Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পর্যটন নিয়ে পরিকল্পনা চোখে পড়ে না শহরে

একটা সময় ছিল, যখন পাড়ে দাঁড়িয়ে দূরে নোঙর করা জাহাজ দেখতে ভিড় জমাতো শ’য়ে শ’য়ে লোক। ভিনদেশি জাহাজের সাদা চামড়ার খালাসিরা পাড়ে নেমে ঘোরাফেরা করলে সে দিকে সবিস্ময়ে তাকিয়ে থাকত গাঁয়ে-গঞ্জের মানুষ। সে দিন গিয়েছে। এখন গঙ্গার পাড়ে গড়ে ওঠা প্রাচীন শহর ডায়মন্ড হারবারের খ্যাতি পর্যটনকে ঘিরে। নদীবক্ষে সূর্যাস্ত দেখতে দূর দূর থেকে মানুষ আসেন এখানে।

শহরে ঢুকতে হবে এমন যানজট পেরিয়ে।

শহরে ঢুকতে হবে এমন যানজট পেরিয়ে।

দিলীপ নস্কর
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৪ ০১:৪১
Share: Save:

একটা সময় ছিল, যখন পাড়ে দাঁড়িয়ে দূরে নোঙর করা জাহাজ দেখতে ভিড় জমাতো শ’য়ে শ’য়ে লোক। ভিনদেশি জাহাজের সাদা চামড়ার খালাসিরা পাড়ে নেমে ঘোরাফেরা করলে সে দিকে সবিস্ময়ে তাকিয়ে থাকত গাঁয়ে-গঞ্জের মানুষ।

সে দিন গিয়েছে। এখন গঙ্গার পাড়ে গড়ে ওঠা প্রাচীন শহর ডায়মন্ড হারবারের খ্যাতি পর্যটনকে ঘিরে। নদীবক্ষে সূর্যাস্ত দেখতে দূর দূর থেকে মানুষ আসেন এখানে। কিন্তু সেই খ্যাতির উল্টো পিঠে আছে পর্যটকদের হাজারটা অভিযোগ। একে তো যানজটে শহরের হাঁসফাঁস দশা। হোটেলগুলির বেশিরভাগেরই পরিষেবা নেহাতই তলানিতে। শহরের সৌন্দর্যায়নে কার্যত কোনও পরিকল্পনাই চোখে পড়ে না। পর্তুগিজদের আমলে তৈরি পুরনো কেল্লা দেখতে আগে ভিড় করতে মানুষ। কিন্তু সেই কেল্লা ক্রমে ভাঙতে ভাঙতে প্রায় পুরোটাই নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের কোনও চেষ্টাই হয়নি কখনও, অভিযোগ এমনটাই। প্রবীন নাগরিক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, “এত দিন ধরে আছি, কিন্তু পর্যটনের উন্নতি তো তেমন কিছুই চোখে পড়ল না। বরং দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।”

গঙ্গার ধারে নিরিবিলি এলাকার টানে বহু মানুষ আসেন এই শহরে। সাগরিকা এবং গঙ্গাভবন নামে দু’টি সরকারি গেস্টহাউস বাদেও তৈরি হয়েছে বেশ কিছু হোটেল। কিন্তু অভিযোগ, পর্যটন শিল্পের নামে এই সমস্ত হোটেলের অনেকগুলিতেই দেহ ব্যবসা চলে। অভিযোগও জমা পড়ে প্রশাসনের কাছে। অনেক সময় ধড়পাকড় হয়। তবে শহরবাসী মনে করেন, পর্যটনের নাম করে হোটেল ব্যবসা কার্যত এক ধরনের ‘সেক্স ট্যুরিজম’ তৈরি করেছে ডায়মন্ড হারবারে। সস্তার বেসরকারি হোটেলগুলিতে সঙ্গে মহিলা না থাকলে ঘর ভাড়া দেওয়া হয় না, এমন অভিযোগও আকছার ওঠে। ঘণ্টার হিসাবেও ঘর ভাড়া পাওয়া যায় এই সব হোটেলে। গ্রাহক পরিষেবা দেওয়ার কোনও সুস্থ পরিকাঠামোই নেই বেশির ভাগ জায়গায়। না আছে ভাল ঘর, না আছে সাজানো বাগান। বেশির ভাগ হোটেলে গাড়ি রাখার কোনও স্থায়ী জায়গা নেই। সপরিবার এই সমস্ত হোটেলে উঠলে কপালে অশেষ দুর্ভোগ হতে পারে, অভিযোগ বেড়াতে আসা বহু মানুষের। এলাকার লোকজন সব দেখেও না দেখার ভান করে থাকেন। এই পরিবেশে তাঁরাও যেন অভ্যস্থ হয়ে উঠেছেন।

শহরের যাবতীয় কর্মকাণ্ড দেড় দু’কিলোমিটার এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকায় গাড়ির চাপ খুবই বেশি। হেঁটে-চলে ধীরেসুস্থে ঘুরে বেড়াবেন পর্যটকেরা, সেটুকু জো নেই। অপরিসর রাস্তার পাশে বেআইনি দখল, ভ্যান-রিকশার দাপটে প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার জোগাড়। গঙ্গার পাড়ে বসার জায়গা আছে ঠিকই, কিন্তু সন্ধের পরে সেখানে মদ্যপদের আনাগোনা বাড়ে বলে অভিযোগ। সে সব উৎপাত সহ্য করতে হয় পর্যটকদের। বাস বা ট্রেন থেকে নামলেই ঘিরে ধরে রিকশাওয়ালা, দালালরা। হাত ধরে টানাটানি, দরাদরি চলে। বিরক্ত হন অনেক মানুষই।

পরে গঙ্গার এই মনোরম শোভা ভুলিয়ে দেবে সমস্ত অসুবিধা।

বারাসত থেকে আসা নবীন দম্পতি প্রবীর সরকার ও সুকন্যা বললেন, “শুনেছিলাম, নদীর পাড়ে চমৎকার শহর ডায়মন্ড হারবার। কিন্তু এখানে এসে সরকারি গেস্টহাউস না পেয়ে বেসরকারি হোটেলে উঠতে বাধ্য হই। চারপাশের ঘরে যে সব লোকজন যাতায়াত করছে দেখলাম, তাতে আর এখানে আসার প্রবৃত্তি হবে না।” বিরাটি থেকে আসা পর্যটক নীহারিকা মণ্ডলের কথায়, “কত সুন্দর করে গড়ে তোলা যেত শহরটাকে। কলকাতার এত কাছের একটা জায়গা। কিন্তু পর্যটন নিয়ে এখানে কোনও পরিকল্পনা আছে বলেই তো মনে হয় না।”

একটি বড় হোটেলের মালিক গৌতম হালদার বক্তব্য, “কিছু সমস্যা আছে, মানতেই হবে। তবে সকলকেই পরিচয়পত্র দেখে হোটেলে ঘর দেওয়া হয়। তারপরে কী হচ্ছে না হচ্ছে, সেটা হোটেল মালিকের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়।” দালালদের উৎপাত নিয়ে তাঁর বক্তব্য, “বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনের দেখার কথা।” ডায়মন্ড হারবারের পুরপ্রধান মীরা হালদার বলেন, “নানা ভাবে পরিকাঠামো সাজানো হচ্ছে। পিকনিট গ্রাউন্ড তৈরি হয়েছে। আলো, জলের ব্যবস্থা হয়েছে সেখানে। আরও কিছু পরিকল্পনা অবশ্যই আছে। বিষয়টি নিয়ে পর্যটন দফতরের সঙ্গে আলোচনাও চলছে।”

এসডিপিও রূপঙ্কর সেনগুপ্ত অবশ্য সমস্যা আদৌ মানতে নারাজ। তাঁর কথায়, “আইন মেনে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। নিয়মিত টহলদারিও চলে।” কিন্তু তারপরেও পুলিশের নাকের ডগায় অনৈতিক কাজকর্মের অভিযোগও ওঠে।

(চলবে)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE