—প্রতীকী চিত্র।
দিন পনেরো আগে চুল বিক্রির নামে নদিয়ার বাসিন্দা রঞ্জিত মণ্ডলকে এলাকায় ডেকে বন্দুক দেখিয়ে প্রায় ১২ লক্ষ টাকা কেড়ে নেয় কুলতলির পয়তারহাটের সাদ্দাম-বাহিনী। গত সোমবার পয়তারহাটে এই সাদ্দামকে ধরতে গিয়েই আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, একটি প্রতারণা চক্র কাজ করছে ওই গ্রামে। সাদ্দাম সহ অনেকে এর সঙ্গে জড়িত।
তেহট্ট থানার কুস্তিয়া গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিত চুলের ব্যবসা করেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে মাথার চুল সংগ্রহ করেন ফেরিওয়ালারা। রঞ্জিত তাঁদের থেকে সেই চুল কিনে দিল্লিতে সরবরাহ করেন। এক ফেরিওয়ালার থেকেই মাসখানেক আগে রঞ্জিত জানতে পারেন, কুলতলির বাসিন্দা এক চুল ব্যবসায়ী এক সঙ্গে অনেক পরিমাণে চুল বিক্রি করতে চান।
রঞ্জিত জানান, প্রাথমিক ভাবে ফোনে কথা হয়। দু’শো কেজির বেশি চুল কেনার কথা হয়েছিল। প্রায় ছ’হাজার টাকা কেজি দরে দুশো কেজি চুলের দাম ধার্য হয় প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। কয়েক জন সঙ্গীকে নিয়ে এলাকায় এসে চুল দেখে যান রঞ্জিত। প্রথম দিন ট্রেনে এসেছিলেন তাঁরা। দক্ষিণ বারাসত স্টেশনে তাঁদের নামতে বলা হয়। সেখানেই অটো পাঠিয়ে দেয় সাদ্দামেরা। অটো চেপে রঞ্জিতেরা বেশ কিছুটা পথ পেরোন। যেখানে নামেন, তার নাম জানতেন না বলে জানিয়েছেন রঞ্জিত। জনা তিনেক লোক ছিল সেখানে। দু’টি বস্তা এনে দেখানো হয়। তাতে চুল ছিল। বস্তায় অন্য কিছু থাকতে পারে, তা মাথায় আসেনি। চুল দেখে পছন্দ হওয়ায় কথাবার্তা চূড়ান্ত করে ফিরে যান রঞ্জিতেরা। ক’দিন পরে নগদ টাকা নিয়ে আসতে বলা হয় তাঁদের। অনলাইনে টাকা নিতে রাজি হয়নি ওই কারবারি।
৩০ জুন নিজের গাড়িতেই আসেন রঞ্জিত। সঙ্গে আনেন নগদ প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। রঞ্জিত জানান, ওদের কথা মতো এ বারও দক্ষিণ বারাসত পেরিয়ে আরও বেশ কিছুটা এগিয়ে একটা জায়গায় পৌঁছন তাঁরা। ততক্ষণে রাত হয়েছে। আগের বার যারা নিতে এসেছিল, তারাই অপেক্ষায় ছিল।
কথাবার্তা চলতে চলতে গাড়ি থেকে তাঁদের নামিয়ে জনা পাঁচেক লোক ঘিরে ধরে। তাদের দু’জনের হাতে বন্দুক ছিল বলে জানিয়েছেন রঞ্জিত। টাকা দিতে বলে তারা। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে টাকা দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ফিরে যান রঞ্জিতেরা। যাওয়ার পথে রঞ্জিতদের হাতে একটি মূর্তি ধরিয়ে দেয় ওই দুষ্কৃতীরা। বলে দেয়, কোনও কারণে পুলিশ ধরলে যেন বলে, মূর্তি কিনতে এসেছিলেন।
দিন দু’য়েক পরে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রঞ্জিত। এলাকাটি জয়নগর থানার অধীন হওয়ায় সেই থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্তে নামে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, দিন পনেরো ধরে অভিযান চালানো হয় গ্রামে। চক্রের মাথারা কেউই বাড়ি ছিল না। সোমবার ভোরে সাদ্দাম এলাকায় ফিরেছে জানতে পেরে তাকে ধরতে হাজির হয় পুলিশ। তখনই হামলা হয় পুলিশকে ঘিরে।
রঞ্জিত বলেন, “প্রথম দিন দু’টি বস্তা দেখানো হয়েছিল। বস্তার উপর দিকে চুল ছিল। আমাদের মনে হয়েছিল, বস্তাভর্তি চুল আছে। এখন মনে হচ্ছে, ঠকানো হয়েছে। বস্তা হয় তো অন্য জিনিস দিয়ে ভর্তি ছিল। তবে যে চুল চোখে পড়েছিল, তার মান ভাল ছিল। দামও অপেক্ষাকৃত সস্তা ছিল। তাই রাজি হয়ে যাই। ধারদেনা করে টাকাটা জোগাড় করেছিলাম। এমন হতে পারে ভাবিনি!”
এ দিকে, স্থানীয় সূত্রের খবর, তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল সাদ্দামদের। তবে জালাবেড়িয়া ২ অঞ্চল সভাপতি ইয়ামিনুদ্দিন মিস্ত্রি অভিযোগ মানেননি। তিনি বলেন, “এলাকার বাসিন্দা হিসাবে ওদের চিনতাম। ঘনিষ্ঠতা কিছু ছিল না। ওরা দলেরও কেউ না। কী করত, তা-ও জানতাম না।” প্রতারণা চক্রের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগ নেই বলে দাবি পুলিশেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy