বিপজ্জনক ঘাট। নজর নেই প্রশাসনের।—নিজস্ব চিত্র।
শীতের সকাল। জবুথুবু বৃদ্ধ দম্পতি নদী পেরোবেন। কিন্তু নদীবাঁধ থেকে নেমে নৌকায় উঠতে গিয়েই বিপত্তি। পা পিছলে পড়লেন বৃদ্ধা। পিছনের লাইন থেকে এগিয়ে আসা কয়েক জন যাত্রীর সাহায্যে কোনও রকমে উঠলেন নৌকোয়। তার পর গোটা পথ বিড় বিড় করে বলে গেলেন, “আমরা তো মানুষ নাকি! রোজ এই এই ঘাট ব্যবহার করতে হয়। বছরের পর বছর ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় উঠি। নেতারা কি কিছুই জানেন না?” পাশে বৃদ্ধকে বলতে শোনা গেল, “ভোট এলেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে ‘মাসিমা ভোটটা আমাকে দিও, জিতলেই সব সমস্যার সমাধান করে দেব’। এক প্রতিশ্রুতি শুনতে শুনতে সত্তরটা বছর কাটিয়ে দিলাম।”
এলাকার মানুষের এতগুলো বছরের ক্ষোভ, অথচ আজও সংস্কার হয়নি দক্ষিণ ২৪ পরগনা পাথরপ্রতিমার চিন্তামণিপুর পণ্ডারবাজার ঘাট। নিত্য পারাপার করা যাত্রীদের অভিযোগ, ঘাট থেকে ২৫০ মিটার দূরে একটি পাকা জেটি ঘাট নির্মাণের পরে যাত্রীদের ওঠা-নামা শুরু হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই তা ভেঙে পড়ার পর আর কোনও সংস্কার করা হয়নি। ফলে যাত্রীদের দুর্ভোগের ছবিটার বিন্দুমাত্র বদল ঘটেনি।
কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির পরিচালনায় বহু বছর ধরে পণ্ডারবাজার ও ঢোলাহাটের মন্দিরের ঘাট সংলগ্ন গোবদিয়া নদীতে পারাপার চলছে। প্রায় ৫০০ মিটার চওড়া গোবদিয়া নদীতে ৩০-৪০ বছর আগে দাঁড় টানা নৌকোয় পারাপার চলত। বেশ কয়েক বছর ধরে যন্ত্রচালিত নৌকোয় পারাপার শুরু হয়েছে। ওই দুই ঘাট দিয়ে ভোর সাড়ে ৫টা থেকে রাত্রি ১০টা পর্যন্ত নৌকো চলাচল করে। পণ্ডারবাজার ঘাট দিয়ে মূলত দূর্বাচটি পঞ্চায়েত ছাড়াও পাথরপ্রতিমার বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ নিয়মিত মন্দিরের ঘাটে আসেন। আবার মন্দিরের ঘাট দিয়ে রামগোপালপুর পঞ্চায়েত ছাড়াও ঢোলাহাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাসিন্দারা নিত্যপ্রয়োজনে কাকদ্বীপ বা পাথরপ্রতিমায় যাতায়াত করেন। রামগোপালপুর পঞ্চায়েতটি ঢোলাহাট থানার অধীনে হলেও কাকদ্বীপ ব্লকের মধ্যেই পড়ে। ফলে কাকদ্বীপ মহকুমা শাসক বা বিডিও অফিসে যাওয়ার জন্যও রোজ বহু মানুষকে পারাপার করতে হয়।
এ দিকে মন্দিরের ঘাটের পাশে প্রতি বৃহস্পতিবার ও রবিবার বাজার বসে। পাথরপ্রতিমা এলাকা থেকে সব্জি বিক্রেতারা বস্তা বা ছাকানে করে মাল নিয়ে পণ্ডারঘাট থেকে নদী পেরিয়ে মন্দিরে ঘাটে আসেন। ওই ভারী বোঝা নৌকোয় তুলতে গিয়ে ছোটখাটো দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। কারণ ঘাটটি বহু বছর আগে ইটের ব্লক দিয়ে তৈরি। সংস্কারের অভাবে বেহাল পড়ে রয়েছে। সমস্যার এখানেই শেষ নয়। গোবদিয়া নদীতে জোয়ারের সময় ওঠা নামায় সামান্য অসুবিধা হলেও ভাটার সময়ে সমস্যা চরমে পৌঁছয়। কারণ বেহাল ঘাট পেরিয়ে নৌকোয় উঠতে গেলে প্রায় ২০-২৫ ফুট পথ হাঁটু সমান কাদা মাড়িয়ে যেতে হয়।
সন্ধের পরে নৌকো পারাপার চললেও পণ্ডারবাজার ঘাটে কোনও আলোর বা যাত্রী শেডের ব্যবস্থা নেই। পানীয় জল ও শৌচাগারেরও সমস্যা রয়েছে। কিন্তু শুধু পণ্ডারবাজার ঘাট বা মন্দিরের ঘাটই নয়, একই রকম বেহাল কাকদ্বীপ ব্লকের প্রায় ২০-২৫টি ঘাট। প্রতিটি ঘাটেই বহু বছর ধরে পারাপার চলছে। অথচ অধিকাংশ ঘাটেই রয়েছে যাত্রী পরিষেবার অভাব। তার মধ্যে রবীন্দ্র গ্রাম পঞ্চায়েতের পালোটের ঘাট, রামগোপালপুর পঞ্চায়েতের সপ্তমুখী নদী লাগোয়া সাহেবের ঘাট, গঙ্গাধরপুরের কালিন্দী নদীর ধরের গোন্দকাটার ঘাট বা ঋ
ষি বঙ্কিম পঞ্চায়েতের বাঁশতলা ঘাটে গেলে একটিকে অন্যটির থেকে আলাদা করার উপায় নেই। বেশিরভাগেরই কাছাকাছি আলো, পানীয় জল, শৌচাগার বা যাত্রী শেডের ব্যবস্থা নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঘাটগুলি দিয়ে বহু ছাত্রছাত্রী স্কুল-কলেজে যাতায়াত করেন। রাতবিরেতে নৌকোয় ওঠা-নামা করতে গিয়ে রোজ দুর্ঘটনা ঘটছে। অথচ প্রশাসন নির্বিকার।
স্থানীয় বাসিন্দা বিজয় বেরা, অমল প্রামাণিকদের অভিযোগ, “বেহাল ঘাটের জন্য সাধারণ মানুষ তো নাকাল হচ্ছেনই। রাতেবিরেতে রোগী নিয়ে ঘাটে ওঠা-নাম আরও বিপজ্জনক। ঘাটের সংস্কারের জন্য একাধিক বার পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদে জানানো হয়েছে। কিন্তু আজও কোনও ব্যবস্থা হল না।
কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বুদ্ধদেব দাস বলেন, “ঘাটগুলিতে পানীয় জল, শৌচাগার নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়াও পণ্ডারবাজার ঘাটটি খুব শীঘ্রই সংস্কার করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy