চেক হাতে নিয়ে চোখের জল মুছতে মুছতে মঞ্চ থেকে নামতে দেখা গেল ছলনা ঘোষ নামে এক মহিলাকে। চোখের জলের কারণ জিজ্ঞাসা করাতে জানা গেল যে তিনি তাঁর মৃত ছেলের ক্ষতিপূরণের টাকা নিতে এসেছেন। বছর দু’য়েক আগে ডায়মন্ড হারবারের চাঁদনগর গ্রামের সুজিত ঘোষ (২৫) নামে ওই যুবক ফুলশয্যার রাতেই ঘরের মধ্যে বিদ্যুৎস্প্ৃষ্ট হয়ে মারা যান। সুজিতের অসংগঠিত শ্রমিক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত ছিল। আর তাঁর নমিনি ছিলেন তাঁর মা ছলনাদেবী। রাজ্য সরকারের শ্রম দফতর থেকে শুক্রবার দুপুরে ডায়মন্ড হারবার নেতাজি ময়দানে শ্রমিক মেলার উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে তাঁর মায়ের হাতে দেড় লক্ষ টাকা তুলে দেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক।
শুধু ছলনাদেবী নয়, এ দিন জয়নগরের চালতাবেড়িয়া গ্রামের ল্যাম্প কারখানার শ্রমিক দক্ষিণারঞ্জন হালদারের পরিবারকেও আর্থিক সাহায্য করে এই দফতর। বছর দেড়েক আগে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন তিনি। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে ওই শ্রমিকের স্ত্রী অমলা হালদারের হাতে এ দিন ৫৩ হাজার টাকার চেক তুলে দিলেন মন্ত্রী। অমলাদেবী শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের জল মুছে বলেন, “বাড়িতে রয়েছে দুই মেয়ে এক ছেলে। সারাদিন বিড়ি বেঁধে কোনওভাবে চারজনের পেটের খাবার জোগাই। এই টাকাটা অন্তত মেয়ের বিয়ের কাজে লাগবে।” একই হাল বজবজের নুঙ্গি এলাকার বাসিন্দা অটো চালক মাথুর সাঁতরার পরিবারের। গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। এ দিন তাঁর স্ত্রী শিবানী সাঁতরার হাতে চেক তুলে দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে আর্থিক সাহায্য পেয়েছেন বারুইপুরের ফুলতলা গ্রামের ধূপকাঠি শিল্পী বিমল দত্ত। বছর খানেক আগে তাঁর কিডনিতে স্টোন ধরা পড়েছিল। অস্ত্রোপচার করে রোগ সারানো হয়েছে। চিকিৎসা খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকার চেক পেয়েছেন তিনি। এ ভাবে গোটা রাজ্যে ১১,১১২ জনকে প্রায় ৪ কোটি টাকা দেওয়া হয় বলে জানায় শ্রম দফতর।
এই রাজ্যে বড় বড় কলকারখানার শ্রমিক ও সরকারি কর্মী ছাড়া অধিকাংশই অসংগঠিত শ্রমিকের আওতায় পড়ে। ওই সমস্ত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে আনা খুবই জরুরি। সে কারণে বিভিন্ন গ্রামে প্রচার করে ব্লকে ব্লকে শ্রমিকদের এই প্রকল্পের আওতায় আনতে হবে। তাঁদের বোঝাতে হবে বছরে ৩০ টাকা জমা করলে দুর্ঘটনাজনিত কারণে আর্থিক ক্ষতিপুরণ দেবে রাজ্য সরকারের শ্রম দফতর বলে মন্ত্রী জানান। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “ক্ষতিপুরণের পরিমাণ আগের সরকারের তুলনায় কোথাও দ্বিগুণ করা হয়েছে। এই রকম ৫৮টি পেশায় যুক্ত শ্রমিকদের প্রভিডেন্ট ফান্ড তৈরি করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৭২ লক্ষ শ্রমিকের নাম সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় নথিভুক্ত হয়েছে।” তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের জনধন যোজনার সমালোচনা করে বলেন, “ওই প্রকল্পে জিরো ব্যালন্সে অ্যাকাউন্ট খোলা গেলেও কেউ পাঁচ হাজার টাকা তুলে নিলে তাঁকে আবার পাঁচ হাজার টাকা ফেরত দিতে হবে।” এ বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার বিজেপির সহ-সভাপতি সুফল ঘাটু বলেন, “ওই জনধন যোজনা প্রকল্পের টাকা কেউ তুললে পরিশোধ করতে হয়না। এ রাজ্যের মন্ত্রী নেতারা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে।” শ্রম দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অসংগঠিত শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে বিড়ি শ্রমিক, রেশমের গুটি চাষে যুক্ত শ্রমিক, পিতলের জিনিস তৈরির শ্রমিক, ভ্যান ও রিকশা চালক, বিভিন্ন গ্যারাজে কর্মরত শ্রমিক, ইট ও টালি নির্মাণ শ্রমিক, রাজমিস্ত্রি, ছুতোর মিস্ত্রি-সহ অনেকেই। সকলকেই সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় আনার লক্ষে শ্রমিক দফতর। এই শ্রমিক মেলায় বিভিন্ন স্টল করা হয়েছে। মেলায় তিনদিন ধরে শ্রমিক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করা হবে। মেলায় উপস্থিত ছিলেন এলাকার বিধায়ক দীপক হালদার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy