প্রতীকী ছবি।
ব্যাঙ্কের ঋণদানের সর্বোচ্চ সীমা ৫৪ লক্ষ টাকা। এক সঙ্গে সেই অঙ্কের ঋণ দেওয়া হয়েছিল ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠদের। ঋণের জন্য জমা পড়া নথি যাচাই করা হয়নি বলে অভিযোগ। সেই ঘটনায় ভাটপাড়া-নৈহাটি সমবায় ব্যাঙ্কের তৎকালীন সিইও (বর্তমানে ওএসডি) চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে সোমবার গ্রেফতার করল ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ।
রবিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে ভাটপাড়া পুরসভার তালিকাভুক্ত এক ঠিকাদার অভিজিৎ চক্রবর্তীকেও। ওই ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ। তহবিল তছরুপের অভিযোগে ইতিমধ্যে সাংসদের বাড়িতে তল্লাশিও চালিয়েছে পুলিশ। অর্জুনের ভাইপো সঞ্জিত (পাপ্পু) সিংহের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্কের টাকা সরানোর অভিযোগ রয়েছে।
মামলায় এই প্রথম দু’জনকে গ্রেফতার করা হল। গোয়েন্দা বিভাগের কর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, মামলার জাল গোটানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। এ বার বেশ কিছু কড়া পদক্ষেপ করা হবে।
তৃণমূলে থাকাকালীন ভাটপাড়ার বিধায়ক পদের পাশাপাশি সেখানকার পুরপ্রধানও ছিলেন অর্জুন। ওই সমবায় ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যানের পদে অবশ্য এখনও রয়েছেন তিনি। সম্প্রতি ভাটপাড়ার তৃণমূল নেতা সোমনাথ শ্যাম গোয়েন্দা বিভাগে অভিযোগ করেন, পদের অপব্যবহার করে ঋণের নামে ওই সমবায় ব্যাঙ্কের কোটি কোটি টাকা তছরুপ হয়েছে। সেই টাকা আবার ঘুর পথে গিয়েছে তাঁর ভাইপো পাপ্পুর মালিকানাধীন বিভিন্ন সংস্থার অ্যাকাউন্টে।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই ব্যাঙ্ক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ভাটপাড়া পুরসভার বিভিন্ন কাজের জন্য ঠিকাদারদের ঋণ দেবে। তবে শর্ত ছিল, ঋণ পেতে গেলে পুরসভার ওয়ার্ক অর্ডার অর্থাৎ কাজের বরাত পাওয়ার নথি জমা করতে হবে। পুরসভা কাজের বিল মেটাবে ওই ব্যাঙ্কেরই অ্যাকাউন্টে। ফলে ঋণের টাকাও তারা সেখান থেকেই কেটে নেবে। ২৬ জন ঠিকাদারকে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে দেখা গিয়েছে, যে ওয়ার্কঅর্ডারগুলির ভিত্তিতে ঋণ দেওয়া হয়েছে, সেগুলি ভুয়ো। ফলে সেই কাজ হয়নি। অন্য দিকে, ঋণ টাকা ঘুরপথে পাপ্পুর অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যাঙ্কের সর্বোচ্চ কর্তা হিসেবে ওই সময়ে ঋণ দানের পুরো প্রক্রিয়া তদারক করেছিলেন চন্দ্রনাথ। পুলিশ মনে করছে, পুরো ঘটনা তাঁর জ্ঞাতসারেই ঘটেছে। নথি যাচাই না করে অথবা তা জাল জেনেও তিনি ঋণ দিয়েছেন। ঋণ আদায়ের কোনও চেষ্টা তিনি করেননি। অবসরের পরে চন্দ্রনাথকে ওই ওই ব্যাঙ্কেরই অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি করা হয়েছে। গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাটপাড়ার বাসিন্দা চন্দ্রনাথকে সোমবার ব্যাঙ্ক থেকেই গ্রেফতার করা হয়। জেরায় তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা।
অভিজিতের বাড়ি রহড়ায়। তিনি ভাটপাড়া পুরসভার তালিকাভুক্ত ঠিকাদার। যে ঠিকাদারেরা ওই সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পেয়েছিলেন, অভিজিৎ তাঁদেরই একজন। তা হলে কেবলমাত্র তাঁকে কেন গ্রেফতার করা হল? গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা বলেন, “ঋণদানের পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন অভিজিৎ। ভুয়ো ওয়ার্কঅর্ডার তৈরি থেকে শুরু করে নথি জাল করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।”
ওই গোয়েন্দা কর্তা জানান, তদন্ত শুরু হওয়ার পরে অভিজিৎ তাঁর নেওয়া ঋণের ৩০ লক্ষ টাকা শোধ করে দেন। কিন্তু পুরো টাকাটাই জমা পড়ে নগদে। সেই টাকার উৎস জানাতে পারেননি তিনি। সে জন্যই রবিবার রাতে তাঁকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার বারাসতের বিশেষ আদালত তাঁদের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy