বিহার থেকে আসা কারিগরেরা। ছবি: নির্মল বসু।
জাতপাতের ভেদাভেদ ভুলে ওঁরা এখন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তৈরি করে চলেছেন ইদের খাবার। রাতদিন এক করে পরিশ্রম করা মানুষগুলো বসিরহাটে এসেছেন বিহারের নওদা জেলা থেকে। সিমুই, লাচ্চা তৈরি করতে সামসাদ, কালাম, কাওসারের পাশে রাত জাগছেন হরিপদ, সুরেশ, রণজিৎরা।
ইদের খাবার তৈরির ব্যবসা করার তাগিদে কয়েক বছর আগে বিহার থেকে কাওসারেরা এসেছিলেন বসিরহাটে। ভাল লেগে যায় এখানকার পরিবেশ। সেই থেকে তাঁরা থেকে যান বসিরহাটের মার্টিনবার্ন রোডের ধারে একটি বাড়িতে। অস্থায়ী তাঁবু ফেলে শুরু হয় সিমুই-লাচ্চা তৈরির কাজ। ২৫-৩০ জনের দল আসে বসিরহাটে। দলের প্রধান মহম্মদ কাওসার বলেন, ‘‘বসিরহাট তথা উত্তর ২৪ পরগনায় লাচ্চা-সিমুইয়ের ব্যাপক চাহিদা। ফলে যত খাবার তৈরি করা হোক না কেন, সবটাই বিক্রি হয়ে যায়।’’
কর্মীরা কতটা লাভবান হন, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন আছে। শেখ আবুল নামে এক কর্মী বললেন, ‘‘অনেকে ভাবেন এদ্দুর থেকে যখন আসি, তার মানে এখানে রোজগার বিশাল কিছু হয়। ব্যাপারটা আদৌ তেমন নয়। থাকা-খাওয়া দেয় কোম্পানি। দিনরাতের পারিশ্রমিক মেলে ৭০ টাকা।’’ তা হলে বাড়ি-ঘর ছেড়ে ঠেঙিয়ে এতটা পথ এসে কাজ করার মানে কী? আবুল জানান, এলাকায় দারিদ্র্য এতটাই বেশি, এখানে এসে এই রোজগারটুকুও অনেক মনে হয়। কাওসার, কালাম, হরিপদ, রণজিৎ, সামসাদ, সুরেশরা জানালেন, বিহারে লাচ্চা-সিমুই তৈরি হয় না এমনটা নয়, আসলে গরিব মানুষের হাতে এ সব সুস্বাদু খাবার কেনার টাকাই নেই। ক্রেতা বাড়বে কোথা থেকে! এই কর্মীরা প্রায় সকলেই বছরের অন্য সময়ে খেতমজুরির কাজ করেন। কিন্তু ইদের আগে চলে আসেন বসিরহাটে। কর্মীরা জানালেন, তাঁদের দেখাদেখি বিহার থেকে এখন অনেকে বাংলায় আসছেন খাবার তৈরির ব্যবসা করতে।
বেড়াচাঁপায় ইদের আলো। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
দলের সদস্য মহম্মদ ওয়াজেদের কথায়, ‘‘ইদের এই দু’টি খাবার তৈরিতে মূলত ময়দা, ডালডা, ঘি এবং রিফাইন তেল লাগে। রঙিন করতে লাল-হলুদ-সবুজ এবং গোলাপি রং মেশানো হয়। দরকার দু’টো বড় কাঠের উনুন। বড় দু’টি কড়াই। বেশ কয়েকটি ট্রে। কড়ায় ফুটন্ত তেলে সিমুই ভাজতে ভাজতে ইমতিয়াজ আলম বলেন, ‘‘এ সব খাবার তৈরি করতে হয় খুব সাবধানে। বাজারের সেরা ময়দা দিয়ে লেচি তৈরি করে রিফাইন তেলে ভাজতে হয়। ব্যবহার করতে হয় এক নম্বর রং।’’
পাইকারি হিসাবে সিমুই কিম্বা লাচ্চা যাই কিনুন না কেন, কেজি প্রতি দাম ৩৫-৪০ টাকা। সেই লাচ্চা-সিমুই বাজারে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন ৫৫-৬০ টাকা কেজি দরে। বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, স্বরূপনগর, হাড়োয়া, মিনাখাঁ, সন্দেশখালি এবং বাদুড়িয়ার মানুষ তো বটেই বারাসত ও কলকাতা থেকেও বড় ব্যবসায়ীরা আসেন বসিরহাটে। কিনে নিয়ে যান বিহার থেকে আসা কর্মীদের হাতে তৈরি খাবার-দাবার। ইদের দুই জেলার সর্বত্র বাজার বেশ চড়া। দিন কয়েক আগে বিভিন্ন ফলের দাম যেখানে ৫, ৫০ কিংবা ২৫০ টাকা কম ছিল, তার দর অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। বেদানা ১৫০-৪০০ টাকা, আনারস ৩০-৪০টাকা, আপেল ১৫০-২২০, ন্যাসপাতি ৮০-১০০ টাকা হয়েছে। হেলেঞ্চা বাজারের ফল ব্যবসায়ী সুব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘‘ইদ আসছে, রোজার কারণে চাহিদা ও দাম দুই-ই বেড়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy