এ ভাবেই পারাপার চলছে মানুষের। নিজস্ব চিত্র।
বাদুড়িয়া পুর এলাকাকে দু’ভাগ করেছে ইছামতী নদী। এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে যাতায়াতের সুবিধার জন্য লক্ষ্মীনাথপুরে সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পূর্ত দফতর। কিন্তু ছ’বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও সে কাজ শেষ হয়নি।
সেতু তৈরি না হওয়ায় নদীপথেই চলছে যাতায়াত। ডাঙা দিয়ে আসতে গেলে প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরপথ। যা অনেকটাই খরচ সাপেক্ষও বটে। বর্ষার সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই লোকজন যাতায়াত করেন নদীপথে। সেতু না হওয়ায় উদ্বিগ্ন বাসিন্দারা। হাসনাবাদে ষোলো বছর কেটে গেলেও সেতু তৈরি হয়নি। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, বাদুড়িয়াতেও এমন হবে না তো?
বাসিন্দারা জানান, সব থেকে বেশি সমস্যা রোগী নিয়ে পারাপার করতে। জরুরি অবস্থায় হাসপাতালে আনতে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। যা গরিব মানুষের পক্ষে খরচ করা সম্ভব নয়। আরও সমস্যা আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে। কোনও চুরি-ডাকাতি ঘটলে বা নিদেনপক্ষে মারপিট— পুলিশ যে পথে আসে, ততক্ষণে অপরাধী পগারপাড়। হয় বসিরহাটের ইছামতী নদী ঘুরে আসতে হয়, আর না হলে স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়া সেতু পার হয়ে এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে যেতে হয়। এলাকার অর্থনীতির নিরিখেও সেতুর চাহিদা আছে। নৌকোয় সময়মতো বাজারে ফসল নিয়ে পৌঁছতে পারেন না চাষিরা। ফলে তাঁদের ক্ষতি হয়।
২০১০ সালে ওই গ্রামে রাজ্যের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত, পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামী এবং জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের মন্ত্রী গৌতম দেবের উপস্থিতিতে প্রায় ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ইছামতীর উপরে লক্ষ্মীনাথপুর সেতুর শিল্যন্যাস হয়। ২০১১ সালে টেন্ডার জমা হয়। কিন্তু সে সময় নানা কারণে কাজ শুরুতে দেরি হয়। ফলে তিন বছরের মধ্যে সেতু তৈরি হওয়ার কথা থাকলেও সেটা হয়নি। এখনও কাজ চলছে। ২০১৬ সাল থেকে ৪১০ মিটার লম্বা এবং ১১ মিটার চওড়া সেতুর কাজ ঠিক কবে শেষ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে।
এখন কী পরিস্থিতিতে রয়েছে ওই সেতু?
নদীর দু’পারে দুটো পিলারের বেশ কিছুটা-সহ রাস্তার কাজ অনেকটা হয়ে গিয়েছে। অ্যাপ্রোচ রোড-সহ লক্ষ্মীনাথপুর থেকে কাটিয়াহাট পর্যন্ত ছ’কিলোমিটার ডবল লেনের ঝাঁ চকচকে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। রাতের বেলায় চালকদের সুবিধার্থে রাস্তার মধ্যে লাগানো হয়েছে রিফ্লেক্টর। কিন্তু ছ’বছরেও পুরো কাজ শেষ হল কই!
বাদুড়িয়ায় ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ইছামতী নদীর এক পাড়ে ১২টি ওয়ার্ড। পুরসভা, থানা, বিডিও, বিএলআরও, বিদ্যুৎ, যুবকল্যাণ, ব্লক প্রাণী স্বাস্থ্যকেন্দ্র, বড় বড় স্কুল-সহ সরকারি ও বেসরকারি দফতর রয়েছে এই ওয়ার্ডে। অন্য পারে পাঁচটি ওয়ার্ড। এখানে চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে।
আরশুলা গ্রামের শৈলেন কাবাসি এবং উত্তর দিয়াড়ার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাদুড়িয়া শহরে উন্নত শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নদী পারাপারের কারণে বঞ্চিত হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা।’’ পুঁড়োর বাসিন্দা আব্দুল সেলিম মণ্ডল, শুভাশিস ভট্টাচার্যরা বলেন, ‘‘নদীর অন্য পাড়ে বাড়ি হওয়ায় আমরা যেন একটি দ্বীপভূমির বাসিন্দা হয়ে রয়েছি। কোনও প্রকল্প নেই। কোনও উন্নয়ন নেই। নদী পারাপারের জন্য আমাদের ছেলেমেয়েরা বাদুড়িয়ার ভাল স্কুলে পড়তেও পারে না।’’ এমনকী, পুঁড়া থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার রাস্তা পুরসভায় কাজ মেটাতে গেলে নদী পথে যেতে হয়। ডাঙা পথে গেলে ২০ কিলোমিটার পথ পেরোতে হয়। তাতেও টাকা বেশি লাগে।
সেতু হলে দু’পাড়েই ব্যবসা বাড়বে বলে দাবি স্থানীয়দের। রতন মণ্ডল, কমলাকান্ত বারুই, ফজলে শেখ জানান, বাদুড়িয়ায় নদী পারাপারের জন্য মাথা পিছু ২ টাকা নৌকো ভাড়া। সাইকেল নিয়ে গেলে অতিরিক্ত ২ টাকা করে দিতে হয়। মোটরবাইকে ১২ টাকা এবং এক ঝুড়ি সব্জি-পিছু ভাড়া গুনতে হয় ৫ টাকা। ফলে একজন গরিব মানুষকে সাইকেলে দিনে ২-৩ বার নৌকোয় পারাপার করতে গেলে ১২ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। যা অধিকাংশের পক্ষে সম্ভব নয়। এলাকার মানুষজন বলেন, ‘‘নির্বাচনের সময়ে নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন ঠিকই, কিন্তু ওইটুকুই। ভোট শেষে আর কোনও কাজ হয় না।’’
বাদুড়িয়ায় সেতু তৈরি হলে সীমান্ত বাণিজ্যের লরিও পারাপার হবে। বাদুড়িয়ায় সেতু হলে বসিরহাটের পরিবর্তে বেড়াচাঁপা দিয়ে বাদুড়িয়া এবং কাটিয়াহাট হয়ে সোজাসুজি লরি চলে যেতে পারবে ঘোজাডাঙা সীমান্তে। রাস্তা কমায় পরিবহণ খরচও কমবে। পাশাপাশি বাদুড়িয়া দিয়ে সীমান্ত বাণিজ্য শুরু হলে এলাকায় ভাল ব্যবসা হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
পুরপ্রধান তুষার সিংহ বলেন, ‘‘সেতুর রাস্তা করতে ইটভাটা এবং চাষের জমি প্রয়োজন হবে বলে সরকারি ভাবে জানানো হয়েছে। জমি নিয়ে কিছু জটিলতার কারণে সাময়িক রাস্তা তৈরির কাজ বন্ধ থাকলেও আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই জমিজট কাটিয়ে সেতুর রাস্তার কাজ শুরু হবে।’’
জেলা পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বাদুড়িয়া শহরের দিকে সেতুতে ওঠার রাস্তা তৈরি হবে। কিন্তু সেই সেখানে জমি নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সেটি মিটে গেলেই কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy