসাবার পাঠানখালির হাজি দেশারত কলেজ। সম্প্রতি উদ্বোধন হয়েছে ‘সুন্দরবন সংগ্রহশালা’র। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক ও তথ্য বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক উদয়ন ভট্টাচার্য, সুন্দরবনের প্রাক্তন শিক্ষক সুকুমার পয়রা, গবেষক ও সংগ্ৰাহক উজ্জ্বল সর্দার এবং এই কলেজের অধ্যক্ষ তরুণ মণ্ডল।
গোসাবা ব্লকের একমাত্র কলেজ স্থানীয়দের উচ্চশিক্ষার বড় ভরসা। বহু গবেষক বছরের বিভিন্ন সময়ে সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা করতে এই কলেজে আসেন। ১৯৬১ সালে তৈরি হওয়া কলেজে সুন্দরবন সংক্রান্ত নানা তথ্য সংগ্রহ করে, কলেজের গ্রন্থাগারে সুন্দরবন সংক্রান্ত নানা ধরনের বই ব্যবহার করেন গবেষকেরা। সে কারণেই কলেজে এমন একটি সংগ্রহশালা তৈরির তাগিদ অনুভব করেছিলেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কলেজ সূত্রের খবর, গ্রন্থাগারিক সুকুমার মণ্ডলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাতেই বাস্তবে রূপ পেয়েছে সংগ্রহশালা। সুন্দরবনের বিশিষ্ট সংগ্ৰাহক ও গবেষক উজ্জল সর্দার নিজের সংগ্ৰহে থাকা সুন্দরবনের নানা সামগ্রী দিয়ে এই সংগ্রহশালাকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছেন। তাঁরা জানান, সংগ্ৰহশালায় রয়েছে সুন্দরবন অঞ্চলের পূজিত ২৭ রকমের লৌকিক দেবদেবীর ছলন মূর্তি। যাঁদের মধ্যে বনবিবি, দক্ষিণরায়, আটেশ্বর, কালুরায়, মানিকপির, সাতবিবি, মাকালঠাকুর, নারায়ণী, শীতলা, মনসা-সহ নানা লৌকিক দেবদেবী রয়েছেন। পাশাপাশি রয়েছে সুন্দরবন সংক্রান্ত ডাকটিকিটের সংগ্ৰহ।
সুন্দরবনের প্রেক্ষাপটে শক্তিপদ রাজগুরুর লেখা কাহিনি অবলম্বনে শক্তি সামন্তের পরিচালনায় উত্তমকুমারের অভিনীত ছবি ‘অমানুষ’-এর বিজ্ঞাপনী পোস্টার ও বুকলেটও ঠাঁই পেয়েছে সংগ্রহশালায়। ১৯৩৪ সালে গোসাবায় স্যার ড্যানিয়েল হ্যামিল্টন সাহেবের প্রচলন করা ১ টাকার ব্যাঙ্কনোটের প্রত্যায়িত কপিও রয়েছে।
এ ছাড়া রয়েছে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রত্নস্থল থেকে প্রাপ্ত নিদর্শন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কুষাণ যুগের মৃৎপাত্র, প্রাচীন টেরাকোটা মাতৃকা মূর্তি, ঝুড়িছাপ পাত্র, প্রাচীন কড়ি প্রভৃতি। রয়েছে সুন্দরবন অঞ্চলের খেলনা, একাধিক মানচিত্র। সুকুমার বলেন, “প্রায়ই বহু মানুষ, গবেষক আসেন কলেজে সুন্দরবনকে জানার জন্য। নানা ধরনের বইও খোঁজেন তাঁরা। সেই থেকেই এখানে সংগ্রহশালা তৈরির তাগিদ অনুভব করেছিলাম।” উজ্জ্বলের কথায়, ‘‘বিষয়টি জেনেই আনন্দ পেয়েছিলাম। আমার সংগ্রহে সুন্দরবন সংক্রান্ত যতটুকু ছিল, তা এই সংগ্রহশালায় দান করেছি। আগামী দিনে এই সংগ্রহশালা আরও সমৃদ্ধ হবে, সেই আশা রইল।’’
অধ্যক্ষ তরুণ মণ্ডল বলেন, “এটা আমাদের কাছে একটা প্রাপ্তি। আশা করি, এই সংগ্রহশালা শুধুই সুন্দরবন গবেষকদের নয়, সুন্দরবনকে যাঁরা ভালবাসেন, যাঁরা সুন্দরবনকে জানতে চান তাঁদের সকলের কাছেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy