এসডিপিও-র সামনে বাজেয়াপ্ত করা সিল, প্যাড। ছবি: নির্মল বসু।
জাল শংসাপত্র তৈরির অভিযোগে ছাপাখানা মালিক এবং তার কর্মচারীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। সিল করে দেওয়া হল ওই ছাপাখানা। পুলিশ জানিয়েছে, হাসনাবাদের ভেবিয়ায় ছাপাখানার ব্যবসায়ী ওয়াজেদ আলি এবং তার কর্মচারী কুতুবুদ্দিন মোল্লাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বসিরহাটের এসডিপিও-র নেতৃত্বে জাল সিল-শংসাপত্র তৈরি চক্রের পান্ডা ওঙ্কারনাথ সেনগুপ্ত ওরফে লালচুকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। আদালতের নির্দেশে তাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার পরে এই নিয়ে মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করা হল। এদের মধ্যে দুই বাংলাদেশিও আছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বসিরহাটের কাছারিপাড়ার বাসিন্দা ওঙ্কারনাথ সেনগুপ্ত ওরফে লালচু, ছোট জিরাফপুরে বাড়ি বাসুদেব অরোরা, আনন্দ বিশ্বাস, সাঁইপালা খানবাহাদুর রোড এলাকায় বাড়ি শেখ আজাদুর রহমান, বসিরহাট কলেজের পাশে মির্জাপুর থেকে মহম্মদ এরশাদ আলি ওরফে এমডি আরশাদ ওরফে আকাশ, হাড়োয়ার শ্যামলা গ্রাম থেকে রহিদুল খান এবং হাসনাবাদের ভেবিয়া ছাপাখানার মালিক ওয়াজেদ আলি এবং কর্মচারী কুতুবুদ্দিন মোল্লাকে গ্রেফতারের পরে তাদের কাছ থেকে পাঁচশোরও বেশি নকল সিল-শংসাপত্র, সরকারি ও বেসরকারি দফতরের আধিকারিকদের সই-প্যাড উদ্ধার করা হয়েছে। ধৃতদের একজন আনন্দ বিশ্বাস বসিরহাটে থাকলেও তার আদি বাড়ি বাংলাদেশের সাতক্ষীরার হাঁড়িভাঙা গ্রামে। এরশাদ আলির বাড়িও বাংলাদেশের সাতক্ষীরায়। বসিরহাটের এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জাল নথি চক্রের খবর পেয়ে তদন্ত চালিয়ে এখনও পর্যন্ত মোট আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সরকারি ও বেসরকারি দফতরের নকল সিল-শংসাপত্র সহ গুরুত্বপূর্ণ নথি আটক হয়েছে। এই চক্রে আর কারা যুক্ত, আছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশের দাবি, বসিরহাটের পুলিশ আধিকারিকের বাংলোর নাকের ডগায় কাছারিপাড়ার বাসিন্দা ওঙ্কারনাথ এত দিন ধরে অবৈধ উপায়ে সীমান্ত পেরিয়ে আসা বাংলাদেশিদের নকল স্কুলের শংসাপত্র দিয়ে নকল রেশনকার্ড এবং ভোটার পরিচয়পত্র তৈরি করে দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। তার কাছ থেকে বনগাঁ, বসিরহাট, হাবরা, অশোকনগর-সহ দুই ২৪ পরগনার বহু সরকারি ও বেসরকারি দফতরের নকল সিল এবং শংসাপত্র উদ্ধার হয়। এই কাজে তাকে সাহায্য করত বাসুদেব অরোরা, আনন্দ বিশ্বাসরা। ধীরে ধীরে তারা বসিরহাট মহকুমা জুড়ে জাল বিস্তার করেছিল। নকল শংসাপত্রের সাহায্যে একজন বাংলাদেশিকে রাতারাতি এ দেশের নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র জোগাড় করে দেওয়া ছিল ওঙ্কারনাথের বাঁ হাতের খেল।
ওঙ্কারকে জেরা করে বসিরহাট কলেজের কাছে ভাড়া বাড়ি থেকে এরশাদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে পাওয়া পাসপোর্ট-ভিসার দেখে পুলিশ জানতে পারে, তিন বছর আগে ওই ব্যক্তি হিলি সীমান্ত দিয়ে এ দেশে এসেছিল। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নাম দিয়ে সে এ দেশে থেকে যায়। বসিরহাটে আসার পরে এরশাদ শেখ আজাদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করে নকল কাগজপত্রের সাহায্যে নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করার চেষ্টা করে। আজাদুরের সুপারিশে ওই বাংলাদেশি স্থানীয় একটি স্কুলে শিক্ষকতার কাজও পেয়ে যায়। এরশাদের মোবাইল ফোন ঘেঁটে পুলিশ দেখেছে, স্কুল থেকে পাওয়া মাসিক বেতনের থেকে সে অনেক বেশি টাকা প্রতি মাসে মোবাইল রিচার্জই করত। কাকে ফোন করত এরশাদ, এত টাকা কোথায় পেত, সে সব বিষয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, বসিরহাট শহরে একটি বেসরকারি শিশুদের স্কুলে কাজ করত আজাদুর। তার কাজকর্মে দুর্নীতি নজরে আসায় গত কয়েক বছর আগে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে বরখাস্ত করেন। এরপর আজাদুর বড় জিরাফপুরের কাছে একটি শিশুদের স্কুলে পড়ানোর কাজ নেয়। পরবর্তি সময়ে ওই স্কুলে গড়ে ওঠা রবীন্দ্র মুক্তবিদ্যালয়ের কোয়র্ডিনেটর হয় সে। এলাকায় বেশ পরিচিত মুখ আজাদুর। সেই সুবাদে অবৈধ উপায়ে নকল কাগজপত্রের সাহায্যে বাংলাদেশিদের সে নিজের স্কুলে ভর্তি করত বলেও অভিযোগ। সব জেনেশুনে বাংলাদেশি এরশাদকে নিজের স্কুলে শিক্ষকতার কাজ দেওয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওঙ্কারনাথ, এরশাদ এবং আজাদুরকে ধরার পরে একে একে বাকিদের ধরা হয়। পুলিশের দাবি, নকল নথি ছাপা হত মূলত হাসনাবাদের ভেবিয়ায়, ওয়াজেদ আলির ছাপাখানায়।
সীমান্ত এলাকায় ভুয়ো শংসাপত্র তৈরির একটি চক্র বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে খবর আসছিল পুলিশের কাছে। সেই মতো তৎপরতা বাড়ায় পুলিশ। বসিরহাটের এসডিপিও-র নেতৃত্বে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চলে। টাকার বিনিময়ে এই অসাধু চক্রকে বিভিন্ন সময়ে নানা ভাবে সাহায্যের জন্য সরকারি ও বেসরকারি দফতরের কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রয়োজনে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy